• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

থানকুনি পাতার উপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা

প্রতিকী ছবি

স্বাস্থ্য ডেস্ক

থানকুনি পাতার পুষ্টিগুনের জন্য ঐতিহ্যবাহী চীনা এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধে এর ব্যাপক প্রচোলন ছিলো। ইনফেকশন, পোড়া, দাগ, শরীর ছিলে যাওয়া সহ নানান কাজে প্রাথমিক চিকিৎসায় থানকুনি পাতার ব্যবহার হয়। থানকুনি পাতায় এমন কিছু রাসায়নিক রয়েছে যা প্রদাহ এবং শিরাগুলিতে রক্তচাপ কমায়। থানকুনি পাতা কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় যা ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।

থানকুনি পাতা জয়েন্টের ব্যাথার উপশম কমাতে সাহায্য করে

থানকুনি পাতায় থাকা এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বাত চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকরি হতে পারে। এর ফলে যৌথ প্রদাহ, কার্টিলেজ ক্ষয় এবং হাড়ের ক্ষয় হ্রাস পায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে থানকুনি পাতা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাতেও প্রভাব ফেলে। একটানা দুই সপ্তাহ ৫০০ মিলিগ্রামের মতো পাতা নিয়ে থেতলে ব্যাথার জাগায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

শরীরে উৎপন্ন বিষক্রিয়ার প্রভার হ্রাস করতে পারে থানকুনি পাতা

অ্যান্টিবায়োটিকের বিষাক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দমন করতে থানকুনি পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়াও যক্ষার চিকিৎসাতেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে। ইঁদুরের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার আগে ৩০ দিনের জন্য এসব ইঁদুরকে ১০০ মিলিগ্রাম করে থানকুনি পাতা দেওয়া হয়েছিলো। যার ফলে এদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কাজ করেনি।

থানাকুনি পাতা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে উপকারি

২০১৬ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, থানকুনি পাতায় থাকা ফলিক এসিডের প্রভাবে এটি নিয়মিত সেবন করলে স্ট্রোক করা রোগীর মস্তিষ্ক সতেজ রাখতে সহায়তা করে। যদিও থানকুনি পাতা ও ফলিক এসিড দুটোই মস্তিষ্কের সচলতা বাড়াতে সমান ভাবে উপকারি, তবে থানকুনি পাতা মেমোরির ডোমেন বাড়াতে বেশী কার্যকরি। এজন্য নিয়মিত ১০০০ মিলিগ্রামের মতো থানকুনি পাতা খেতে পারেন।

থানকুনিপাতা আলঝাইমার রোগের চিকিৎসায়

থানকুনি পাতায় মেমোরি এবং স্নায়ুর ফাংশন বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে। যার ফলে এটি আলঝাইমার রোগের চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে থানকুনি পাতা আলঝাইমার রোগীর উপর ইতিবাচক প্রভার ফেলে। মস্তিষ্কের কোষ গুলিকে বিষক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং একটি ফলক তৈরি করে যা আলঝাইমার হাত থেকে রক্ষা করে। তবে গবেষকদের মতে এ রোগের চিকিৎসায় থানকুনি পাতার প্রভাব নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন।

উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ কমায়

ঘুম কম হলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে যায়। গবেষকদের মতে থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কমায়। ঘুম কম হলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে যাবে, অ্যাক্সিডেটিভ ক্ষতি হবে এবং নিউরোইনফ্লেমেশন হবে। এজন্য যাদের ঘুম কম তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। যাদের ঘুম কম তারা দুই সপ্তাহ ৫০০ মিলিগ্রাম পরিমানে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন।

