• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাগলের দুধের জাদুকরি পুষ্টিগুণ

ছাগলের দুধের জাদুকরি পুষ্টিগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

দুধ একটি আদর্শ খাবার। প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের সবগুলো উপাদান দুধে পাওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ও মহিষের দুধ খাওয়ার প্রচলন থাকলেও গরুর দুধের চাহিদা বেশি। তবে ছাগলের দুধের ঔষধি গুণাগুণ বেশি। পুষ্টিবিদরা বলছেন, ছাগলের দুধের ঔষধি গুণাগুণ বেশি থাকলেও পুষ্টিমানের বিচারে গরু, ছাগল ও মহিষের দুধ প্রায় একই।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে মহিষের দুধের বিশেষ কিছু গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নিই, কী আছে মহিষের দুধে-

পরিচয়:
হেলথ লাইন ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, ছাগলের বৈজ্ঞানিক নাম Capra aegagrus hircus। যা মূলত C. aegagrus domesticated এর একটি উপপ্রজাতি। ইংরেজিতে এই প্রাণীকে বলা হয় Goat। ছাগলের দুধ Goat milk নামে পরিচিত। ছাগল মূলত পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের এক ধরণের বন্য প্রাণী। তবে বাংলাদেশে গৃহপালিত প্রাণীগুলোর মধ্যে ছাগল অন্যতম। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাগল পালন ও ছাগলের দুগ্ধ সংগ্রহ করা হয়। দেশে ছাগলের দুধের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

পুষ্টিগুণ:
জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন, ওয়েব এমডি ডট কম এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে পুষ্টিবিদরা বলছেন, মহিষ ও গরুর দুধের চেয়ে পুষ্টিগুণে এগিয়ে ছাগলের দুধ।
এই দুধে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, সিলেনিয়াম, জিংক, তামা, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, বিবোফ্লাভিন, ভিটামিন ডি-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগ। গবেষকরা বলছেন, গরুর দুধের চেয়েও ছাগলের দুধ বেশি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী। কারণ এতে গরুর দুধের চেয়ে কম পরিমাণে ল্যাকটোজ রয়েছে।

এক গ্লাস ছাগলের দুধে রয়েছে-

ক্যালরি- ১৭০ কিলোক্যালরি,
প্রোটিন- ১০ গ্রাম,
ফ্যাট- ১০ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ১১ গ্রাম,
ল্যাকটোজ- ১১ গ্রাম,
কোলেস্টেরল- ২৭ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৩৩০ মিলিগ্রাম,
কার্বন- ১১ গ্রাম এবং
ক্যালসিয়াম- দৈনিক চাহিদার ৩২ শতাংশ।

ছাগলের দুধের উপকারিতা:
জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন, ওয়েবএমডি ডট কম ও টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ছাগলের দুধ-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন এ এবং ডি সমৃদ্ধ ছাগলের দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কার্যকরী। পুষ্টিবিদরা বলছেন, ছাগলের দুধে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল এবং খারাপ টক্সিন বের করে দেয়। এতে থাকা থাকা খনিজ উপাদান শ্বেত রক্তকণিকা তৈরির মাধ্যমে দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে।

রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে: ছাগলের দুধ দেহে আয়রনের ঘাটতি পূরণে খুবই কার্যকরী। এটি নিয়তি খেলে দেহে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেহের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়তে থাকে।

হাড় ও দাঁত মজবুত করে: ছাগলের দুধে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান, যা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া এটি দাঁতের মেলানিনের ঘাটতি পুরণে সহায়তা করে।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: ছাগলের দুধে কোলেস্টেরলের মাত্রা অন্যান্য প্রাণীজ দুধের চেয়ে কম। যে কারণে এটি হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সহায়তা করে। এই দুধ দেহের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত করে। ছাগলের দুধে থাকা স্বল্প পরিমাণের ল্যাকটোজ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হৃদরোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নয়ন ঘটায়: গবেষকরা বলছেন, ছাগলের দুধে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন শিশু, কিশোর, ও প্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশে দারুণ ভাবে কার্যকরী।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: এই দুধে রয়েছে পটাসিয়াম ও জিংক। যা রক্তচাপ সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি রক্তনালী এবং ধমনীর চাপ কমিয়ে দেয়।

ত্বক ভালো রাখে: এই দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, এবং ভিটামিন ডি, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কার্যকরী। এ ছাড়া এতে থাকা অন্যান্য খনিজ উপাদানগুলো ত্বকের কালো দাগ, কুচকে যাওয়া ভাব ও মলিনতা দূর করে।

ওজন কমাতে সহায়ক: পুষ্টিবিদরা বলছেন, ছাগলের দুধ গরু ও মহিষের দুধে দুধের তুলনায় কম ফ্যাট সমৃদ্ধ। এটি বেশ ঘন হয়। কাজেই এটি অল্প পরিমাণে খেলেই বেশি পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায়। যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা নিয়মিত এই দুধ খেতে পারেন।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, ওয়েব এমডি ডট কম ও টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

এবি/এসএন

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৫:১৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।