• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ঔষধি গুণে ভরা মিষ্টি স্বাদের ‘বিচি কলা’

ঔষধি গুণে ভরা মিষ্টি স্বাদের ‘বিচি কলা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

কলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি ফল। এই ফলটি সারা বছর পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় কলার চাষ হয়। তবে বিচি কলা দেশের সব অঞ্চলে পাওয়া যায় না। দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এই কলা বেশি পাওয়া যায়। স্বাদে-গন্ধে ও পুষ্টিমানে বিচি কলার জুড়ি মেলা ভার। সুস্বাস্থ্যের জন্য কলা যেমন দরকারি, তেমনি বিচি কলায় রয়েছে ভেষজ গুণাগুণ। যা অনেক রোগ নিরাময়ে কার্যকরী। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে বিচি কলায়-

পরিচয়:
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই কলা এঁটে কলা, বাইশ্যাকলা, আইট্টা কলা, বিচি কলা নামে পরিচিত। বিচি কলার বৈজ্ঞানিক নাম Musa acuminata। যা মূলত Musaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল, যার উৎপত্তি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় তথা নিউগিনি, আগ ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৮০০০ বছর পূর্ব থেকে এটি মানুষ চাষ করে আসছে। বসতবাড়িতে চাষ করা হয় এমন গাছপালার মধ্যে এটি প্রথম দিকের উদাহরণ। 
বিচিকলা ব্যতিক্রমধর্মী এক ধরনের কলা, সাধারণত কলা বীজবিহীন parthenocarpic গোত্রীয় ফল। তার পরও এতে রয়েছে প্রচুর বীজ। বিচি কলার গাছ বেশ উঁচু, লম্বা ও অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু। ফলে ঝড়, তুফান কিংবা জলাবদ্ধতা তেমন ক্ষতি করতে পারে না।

পুষ্টিগুণ:
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, এই সময় ও উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে বলা হয়েছে, পাকা বিচি কলায় প্রচুর পরিমাণে শর্করা বিদ্যমান, যা শক্তির অন্যতম উৎস। বিভিন্ন  প্রকার ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং ডি এর একটি অসাধারণ উৎস বিচি কলা। পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই কলা পটাশিয়ামের অনন্য উৎস। এতে একজন মানুষের দৈনিক প্রয়োজনের ২৩% পটাশিয়াম পাওয়া যায়। পটাশিয়াম পেশি নিয়ন্ত্রণ করে। কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় বি৬ এর ৪১% ই কলায় থাকে। এই কলায় রয়েছে প্রচুর আয়রন। এছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, চর্বি, প্রোটিন, আঁশ ইত্যাদি।

উপকারিতা:
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিচি কলা-
কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষ ও রেডিক্যাল কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে রোগের ঝুঁকি কমে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়: বিচি কলায় রয়েছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম। এতে রয়েছে কম মাত্রায় সোডিয়াম। নিয়মিত এই কলা খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে। এছাড়া এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে: বিচি কলায় প্রচুর আয়রন থাকার কারণে এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শক্তি জোগায়: উচ্চ পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও সুগার থাকার কারণে বিচি কলা শরীরে শক্তি জোগাতে কাজ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: বিচি কলার মধ্যে থাকা আঁশ হজমশক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি হজম ভালো করতেও কার্যকর।

ঔষধি গুণাগুণ:
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও আনন্দবাজারে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিচি কলার অনেক ঔষধি (medical benefits) গুণ আছে। এই কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস থাকে, যা শরীরে স্বাস্থ্যকর টিস্যু গঠনে কাজ করে। এ ছাড়া-

১. বিচি কলার ফুল ব্রংকাইটিস, আমাশয় এবং আলসার রোগ নিরাময়ে কাজ করে।
২. এই কলার রান্না করা ফুল হিস্টেরিয়া, কুষ্ঠ, জ্বর, রক্তক্ষরণ বন্ধ, স্থায়ী আমাশয় এবং ডায়রিয়া নিরাময়ে কার্যকরী।
৩. বিচি কলার বীজের মিউসিলেজ (সঁপরষধমব) ডায়রিয়া হলে ব্যবহৃত হয়। সম্পূর্ণ পাকা কলার খোসা ও পাল্পে ছত্রাক বিরোধী ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণাবলি পাওয়া যায়। সবুজ কলার খোসা ও পাল্পের দ্বারা তৈরি ছত্রাকনাশক টমেটোর ছত্রাকজনিত রোগ দমনে ব্যবহৃত হয়।
৪. পাকা বিচি কলার পাল্প ও খোসায় থাকা উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. বিচি কলা গ্যাস্ট্রিকজনিত নিঃসরণ রোধ করে এবং অন্ত্রীয় মসৃণ মাংসপেশীকে উদ্দীপিত করে।

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, আনন্দবাজার ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৩২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।