ডিপ্রেশন দূর করতেও থানকুনি পাতা উপকারি

মস্তিষ্কের কার্যক্ষেত্রে থানকুনি পাতার ইতিবাচক প্রভাব এটিকে ডিপ্রেশন নিরাময়েও কার্যকরী করে তোলে। ২০১৬ সালে ৩৩ জন ডিপ্রেশনের রোগীর উপর একটি গবেষনা করা হয়। তখন তাদেরকে ৬০ দিন ডিপ্রেশনের ওষুধের বদলে থানকুনি পাতা খাওয়ানো হয়। এরপর তারা নিজেরাই বলে যে তাদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা অনেকাংশে কমে গেছে। ডিপ্রেশনের সময় শরিরের ওজন, তাপমাত্রা ও হার্টরেট এর তারতম্য দেখা দেয়া। থানকুনি পাতার প্রভাবে এগুলোও সাভাবিক থাকে।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং শরীর ফোলা কমাতে সহায়তা করে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতা রক্ত প্রবাহ বন্ধ করা, গোড়ালি ফোলা এবং ৩ ঘন্টার বেশী লম্বা সময় ধরে ফ্লাইটে বসে থাকার ফলে সৃষ্ট ব্যাথার প্রভাবকে কমাতে সহায়তা করে।

ঘুম কম বা ইনসমনিয়ায় যারা আক্রান্তদের জন্য থানকুনি পাতা উপকারী

থানকুনি পাতায় উদ্বেগ, স্ট্রেস ও হতাশার চিকিৎসা সম্ভব। এজন্য অনিদ্রার চিকিৎসার জন্য এ পাতা কার্যকরি হতে পারে। কারণ ঘুম কম হলেই উদ্বেগ, স্ট্রেস ও হতাশা মানুষের মধ্যে বেশি কাজ করে। ডাক্তারদের মতে অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতা ভেষজ প্রতিকার। অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ায় ভূগলে ২/৩ সপ্তাহ দৈনিক তিনবার ৩০০ মিলিগ্রামের মতো থানকুনি পাতা খেতে পারেন।

শরীরে থাকা বিভিন্ন দাগ কমাতে সহায়তা করতে পারে থানকুনি পাতা

ডাক্তাররা মনে করেন থানকুনি পাতায় থাকা টেরপোনয়েডগুলি শরীরে কোলজেন উৎপাদন বাড়ায়। যা নতুন দাগ পরা ও প্রসারিত হওয়াকে রোধ করতে পারে এবং পাশাপাশি আগে থাকা দাগ নিরাময় করতেও সহায়তা করে। আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন দুইবার করে থানকুনি পাতার রস অথবা এর মলম ব্যবহার করতে পারেন।

ক্ষত নিরাময় করতে থানকুনি পাতা উপকারি

থানকুনিপাতা অনেক ধরনের ক্ষত নিরাময়ে প্রভাব ফেলে। ধারালো কিছু দিয়ে কাঁটলে, পড়ে গিয়ে কেটে গেলে অথবা পুরানো কিছুর সাথে লেগে কেটে গেলে থানকুনি পাতা নিয়ে থেতলে ক্ষতস্থানে মেখে নিন। এবপর যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ক্ষত স্থানের প্রাথমিক চিকিৎসায় থানকুনি পাতা অনেক কার্যকরি।

সাধারণ সতর্কতা এবং প্বার্শপ্রতিক্রিয়া

অনেকের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা মাথা ব্যাথা, পেটের ব্যাথা এবং মাথা ঘোরানোর কারণ হতে পারে। এজন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে অল্প দিয়ে শুরু করুন। এবং যদি বেশি সমস্যা হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।থানকুনি পাতা ব্যবহার করবেন না, যদি আপনি-

• গর্ভবতি হয়ে থাকেন।
• সন্তানকে বুকের দুধ পান করিয়ে থাকেন।
• হেপাটাইটিস বা লিভারের অন্যান্য রোগ থেকে থাকেন।
• ১৮ বছরের নিচে হলে।
• ত্বকে ক্যান্সারের সমস্যা থাকলে।অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করুন যাদি আপনার।
• ডায়াবেটিস থাকে।
• উচ্চ কোলেস্টোরেল থাকে।
• ঘুম বা উদ্বেগের জন্য নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার দরকার হয়।
• যদি মূত্রবর্ধক ব্যবহার করে থাকেন। যদিও সাধারন ভাবে ব্যবহারের জন্য থানকুনি পাতা নিরাপদ তবুও বেশী মাত্রায় কখনো ব্যবহার করবেন না। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন।

 

এবি/এনজে/এসএন

২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:১৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।