রূপে নয়, গুণেই সেরা বুনো ‘ঘাটকোল’
প্রতিকী ছবি
ঘেটুকচু, নামটি প্রথম শুনলেও এটি বাংলাদেশে ঘাটকোল নামে বহুল পরিচিত। পুষ্টিমান ও ভেষজ গুণাগুণে ভরা ঘেটুকচু বা ঘাটকোল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তবে এর কঁচিপাতা শাক হিসেবেও খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সব অঞ্চলের জঙ্গলে আপনা আপনি জন্মে থাকে। দেশের প্রায় সব এলাকায় ঘাটকোল উৎপন্ন হলেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও সিলেট জেলায় এটি বেশি দেখা যায়। দক্ষিণ ভারতে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দীপপুঞ্জ, উত্তর আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কায় ঘাটকোল জন্মে থাকে। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে ঘাটকোলে-
পরিচয়:
ঘেট কচু বা ঘাটকোলের প্রকৃত নাম খারকোন। যারা বৈজ্ঞানিক নাম Typhonium trilobatum। এটি মূলত Araceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এই সবজিটির বিভিন্ন স্থানীয় নাম রয়েছে। কোথাও কোথাও এটাকে ঘের কচু, খারকান, খারকন, খানমান নামেও ডাকা হয়। রংপুর অঞ্চলে এটি চামঘাস নামেও পরিচিত। আদিবাসি চাকমা সম্প্রদায় ঘাটকোলকে বলে খারবাস।
এটির ডাটা সবুজ ও লম্বা হয়। ত্রিভূজাকৃতির সবুজ পাতা বিশিষ্ট ঘাটকোলের ডাটা কিছুটা খয়েরি রঙের হয়ে থাকে।
পুষ্টিগুণ:
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও আনন্দবাজারের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ঘাটকোলে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য খনিজ উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম ঘাটকোলে রয়েছে-
শর্করা- ৬.৮ গ্রাম,
প্রোটিন- ৩.৯ গ্রাম,
আয়রন- ১০ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন- ০.২২ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি২ বা রাইবোফ্লেবিন- ০.২৬ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন সি- ১২ মিলিগ্রাম,
চর্বি- ১.৫ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ২২৭ মিলিগ্রাম এবং
ক্যালরি- ৫৬ কিলোক্যালরি।
উপকারিতা:
উইকিপিডিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ঘাটকোল-
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। নিয়মিত ঘাটকোল খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে: ঘাটকোলে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান, যা দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে রাতকানা রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য ঘাটকোল দারুণ কাজ করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ঘাটকোলের শাকে ও ডাটায় রয়েছে স্যাপোনিনস, টেনিনস, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্লাভোনয়েডের মতো খনিজ উপাদান। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: শরীরে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে ঘাটকোলের জুড়ি মেলা ভার। এটি নিয়মিত খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: ঘাটকলে রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
রক্তশূন্যতা দূর করে: রক্তশূন্যতা থেকে উপশম পেতে হলে নিয়মিত খেতে পারেন ঘাটকোল। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন।
পরামর্শ:
ঘাটকোল একটি উপকারী খাদ্য উপাদান হলেও এটি অ্যালার্জি ও চুলকানিজনিত সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। কাজেই এটি খাওয়ার আগে সতর্কতা জরুরি।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, আনন্দবাজার, উইকিপিডিয়া ও স্বাস্থ্য বিডি।
এবি/এসএন