• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সাগুদানায় জাদুকরি পুষ্টিগুণ

সাগুদানায় জাদুকরি পুষ্টিগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সাগু বা সাবুদানা। আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটা খাবার। এটা সাধারনত ছোট শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের খাওয়ানো হয়। জ¦র ও অন্যান্য সাধারণ রোগে আক্রান্তদের জন্য সাগুদানা বেশ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় নিরাময় ও ওজন কমাতে সাগুদানার জুড়ি মেলা ভার। পিঠা, পায়েশ, স্যুপ ও জুসের সঙ্গে সাগুদানার খাওয়ার প্রচলন বেশি। এছাড়া আরও নানা ভাবে সাগুদানা খাওয়া হয়। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে সাগুদানায়-

পরিচয়:
এক প্রকার পাম গাছ থেকে এই সাগু উৎপাদিত হয়। যার বৈজ্ঞানিক নাম Metroxylon sagu। এই নামের Metroxylon শব্দটি গ্রিক Metro থেকে এসেছে। যার অর্থ “গাছের নরম অন্তসার”। এটি মূলত Arecaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। সাগু গাছ লম্বায় ৭ থেকে ১৭ মিটার পর্যন্ত হয়। কখনো কখনো ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। প্রতিটি গাছে ২০-২৫ টির মত পাতা হয়। এটি একটি ওষধি গাছ, মানে এতে একবারই ফুল ফোটে এবং ফলে ধরার পর গাছ মারা যায়।

অনেকে ধারণা করেন সাগু আসলে গাছের ফল। আসলে সাগু পাওয়া যায় এই পাম গাছের কান্ডের ভেতরে। তবে ওরকম গোল দানাদার আকারে নয়। বরং এটিকে পরে ছোট ছোট গোল আকার দেয়া হয়। সাগু প্রধানত উৎপাদিত হয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিজি, পাপুয়া নিউগিনি, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও ভারতে।

পুষ্টিগুণ:
ম্যাগাজিন ‘এই সময়’ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, সাগুদানায় খুব কম প্রোটিন, ভিটামিন বা খনিজ রয়েছে। এ ছাড়া এতে আছে ক্যারোটিন, থিয়ামিয়াম এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড।

প্রতি ১০০ গ্রাম সাগুদানায় রয়েছে-

ক্যালরি- ৩৩২ কিলোক্যালরি,
প্রোটিন- ০.২ গ্রাম,
ফ্যাট- ১ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ৮৩ গ্রাম,
খাদ্যআঁশ- ০.৫ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ১.২ মিলিগ্রাম এবং
জিংক- ১১ শতাংশ।

উপকারিতা:
স্বাস্থ্যবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হেলথ লাইন, এই সময় ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, সাগুদানা-

শক্তি যোগায়: সাগুদানায় রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালরি, যা দ্রুত শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ উপকারী।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: এতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত সাগুদানা খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়: সাগুদানায় থাকা খাদ্যআঁশ ও মিনারেলস হজমশক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। যা গবেষণায় প্রমাণিত।

হাড় ও দাঁত মজবুত করে: এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। যা হাড় ও দাঁত মজবুত করে। পাশাপাশি এটা দেহের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।

জ্বর উপশম করে: সাধারণ সংক্রমণ ও জ্বর উপশমে সাগুদানার ব্যবহার সুপ্রাচীন। সাধারণ রোগে স্বস্তি দিতে সাগুদানার বেশ কার্যকরী।

রক্তশূন্যতা দূর করে: সাগুদানায় রয়েছে আয়রন ও জিংক। এই উপাদানগুলো দেহে রক্তের ঘাটতি পূরণ করে। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতেও ব্যাপক কার্যকরী।

দুধের বিকল্প: শিশুখাদ্য হিসেবে সাগুদানার জুড়ি মেলা ভার। এটি দুধের পাশাপাশি সমজাতীয় পুষ্টি নিশ্চিত করে। কারণ সাগুদানায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, জিংক, আয়রন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। কাজেই এটি অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার।

শরীর শীতল রাখে: যাদের দেহ সবসময় অস্বাভাবিক গরম থাকে, তারা নিয়মিত সাগুদানা মিছরির পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি দেহ শীতল রাখতে খুবই কার্যকরী।

ত্বক ভালো রাখে: গবেষকরা বলছেন, ত্বকের দাগ ও বলিরেখা দূর করতে সাগুদানার স্যুপ খুবই কার্যকরী। নিয়মিত সাগুদানা খেলে ত্বকের বলিরেখা ও ত্বকের ছোপ ছোপ কালো দাগ দূর হয়।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে: ম্যাগাজিন এই সময়ে বলা হয়েছে, পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সাগুদানা দারুণ এক টোটকা। এটি নিয়মিত খেলে যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ওজন কমায়: পুষ্টিবিদরা বলছেন, সাগুদানায় রয়েছে কম মাত্রার ফ্যাট ও উচ্চ মাত্রার ক্যালরি। ফলে এটি দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র: এই সময়, হেলথ লাইন ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:৪১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।