• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ওজন কমায় হজম বাড়ায় ‘মটর শাক’

ওজন কমায় হজম বাড়ায় ‘মটর শাক’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

শীতকালীন সবজিতে দেশের বাজার ভরপুর। ভোজনরসিক বাঙালির খাবার তালিকায় বাহারী সবজির সঙ্গে শাক থাকা চায়-ই। শীতের শুরু থেকেই বাজারে এখন লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, মটরশুঁটি শাকসহ নানা মৌসুমী শাক পাওয়া যাচ্ছে। শাক বাংলাদেশিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মটরশুঁটি যেমন পুষ্টিকর, তেমনি এর শাকও পুষ্টিকর ও উপকারী।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে মটর শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক কী আছে মটর শাকে-

পরিচয় : মটরশুঁটি হলো লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ। যা Pisum Sativum এর গোলাকার বীজ। প্রতিটি মটরশুঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে। যদিও এটি এক প্রকারের ফল। এটি মূলত সবজি হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এই মটরশুঁটি গাছের কঁচি পাতা ও ডগাকে বলা হয় মটর শাক। এটি Sativum প্রজাতির একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসারে নিওলিথিক যুগের সিরিয়া, তুরস্ক ও জর্ডানে মটরশুঁটির সন্ধান মেলে। তবে এটি এখন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক বর্ণনায় পাওয়া যায়, উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষের হরপ্পা এলাকায় ২২৫০-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মটরশুঁটির চাষ হতো।

পুষ্টি উপাদান : জি নিউজ ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, মটরশুঁটি শাকে রয়েছে প্রচুর আঁশ, এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড ও মলিবডেনামসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুঁটি শাকে রয়েছে 

ক্যালরি ৬৬ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট ৩.৪ গ্রাম
সুগার ১.৮৬ গ্রাম
খাদ্যআঁশ ১.৬ গ্রাম
চর্বি ০.১ গ্রাম
প্রোটিন ০.৬৮ গ্রাম
ভিটামিন বি১ ০.০১২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ ০.০৩৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩ ০.২৫৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ১৪.৮ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৩৪ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ ০.০৬৯ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ২৩৩ মিলিগ্রাম এবং
জিংক ০.২৮ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, মটর শাক-

ওজন কমায় : এই শাকে রয়েছে প্রচুর আঁশ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। যা উপাদান ওজন কমাতে সহায়তা করে।

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে : কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত মটর শাক বেশ কার্যকরী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন। যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

রক্তচাপ কমায় : এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া এতে রয়েছে ফোলেট, যা রক্তচাপ ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।

কিডনি সুরক্ষিত রাখে : চিকিৎসা গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত পরিমাণ মতো মটর শাক খেলে কিডনীতে জমে থাকা পাথর মলমূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে : মটর শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। যা দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে : মটর শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা তারুণ ধরে রাখতে সহায়তা করে। ফলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায় : এই শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের সতেজতা ধরে রাখে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় : যারা দীর্ঘদিন হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, তারা নিয়মিত মটর শাক খেতে পারেন। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। এছাড়া এটি অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিস ও বাত ব্যথা নিরাময়েও বেশ কার্যকরী।

দাঁতের ক্ষয় রোধ করে : দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। যা মটর শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।

হজমশক্তি বাড়ে : এই শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যামাইনো অ্যাসিড। এই উপাদান মেটাবলিজম ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : নিয়মিত মটর শাক খেলে পেটের সমস্যা দূর হবে। এতে রয়েছে আঁশ, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে : এই শাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি, যা রক্ত স্বল্পতা দূর করে। কারণ আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধী নানা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ফলে নিয়মিত মটর শাক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

চোখের সুরক্ষায় : এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, যা চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

চর্মরোগ নিরাময় : এতে রয়েছে নিয়োক্সেথিন ও ভায়োল্যাক্সানথিন নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এই উপাদানগুলো চর্মরোগ নিরাময় ও ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, এই সময় ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন/আরএ

২০ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৪৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।