• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিগুণে ভরা দানা ‘আখরোট’

পুষ্টিগুণে ভরা দানা ‘আখরোট’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সুস্থ দেহের জন্য প্রয়োজন পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার। খাদ্যাভাসের কারণেও অনেকে অসুস্থতায় ভুগে থাকেন। বর্তমানে স্বাস্থ্য বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। প্রচলিত খাবারের পাশাপাশি মানুষ এখন পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। অল্প খাবারে বেশি পুষ্টি পেতে মানুষের প্রয়াসের শেষ নেই। তাই তো, চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা প্রচলিত খাবারের সঙ্গে কাজু, আমন্ড, পেস্তা বা আখরোটের মতো বাদাম প্রকৃতির খাবার যোগ করতে বলছেন। এ ধরণের খাবার গুলোর মধ্যে আখরোট বেশ জনপ্রিয়। এটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিমানে সেরা।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে আখরোটের পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে আখরোটে-

পরিচয়:
আখরোট একপ্রকার বাদাম জাতীয় ফল। আখরোট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Juglans regia। যা জুগল্যান্ডাসি গোত্রের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর যাতে প্রচুর আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড আছে। এই ফলটি গোলাকার এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের শক্ত খোলসযুক্ত বীজটি পাওয়া যায়। এই খোলসের ভেতরে থাকে দুইভাগে বিভক্ত বাদাম যাতে বাদামি রঙের আবরন থাকে যা এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

পুষ্টি উপাদান:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ বেনেফিট টাইমস, ম্যাগাজিন এই সময় ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, আখরোটে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ ছাড়া এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফসফরাস, আয়রন, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্যাট, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ফোলেটসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১১৭ গ্রাম আখরোটে রয়েছে-
ফ্যাট- ২১৮ শতাংশ,
কপার- ২০৬ শতাংশ,
ম্যাঙ্গানিজ- ১৭৩ শতাংশ,
ফসফরাস- ৫৮ শতাংশ,
ভিটামিন বি৬- ৪৮.৩১ শতাংশ,
ট্রাইটোফান- ৪৫ শতাংশ,
ম্যাগনেসিয়াম- ৪৪.০৫ শতাংশ,
আয়রন- ৪২.৫০ শতাংশ,
প্রোটিন- ৩৩.২৫ শতাংশ,
ফাইবার- ২০ শতাংশ,
জিংক- ২০ শতাংশ,
কার্বোহাইড্রেট- ১২ শতাংশ এবং
ফোলেট- ২৮.৭৫ শতাংশ।

উপকারিতা:
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ বেনেফিট টাইমস ও রিসার্চ গেইটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, আখরোট-

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে আখরোটের জুড়ি মেলা ভার। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা অবসাদ কাটাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি মস্তিষ্কের কোষের সজীবতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: আখরোটে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে, যা সুস্থ ত্বক নিশ্চিত করে। এটি ত্বকের বলিরেখা কমায় এবং বয়সের ছাপ দূর করতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ধরণের বাদামই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য আখরোট হতে পারে দারুণ এক খাবার। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কার্যকরী।

চুল ভালো রাখে: আখরোট চুলের জন্য মহৌষধ। এতে থাকা ‘বায়োটিন’ চুল স্ট্রেট করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে এটি চুল পড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আখরোটে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের ফ্রি র‌্যাডিক্যালস দূর করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

পেট পরিষ্কার রাখে: পেট পরিষ্কার রাখতে শরীরে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার থাকা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত যে খাবারগুলো থেকে শরীরে প্রোটিন আসে, সেগুলোতে ফাইবারের পরিমাণ অত্যন্ত কম। কিন্তু এক্ষেত্রে আখরোট ভিন্ন। আখরোটে থাকা ফাইবার পেটের হজমশক্তি বাড়াতে ব্যাপক কার্যকরী।

ত্বকের স্ট্রেস দূর করে: ত্বকের স্ট্রেস কমাতে আখরোটের জুড়ি মেলা ভার। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, যা ত্বকের কুচকে যাওয়া রোধ করে। এটি নিয়মিত খেলে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয়। কারণ এতে থাকা ভিটামিন বি-এর সঙ্গে ভিটামিন ই মিশে তা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে।

শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটায়: শিশুর মস্তিস্কের বিকাশ ঘটাতে আখরোট বেশ কার্যকরী। গবেষকরা বলছেন, আখরোটে থাকা ভিটামিন ই, মোলাটোন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: নিয়মিত আখরোট খেলে ওজন কিন্তু নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ এতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাট, পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং ফাইবার। যা দেহের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্র: হেলথ বেনিফিট টাইমস, রিসার্চ গেইট ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।