• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করে ভাইরাল ভারতীয় তরুণী

কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করে ভাইরাল ভারতীয় তরুণী

ছবি- সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ ভারতের কেরালার কান্নুর জেলার বাসিন্দা এক তরুণী নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। শখের বসে ক্যালিগ্রাফি করতে করতে পুরো কোরআন ক্যালিগ্রাফি করেছেন ওই তরুণী। নজরকাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ক্যালিগ্রাফি এরই মধ্যে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ১৯ বছর বয়সের ফাতিমা সাবাহা পুরো কুরআনের ক্যালিগ্রাফি তৈরি করতে সময় নিয়েছেন ১৪ মাস।

ফাতিমার এই অসাধ্য সাধনের ঘটনা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হলে সব মহল থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। অনেকে অপরিচিত লোকজনও তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে ফাতিমা সাবাহা বলেন, আমার খুব শখ ছিল ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করে আমার প্রিয় কুরআনের অনুলিপি তৈরি করব। গত বছর কুরআনের একটি অধ্যায় নকল করে আমি আমার বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধবদের দেখাই। তারা খুবই খুশি হয়। আমি তাদের বলেছিলাম ক্যালিগ্রাফি ব্যবহার করে আমি পুরো কোরআন নকল করতে চাই। তারা আমাকে খুব উৎসাহ দেয়। তবে আমি জানতাম, কাজটি মোটেই সহজ নয়।

ফাতিমা জানান, ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা এবং ক্যালিগ্রাফির প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল তার। প্রায়ই ছবি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন তিনি। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় লিপিবিদ্যা বা ক্যালিগ্রাফির হাতেখড়ি ফাতিমার। তবে মুসলিম হিসেবে কুরআনের প্রতি একটা বিশেষ টান থেকেই পুরো কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করে সে।

বিবিসিকে ফাতিমা বলেন, প্রথম দিকে একটা বা দুটি আয়াত নকল করতাম। মা-বাবা খুব প্রশংসা করতেন। আয়াতগুলো ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতাম। কিছুদিন পর দেখা গেল আমার পরিচিতরা সে সব ফ্রেম কিনে নিচ্ছেন। আর আমি মনের আনন্দে তাদের জন্য আঁকতে থাকলাম। এতে করে আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আমিও যে কিছু একটা করতে পারি, কিছু একটা আমার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমি এটা বিশ্বাস করতে শুরু করি।

বিবিসি জানিয়েছে, কেরালার কান্নুরে একটি কলেজে ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে পড়াশুনা করছেন ফাতিমা সাবাহা। কুরআনের ক্যালিগ্রাফির কাজে হাত দেয়ার আগে ফাতিমা সাহাবার বাবা একজন আলেমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আলেমের কাছে জানতে চান, ফাতিমা কুরআন নকল করতে পারেন কিনা। ওই আলেম জানান, এ নিয়ে কোন ধর্মীয় বিধিনিষেধ নেই।

ক্যালিগ্রাফি তৈরির অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ফাতিমা বিবিসিকে বলেন, প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিতাম। তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি কুরআন নকলের কাজে হাত দিতাম। গত বছর আগস্ট মাসে আমি ক্যালিগ্রাফির কাজ শুরু করি এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি কুরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফির কাজ শেষ করি।

তিনি বলেন, আমার ভয় ছিল যে, আমি হয়তো কুরআন নকলের কাজে কোন একটা ভুল করে ফেলবো। ছবি আঁকার সময় আমার মা তাই আমার পাশে বসে থাকতেন, এবং কোথাও কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখলে তিনি সেটা ধরিয়ে দিতেন। যখন আমি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতাম যে কোথাও কোন ভুল নেই তারপর আমি কলম দিয়ে নকশাগুলোকে পাকা করতাম।

পবিত্র কুরআনের ক্যালিগ্রাফি করা স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরি করে উল্লেখ করে ফাতিমা বলেন, কুরআনের আয়াত নিয়ে কাজ করার সময় আমার নিজের ক্ষমতা নিয়েও মাঝে মধ্যে সন্দেহ তৈরি হতো। কিন্তু দেখা গেল প্রতিদিন কাজটা করতে গিয়ে আমি বেশ আনন্দই পাচ্ছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যে কোন দিক থেকে কেটে যেত তা টেরই পেতাম না। কাজ করার সময় কেমন যেন একটা স্বর্গীয় অনুভূতি টের পেয়েছি।

এদিকে মেয়ে ফাতিমা সাবাহা’র অবিস্মরণীয় কাজে গর্বিত তার বাবা-মা। বিবিসিকে দেয়া বক্তব্যে ফাতিমার মা নাদিয়া রউফ বলেন, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের। আল্লাহ তায়ালার রহমতে ফাতিমা তার সব কাজ শেষ করতে পেরেছে। সে খুবই পরিশ্রমী এক মেয়ে। সে যাই করুক খুব মন দিয়ে তা করে।

ফাতিমার বাবা আব্দুর রউফ বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে, আমার মেয়েটি ধার্মিক। সে কাজের ব্যাপারেও খুব যত্নশীল। আমরা তাকে গর্ব করি।

 

এবি/এসএন

০৬ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৪৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।