পুষ্টিমানে অনন্য বার্লির গুণাগুণ
প্রতিকী ছবি
‘যবের ছাতু’ বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। অনন্য স্বাদের ছাতু খেতে যবের তুলনা যবই। এই যব আমরা সবাই চিনি। আবার আমরা বার্লি খেতেও পছন্দ করি। শিশুখাদ্য হিসেবে বার্লির কদর বেশি। কিন্তু আপনি কি জানেন, যব ও বার্লি একই জিনিস? জি¦ হ্যা, যব ও বার্লি মূলত একই উপাদান। এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিউপাদানে ভরপুর একটি খাদ্য। আমাদের দেশে বর্তমানে সীমিত পরিসরে যব বা বার্লি চাষাবাদ হচ্ছে। দেশে বার্লির চাহিদা পুরণ করতে আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে।
প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে বার্লিতে-
পরিচয়:
বার্লি মূলত ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা অর্থ- ‘যব’। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Hordeum uvlgare। বাংলায় এটি পায়রা নামেও পরিচিত। যব মূলত পোয়াসিয়া (Poaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত শস্য বা বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি গম জাতীয় একধরনের শস্য দানা যা স্বল্পজীবি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতে শীতকালে সীমিত পরিমাণে যব চাষাবাদ হয়। যবের ছাতু খুবই উপাদেয় খাদ্য। গমের স্বাদ মিষ্টি এবং ঠান্ডা ধরনের। তবে যবের স্বাদ ভিন্ন। এতে রয়েছে মালটোজ, গ্লুকোজ, স্যাকারিন, লেসিথিন, এল্যানটয়েন, এমাইলেস এবং ভিটামিন-বি।
পুষ্ঠিগুণ:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন, বিবিসি ফুড ও হেলথ বেনিফিট টাইমস জানিয়েছে, বার্লিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালরি। এ ছাড়া এতে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন, ফাইবার, সোডিয়ামসহ নানান খনিজ উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম বার্লিতে রয়েছে-
ক্যালরি- ৯৬ গ্রাম,
ফ্যাট- ১ গ্রাম,
স্যাচুরেটেড ফ্যাট- ১ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ২২ গ্রাম,
প্রোটিন- ২ গ্রাম,
খাদ্যআঁশ- ৩ গ্রাম,
সোডিয়াম- ২ মিলিগ্রাম এবং
ম্যাঙ্গানিজ- ১ মিলিগ্রাম।
উপকারিতা:
হেলথ লাইন, উইকিপিডিয়া, বিবিসি ফুড ও হেলথ বেনিফিট টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বার্লি-
ওজন কমায়: ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন বারবার খেতে ইচ্ছে করে। আপনার এই ইচ্ছা কমিয়ে দেবে বার্লি। এটি দিয়ে চা বানিয়েও খাওয়া যায়। যা ওজন কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী।
কোলেস্টেরল কমায়: বার্লি কোলেস্টেরলের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলগুলো থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বার্লি। বার্লি চা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বেশ উপকারী। ডাক্তাররা অনেক সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বার্লি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা স্বাস্থ্যকর কোষের বৃদ্ধি উন্নত করে। এটি ফোলেট, লোহা, তামা এবং ম্যাঙ্গানিজের মত পুষ্টিকর প্রয়োজনীয় উপাদানে ভরপুর। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
মানসিকতা চাঙ্গা রাখে: নিয়মিত বার্লি খাওয়ার অভ্যাস দেহের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া এতে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান কোষের ক্ষতি ঠেকায়। ফলে মানসিকতা চাঙ্গা থাকে এবং মেজাজ স্বাভাবিক থাকে।
লিভার ভালো রাখে: শরীরকে বিষমুক্ত করতে পারে বার্লি চা। এটি রক্ত পরিশুদ্ধ করে। এতে পাইরাজিন নামের বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
মুত্রনালির প্রদাহ দূর করে: মূত্রনালির সংক্রমণ ঠেকাতে পারে বার্লি। এটি নিয়মিত খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়াভাব দূর হয়।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে বার্লি। এটি অন্ত্রের নড়াচড়া বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে। বার্লি বদহজম, বুকজ্বালা ও পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
নির্ঘুমতা দূর করে: যারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত বার্লি খেতে পারেন। এতে থাকা মেলাটোনিন ও ট্রিপটোফ্যানের মতো উপাদান ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।
সাধারণ সংক্রমণ সারায়: সাধারণ সর্দি-কাশি ঠেকাতে বার্লির জুড়ি মেলা ভার। এটি গলা ব্যথা, নাক বন্ধ হওয়াসহ সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করে।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, বিবিসি ফুড, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়া।
এবি/এসএন