জানা-অজানার এশিয়া মহাদেশ
আকারের দিক থেকে কিংবা জনসংখ্যার বিবেচনায় এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ।
এশিয়া মহাদেশে জাতিসংঘের সদস্য ৪৮ টি দেশ রয়েছে। এশিয়ার দেশগুলি মূলত পূর্ব এবং উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। পুরোপুরি দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত এশিয়ার একমাত্র দেশ ইন্দোনেশিয়া!
আপনি কি জানেন, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপে সব মিলিয়ে যত লোক বাস করে শুধুমাত্র চীনেই তার থেকে বেশি লোকের বসবাস?
এশিয়ার দুটি দেশের ভূখণ্ড ইউরোপ মহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত, দেশ দু’টি হলো রাশিয়া এবং তুরস্ক।
জনসংখ্যা
এশিয়া মহাদেশে ৪৬০ কোটিরও বেশি লোক বসবাস করে। এশিয়া বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল মহাদেশ।
বৃহত্তম দেশ
দেশটির প্রায় ৪০% ইউরোপের অন্তর্গত হলেও আকারের দিক থেকে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া । অন্যদিকে জনসংখ্যার দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ।
বৃহত্তম শহর
এশিয়ার বৃহত্তম নগরী জাপানের টোকিও। ৩.৮ কোটিরও বেশি বাসিন্দার শহর টোকিও, তাছাড়া এটি এশিয়ার বৃহত্তম মেট্রোপলিটন অঞ্চল। কানাডার মোট নাগরিকের থেকেও টোকিওর জনসংখ্যা বেশি।
ক্ষুদ্রতম দেশ
এশিয়ার ক্ষুদ্রতম দেশ মালদ্বীপ। ভারতীয় মহাসাগরে অবস্থিত দেশটি বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ। মালদ্বীপ ১,১৯০ টিরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
ভূমিবেষ্টিত দেশ
এশিয়াতে ১২ টি ল্যান্ডলকড বা ভূমি বেষ্টিত দেশ রয়েছে। এই দেশগুলি হলো আর্মেনিয়া, ভুটান, লাওস, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তান, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান। এই দেশগুলির সাথে সরাসরি সমুদ্র যোগাযোগ নেই।
বৃহত্তম দ্বীপ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বোর্নিও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং এশিয়ার বৃহত্তম দ্বীপ। দ্বীপটি তিনটি দেশের অন্তর্ভুক্ত: উত্তরের অংশ মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের অধীনে এবং দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল ইন্দোনেশিয়ার দখলে রয়েছে।
দীর্ঘতম নদী
ইয়াংজি নদী এশিয়া মহাদেশের দীর্ঘতম নদী। চীনে অবস্থিত এই নদীটি ৩,৯১৫ মাইল লম্বা। আমাজন এবং নীল নদের পরে ইয়াংজি বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী।
সর্বোচ্চ পর্বত
বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এশিয়াতে অবস্থিত। নেপালের সীমানায় অবস্থিত এর সর্বোচ্চ চূড়া ২৯,০৩৫ ফুট উঁচু।
বৃহত্তমতম হ্রদ
ক্যাস্পিয়ান সাগর এশিয়ার বৃহত্তমতম হ্রদ। এটি বিশ্বের অন্যতম গভীর হ্রদ, যার গভীরতা ৩,৩০০ ফুটেরও বেশি! আজারবাইজানের রাজধানী বাকু ক্যাস্পিয়ান সাগরে অবস্থিত।
শুষ্কতম স্থান
গোবি মরুভূমিটি এশিয়ার শুষ্কতম স্থান এবং বৃহত্তম মরুভূমি। এটি একইসাথে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মরুভূমি। এর তাপমাত্রা কখনো কখনো খুব কমে যায়, এমনকি হঠাৎ হঠাৎ তুষারপাতও দেখা যায়।
জলবায়ু
আকারে বিশাল হওয়ায় এশিয়া মহাদেশের জলবায়ুও অত্যন্ত বৈচিত্রপূর্ণ। স্থান ভেদে এর জলবায়ুর চরিত্র বদলায়। যেমন এশিয়াতে অবস্থিত সাইবেরিয়া পৃথিবীর অন্যতম শীতল জায়গা, আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলিতে উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড় দেখা যায়।
জনগোষ্ঠী
এশিয়অ একটি বিশাল মহাদেশ, যেখানে বহু জাতি গোষ্ঠীর বসবাস এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি চর্চিত হয়ে থাকে। এসব জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব স্বতন্ত্র ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে।
ভাষা
এশিয়ায় ২,৩০০ টিরও বেশি স্বীকৃত ভাষা রয়েছে। সর্বাধিক কথ্য ভাষা চাইনিজ, এর সবগুলি উপভাষা মিলিয়ে প্রায় ১৯৯ কোটি লোক এই ভাষাটি ব্যবহার করে।
ধর্ম
ইসলাম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, তাওবাদ এবং কনফুসিয়ানিজম এশিয়ার প্রধান ধর্ম। অনেক ধর্মের উদ্ভব এশিয়াতে, যেমন ইসলাম, খৃষ্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্ম। ইসলাম এশিয়াতেও বহুল প্রচারিত ধর্ম।
পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ
- চীনে মহাপ্রাচীর
- থাইল্যান্ডের গ্র্যান্ড প্যালেস
- জাপানের কিয়োটো এবং চেরি ফুল
- রাশিয়ায় সেন্ট বাসিলের ক্যাথেড্রাল এবং ক্রেমলিন
- তুরস্কের হাজি সোফিয়া
- ভারতে তাজমহল
- জর্ডানের পেট্রা
- মালয়েশিয়ায় পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার
- দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপ
- ইন্দোনেশিয়ার বালির দ্বীপ
প্রাণী
এশিয়ায় বানর, বাঘ, এশিয়ান হাতি সহ এবং আরও অনেক প্রজাতির প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। জলবায়ুর ভিন্নতার কারণে এ অঞ্চলের প্রাণী জগতেও বৈচিত্র রয়েছে। যেমন উত্তরে স্নো লেপার্ড ও মেরু ভালুক রয়েছে কিন্তু দক্ষিণে কমোডো ড্রাগন জাতীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রজাতির দেখা মেলে।
এছাড়া এশিয়াতে ওরাং-উটান, চীনা ডলফিন বা ডুগংয়ের মতো অনেক বিলপ্ত প্রায় প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক সম্পদ
এশিয়ার প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদগুলি হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম, টিন, কয়লা, স্বর্ণ এবং লোহা প্রভৃতি খনিজ পদার্থ। এছাড়া আরব দেশগুলি জীবাশ্ম জ্বালানীতে সমৃদ্ধ, ওই অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের মজুদ রয়েছে। সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম তেল উত্পাদনকারী দেশ।
এবি/এনজে
কিডস ওয়ার্লড ট্রাভেল গাইড।
https://www.kids-world-travel-guide.com/asia-facts.html