• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

যৌন সমস্যা সমাধানে অনন্য ‘কাঁটানটে শাক’

যৌন সমস্যা সমাধানে অনন্য ‘কাঁটানটে শাক’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

শাক-সবজির দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের বন-বাগানে, নদী পাড়ে, রাস্তার ধারে নানা ধরণের শাক পাওয়া যায়। এমনই একটি শাক ‘কাঁটানটে’। এই শাকটি মূলত এক ধরণের আগাছা। তবে পুষ্টিগুণে এই শাক অন্য সব শাকের চেয়ে মোটেও পিছিয়ে নেই। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁটানটে শাক যেমনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, তেমনি ভেষজগুণ সম্পন্ন।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে কাঁটানটে শাকে-

পরিচয় : কাঁটানটে শাকের স্থানীয় নানান নাম রয়েছে। কোথাও এটাকে বলা হয় কাঁটাখুইড়া, খুড়াকাঁটা, খৈরাকাটা ইত্যাদি। কাঁটানটে শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Amaranthus Spinosus। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় Spiny Amaranth, Spiny Pigweed, Prickly Amaranth or Thorny Amaranth। কাঁটানটে শাক মূলত Amaranthaceae পরিবারের অন্তর্গত। এটি বহুবর্ষজীবী, যা এক ধরণের গুল্মজাতীয় কাঁটাযুক্ত পাতাবিশিষ্ট আগাছা। এর পাতার আকৃতি অনেকটা ছোট। পাতার আগার দিকটা ক্রমশ সরু। পাতার বোঁটায় দৃঢ় লম্বা সূচালো দুটি কাঁটা থাকে।

পুষ্টিগুণ : উইকিপিডিয়া, বিএন কিউরা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কয়েকটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাঁটানটে শাকে রয়েছে উন্নতমানের পুষ্টি উপাদান। ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে এই শাক ভরপুর।

খাবার উপযোগী কাঁটানটে শাকে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, থায়ামিন, রিভাফ্লাভিন, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, আইরন, ম্যানেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম। এতে আর আছে Histidine, Isoleucine, Leucine, Threonine ইত্যাদি।

উপকারিতা ও কার্যকারিতা : স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধ ও উইকিপিডিয়ার তথ্যসূত্র বলছে, কাঁটানটে শাক-

যৌন সমস্যা দূর করে : হাতের আঙ্গুলের পরিমাপে কাঁটানটে শাকের মূল কেটে নিতে হবে। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে এক চামচ মধুর সঙ্গে এটি খেতে হবে। কয়েকদিন নিয়মিত সকালে খালি পেটে খেলে যৌন সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

পোড়া ক্ষত ভালো করে : ১০ থেকে ১৫ গ্রাম কাঁটানটে গাছের টাটকা মূল এবং ২০ গ্রাম পাতা কোনো মাটি বা স্টিলের পাত্রে রেখে, তাতে ১০০ মিলিলিটার পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। পানি ঠান্ডা হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেঁকে পোড়া ঘায়ের ওপর তুলা অথবা পাতলা কাপড়ের টুকরা চার-পাঁচ ভাজ করে বসিয়ে সেটা মূল ও পাতা সেদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে দিতে হবে। এভাবে কয়েক দিন চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে পোড়া ক্ষতস্থান দ্রুত শুকিয়ে যাবে।

খোস-পাঁচড়া সারায় : কাঁটা নটে গাছের পাতা, কাণ্ড, মূল ভালোভাবে শুকিয়ে তা আগুনে পুড়িয়ে নিতে হবে। পরে এর ছাই নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে খোস-পাঁচড়ায় প্রয়োগ করলে এ দু’টো চর্ম রোগ ভালো হয়ে যাবে।

ফোঁড়া ও বাগী ফাটাতে : কাঁটানটে গাছের কচি ডাল ও পাতা বেটে ফোঁড়া বা বাগীতে প্রলেপ দিলে মাত্র দু’তিন দিনের মধ্যেই ফোঁড়া ফেটে যাবে। দিনে একবার প্রলেপ দিলেই যথেষ্ট।

গনোরিয়া রোগ নিরাময় করে : কাঁটানটের শিকড় টাটকা তুলে এনে তা সামান্য পানি দিয়ে শিলে বেটে তার সম্পূর্ণ রস আধা কাপ ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে দেড় চা-চামচ চিনি বা মিছরির গুঁড়া কিংবা সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে অব্যর্থ সুফল পাওয়া যায়।

মাথা ব্যথা নিরাময় করে : আট গ্রাম কাঁটানটের মূল এবং এক গ্রাম গোলমরিচ, এ দুটোকে সামান্য পানি দিয়ে বেটে কপালে প্রলেপ দিলে মাধা ধরা সেরে যাবে।

পেটের যন্ত্রণা উপশম করে : তিন থেকে চার গ্রাম কাঁটানটের মূল এবং এক গ্রাম রসাঞ্জন নিয়মিত দিনে একবার খেলে পেটের যন্ত্রণা উপশম হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে : কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে কাঁটানটে শাকের জুড়ি মেলা ভার। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ।

দাঁত ভালো রাখে : দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি ও আয়রন। আর এসব উপাদান রয়েছে কাঁটানটে শাকে।

হজমশক্তি বাড়ায় : এই শাকে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ। এই উপাদানটি দেহের মেটাবলিজম ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, বিএন কিউরা, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও সমকাল

 

এবি/এসএন/আরএ

০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭:৫৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।