• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাকা তেঁতুলে পরিপক্ক পুষ্টি

পাকা তেঁতুলে পরিপক্ক পুষ্টি

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

আচার কিংবা চাটনির জন্য পাকা তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার। তেঁতুলের নাম নাম শুনলে জিভে জল আসে না, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। আমাদের দেশে সবধরণের মানুষের কাছে তেঁতুল অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। তবে এটি বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। তেঁতুলের আচার বা তেঁতুলের চাটনি খেতে কার না মন চায়। ভিটামিন সি’তে ভরা তেঁতুলে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে পাকা তেঁতুলে-

পরিচয়:
দক্ষিণ আফ্রিকায় মূল্যবান খাবারের মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। তেঁতুলের বৈজ্ঞানিক নাম Tamarindus indica। এটি মূলত Fabaceae পরিবারের অর্ন্তভুক্ত একটি ফল। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তেতৈ আর নোয়াখালীতে এই ফলকে বলা হয় তেতি। আদিবাসীরাও এটিকে বিভিন্ন নামে ডাকে। মারমাদের ভাষায় হাও মং এবং রাখাইনরা তেঁতুলকে বলে তাতু। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় ট্যামারিন্ড।

পুষ্টিগুণ:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন ও বিবিসি ফুডের নিবন্ধে বলা হয়েছে, পাকা তেঁতুলে আছে অনন্য পুষ্টি উপাদান। পুষ্টিবিদরা বলছেন,

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে রয়েছে-
আয়রন- ১০.৯ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ১৭০ মিলিগ্রাম,
আমিষ- ৩.১ গ্রাম,
শর্করা- ৬৪.৪ গ্রাম,
চর্বি- ০.১ গ্রাম,
ভিটামিন বি২- ০.০৭ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন সি- ৩ মিলিগ্রাম,
পটাসিয়াম- ৬২৮ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম- ৯২ মিলিগ্রাম,
সিলিনিয়াম- ১.৩ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন ই- ০.১ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ১১৩ মিলিগ্রাম,
সোডিয়াম- ২৮ মিলিগ্রাম,
দস্তা- ০.১২ মিলিগ্রাম,
তামা- ০.৮৬ মিলিগ্রাম এবং
খাদ্যশক্তি- ২৮৩ কিলোক্যালরি।

উপকারিতা:
হেলথ লাইন, বিবিসি ফুড, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, পাকা তেঁতুল খেলে-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: গবেষকরা বলছেন, পাকা তেঁতুলের বীজ খাওয়ার ফলে মানবদেহে চিনির পরিমাণ কমে যায়। যা ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। অন্যদিক ডায়বেটিক আক্রান্ত রোগীদের শরীরে সুগার নিয়ন্ত্রণেও এটি বেশ কার্যকরী।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: পুষ্টিবিদরা বলছেন, পাকা তেঁতুল সম্পূন ফ্যাট ফ্রি একটি ফল। এটি দেহের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: এতে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট। যা মানবদেহে ক্যান্সারের জীবাণু প্রতিরোধ করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়: পাকা তেঁতুল হজম শক্তি বাড়তে সাহায্য করে। ফলে পেটের ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়ার নিরাময় হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়: পুষ্টি গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত পাকা তেঁতুল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়। এছাড়া এটি পেটের অন্যান্য সমস্যাও নিরাময় করে।

পেটের ব্যথা উপশম করে: এই ফলে থাকা উপাদান পেটের যেকোনো ব্যথা উপশমে খুবই কার্যকরী।

ক্ষত নিরাময় করে: তেঁতুল গাছের পাতা এবং ছালে রয়েছে তীব্র পরিমাণে এন্টি সেপটিক। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের ক্ষত নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: পাকাক তেঁতুল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে ত্বককে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করে।

আলসার প্রতিরোধ করে: নিয়মিত পাকা তেঁতুলের বিচি গুঁড়ো করে নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে আলসার প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।

হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে: পাকা তেঁতুল মানব শরীরে বিদ্যমান কোলেস্টেরলের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে।

সতর্কতা:
তেঁতুল উপকারী ফল হলেও এটি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি। স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, তেঁতুলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মানবদেহের রক্তপাত বৃদ্ধি, রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমায় এবং এলার্জি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এটি অতিরিক্ত খেলে পিত্তথলির ক্ষতি হতে পারে।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, বিবিসি ফুড, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও এই সময়

 

এবি/এসএন

৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।