• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘লাল আটা নাকি সাদা আটা’

‘লাল আটা নাকি সাদা আটা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বাঙালি ভাত খেয়ে অভ্যস্ত। ভারতীয় উপমহাদেশের সব দেশেই ভাতের একটা আলাদা কদর আছে। তবে দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে এ অঞ্চলে আটার তৈরি রুটি খুবই জনপ্রিয়। গম পিষে তা থেকে আটা তৈরি করা হয়। আটা প্রধানত লাল ও সাদা হয়ে থাকে। খোসাসহ গম পিষে যে আটা বের করা হয়, তাকে লাল আটা বলে। এছাড়া যে গমের খোসা ছাড়ানোর পর আটা বের করা হয়, তাকে সাদা আটা বলে।

সাদা আটার তৈরি রুটি অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী দেখতে সুন্দর হলেও পুষ্টিগুণে লাল আটা এগিয়ে। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তারা লাল আটাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

গবেষকরা বলছেন, গম রিফাইন করার মাধ্যমে সাদা আটা বের করা হয়। ফলে সাদা আটার পুষ্টিগুণ অনেকাংশেই কমে যায়। পক্ষান্তরে লাল আটা তৈরিতে গম রিফাইন করার প্রয়োজন হয় না, যে কারণে এতে ভিটামিন ও মিনারেলের মাত্রা সঠিক পরিমাণে থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি।

লাল আটার খাদ্য উপাদান

আদর্শ খাবারে মূলত শক্তি উৎপাদক শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। যে খাবারে এই উপাদানগুলো থাকলে, তাকে আমরা পুষ্টিকর খাবার বলে থাকি।

লাল আটাতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল। যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। সব ধরনের গমের আটা এবং সাদা ময়দাতেও রয়েছে এ পুষ্টিগুণ। তবে লাল আটার পুষ্টিগুণ আর সবার চেয়ে বেশি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ।

সাদা আটা বনাম লাল আটা

গমের বাইরের লাল বা বাদামি আবরণে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান থাকে। এই আবরণ ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর। এটি এক ধরণের খনিজ উপাদান। যা আমাদের দেহের প্রায় ৩০০ রকমের এনজাইম সক্রিয় রাখে। এতে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। লাল আটায় ফ্যাট থাকে খুবই কম। আঁশ রয়েছে প্রচুর। এছাড়া লাল আটায় ফলিক এসিড, ফসফরাস, জিংক, কপার, ভিটামিন বি১, বি২ ও বি৩ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, সাদা আটায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট। এতে আঁশের পরিমাণ খুবই কম। সাদা আটায় ক্যালরি কম থাকে, কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে।

প্রতি ১০০ গ্রাম লাল আটার রুটিতে রয়েছে ক্যালরি ৮০ শতাংশ, ফ্যাট- ০.৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট- ১৫ গ্রাম, ফাইবার ৩ গ্রাম, সুগার ০ গ্রাম এবং প্রোটিন ৪ গ্রাম।

প্রতি ১০০ গ্রাম সাদা আটার রুটিতে রয়েছে ক্যালরি ৭০ শতাংশ, ফ্যাট ৭৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১২ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম, সুগার ১.৫ গ্রাম এবং প্রোটিন ৩ গ্রাম।

লাল আটার উপকারিতা

কোলেস্টেরল কমায় : লাল আটার অদ্রবণীয় খাদ্যআঁশ রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : লাল আটায় সুগারের পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে শূণ্য গ্রাম। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ : যারা অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে চান, তারা লাল আটা খেতে পারেন। কারণ, এতে থাকা আঁশ রক্তের ক্ষতিকারক ফ্যাট কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। এছাড়া লাল আটার রুটি খেলে ক্ষুধা কম লাগে। যা ওজন নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে।

সুস্বাস্থ্যের জন্য লাল আটা : এতে রয়েছে প্রচুর থায়ামিন। যা স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করে। এছাড়া লাল আটার আঁশ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : লাল আটায় রয়েছে লিগনান নামক এক ধরনের উপাদান। যা মানব দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়া লাল আটা আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্যও খুব উপকারি। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে লাল আটার জুড়ি মেলা ভার।

মাংসপেশি গঠন : লাল আটায় রয়েছে ভিটামিন ই। যা শরীরের মাংসপেশি গঠনে ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে পরিপাক বা হজমেও ব্যাপক কার্যকরি লাল আটা।

সতর্কতা

লাল আটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু যাদের এলার্জি জটিলতা রয়েছে, তারা লাল আটার রুটি এড়িয়ে চলুন। এছাড়া যাদের বল গ্লাডারে পাথর হয়েছে তারাও লাল আটা বা লাল আটার রুটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।এছাড়া যারা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন, তারা লাল আটা বা লাল আটার রুটি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

এবি/এসএন

৩১ জুলাই ২০২১, ০৫:১০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।