• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপেলের অজানা উপকারিতা

আপেলের অজানা উপকারিতা

প্রতিকী ছবি

স্বাস্থ্য ডেস্ক

সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে আপেল। যদিও এটি আমাদের দেশীয় ফল নয়, তবুও দেশের বাজারে সঙ্গত কারণেই এর কদর রয়েছে। কারণ পুষ্টিগুণের দিক থেকে আপেল একটি অনন্য ফল, যা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।

আপেল পুষ্টিগুণে ভরপুর

একটি মাঝারি আপেলে (আনুমানিক ১৮২ গ্রাম) নিম্নলিখিত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়:
ক্যালোরি: ৯৫।
কার্বোহাইড্রেট: ২৫ গ্রাম।
ফাইবার: ৪ গ্রাম।
ভিটামিন সি: দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় ১৪%।
পটাসিয়াম: দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় ৬%।
ভিটামিন কে: দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় ৫%।
একই সাথে এতে ম্যাঙ্গানিজ, তামা এবং ভিটামিন এ, ই, বি-১, বি-২ এবং বি-৬ রয়েছে।
এছাড়াও আপেলও পলিফেনলের একটি সমৃদ্ধ উৎস। আপেল থেকে সর্বাধিক গুণাগুণ পেতে ছাল না ছাড়িয়ে আপেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপেলের ছোকলায় অর্ধেক ফাইবার এবং প্রচুর পলিফেনল রয়েছে।

আপেল ওজন কমানোর জন্য ভাল

আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং পানি রয়েছে, এর ফলে অল্প খেলেই পেট ভরাট করে তোলে। ফলে ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়, যা ওজন কমাতে উপকারী। গবেষকদের ধারণা. আপেল সহজে পেট ভরিয়ে দিলেও তুলনামূলক কম ক্যালোরি এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সরবরাহ করে যা ওজন কমানোর জন্য উপযোগী।

আপেল হার্টের জন্য উপকারী

আপেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কারণ আপেলে যে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে সেটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে পলিফেনল রয়েছে, যার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব রয়েছে। এই পলিফেনলগুলির মধ্যে একটি হল ফ্ল্যাভোনয়েড এপিকেটেচিন, যা রক্তচাপ কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভোনয়েড গ্রহণের সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০% হ্রাস হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তচাপ কমিয়ে, “খারাপ” এলডিএল অক্সিডেশন কমায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকির হ্রাস করে

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আপেল খাওয়ার সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। একটি গবেষণায় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, দিনে একটি আপেল খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৮% হ্রাস পায়। এমনকি প্রতি সপ্তাহে মাত্র কয়েকটি আপেল খেলেও তা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম করতে কার্যকর।

কারণ আপেলের পলিফেনল অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিটা কোষগুলি শরীরে ইনসুলিন তৈরি করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের বিটা কোষ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও আপেলে পেকটিন থাকে, এটি এক ধরনের ফাইবার যা প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।

আপেলের উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে

টেস্ট-টিউব গবেষণায় আপেলের উদ্ভিদ যৌগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসের মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে। বিশেষভাবে, মহিলাদের মধ্যে একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে আপেল খাওয়ার সাথে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার কম হওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, আপেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব সম্ভাব্য ক্যান্সার-প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

আপেলে হাঁপানির বিরুদ্ধে কার্যকর যৌগ রয়েছে

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আপেল আপনার ফুসফুসকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে সক্ষম। ৬৮,০০০ এরও বেশি মহিলার উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সবচেয়ে বেশি আপেল খেয়েছেন তাদের হাঁপানির ঝুঁকি সবচেয়ে কম ছিল। আপেলের ছালে ফ্ল্যাভোনয়েড কোয়ারসেটিন থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

আপেল হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

আপেল খাওয়া হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল এবং এটি হাড়ের উচ্চ ঘনত্ব নিশ্চিত করে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এই ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগগুলি হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

আপেল এনএসএআইডিএস এর ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে

ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) নামে পরিচিত ব্যথানাশক শ্রেণীর ওষুধ আমাদের পেটের আস্তরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। টেস্ট টিউব এবং ইঁদুরের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে হিমায়িত-শুকনো আপেলের নির্যাস এনএসএআইডিএস এর কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে পেটের কোষগুলিকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে আপেলের দুটি উদ্ভিদ যৌগ ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং ক্যাটিচিন বিশেষভাবে সহায়ক বলে মনে করা হয়।

আপেল মস্তিষ্কের সুরক্ষা প্রদান করে

আপেলের রস বয়স-সম্পর্কিত মানসিক পতন প্রতিরোধে উপকারী হতে পারে। প্রাণীদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, আপেলের রস মস্তিষ্কের টিস্যুতে ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতি (ROS) হ্রাস করে এবং মানসিক পতন কমিয়ে দেয়।

এছাড়াও আপেলের রস অ্যাসিটাইলকোলিন সংরক্ষণ করতে সাহায্য করতে পারে, এটি একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পেতে পারে। অ্যাসিটাইলকোলিনের নিম্ন স্তর আলঝাইমার রোগের সাথে যুক্ত। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন।

 

এবি/এনজে/এসএন

২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭:৩২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।