• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিগুণে স্বাদে ফাইন, মাছের সেরা ‘বাইন’

পুষ্টিগুণে স্বাদে ফাইন, মাছের সেরা ‘বাইন’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বাইন মাছ বা বাইম মাছ। বাংলাদেশে বহুল জনপ্রিয় একটি মাছ। এটি দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম। রক্তশূন্যতা দূর করতে বাইন মাছ খাওয়ার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। রোগাক্রান্ত মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রায়ই বাইন মাছ দেখা যায়। উচ্চমূল্যের এই মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। দেশের গ্রামাঞ্চলের হাটে বাজারে এখনো দেখা মেলে এই মাছের। উৎপাদন কম থাকায় দামও বেশি। পুষ্টিগুণে এই মাছ অন্যসব মাছের মতো হলেও, এই মাছের চাহিদা বেশি।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে বাইন মাছ বা বাইম মাছের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, বাইন মাছের কিছু উপকারি দিক-

পরিচয় : বাংলাদেশে বড় বাইন বা বামুশা বা দেশি বড় বাইন নামে এই মাছটি পরিচিত। এছাড়া বাও বাইম বা রাজ বাইম বা বানেহারা বাইম নামেও এই মাছকে অনেকে চিনে থাকেন। বাইন মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Anguilla Bengalensis। এটি মূলত অ্যাঙ্গিলিডি পরিবারভুক্ত একটি মাছ। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল ১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে এর স্থানীয় নাম বামাস, বামুস, বামোস, বাউস, বাওস, বানেহারা, বাউ বাইম, তেল কোমা, বাও মাছ ইত্যাদি। এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। এছাড়া পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কায় এটি পাওয়া যায়।

পুষ্টি উপাদান : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, বাইন মাছে অন্যান্য মাছের মতই রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাট, ফাইবার, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, পটাশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান।

উপকারিতা : উইকিপিডিয়া, স্বাস্থ্যবিডি ডটকম ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাইন মাছ-

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : এই মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। কাজেই নিয়মিত এই মাছ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। আমেরিকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ওপর এ সংক্রান্ত জরিপ চালানো হয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে : তৈলাক্ত মাছে থাকে ডিএইচএ অর্থাৎ ডোকোসাহেক্সানোয়িক অ্যাসিড, যা এক ধরনের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স (মস্তিষ্কের কোষের ভিত্তি) তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। আমেরিকার মেরিল্যান্ডের ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এক সমীক্ষায় জানিয়েছেন, ৬০ বছর পেরোনো মানুষ সপ্তাহে দুই দিন বা তার বেশি দিন মাছ খান তাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।

বার্ধক্য দেরিতে আনে : বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ফিশ ডায়েট। ইনস্টিটিউট অব হেলদি এজিংয়ে ৬৫ থেকে ৯৪ বছর বয়সী ৮শ ব্যক্তির ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে। সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বাইন মাছ বা অন্যান্য মাছ খান, তাদের বার্ধক্য দেরিতে আসে।

মস্তিষ্ক ভালো রাখে : গবেষকরা বলছেন, মস্তিষ্ক ভালো রাখতে নিয়মিত বাইন মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। কারণ এই মাছে থাকা পুষ্টি উপাদান ও খনিজ উপাদান অ্যালঝাইমার্স ডিজিজের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

ভুলে যাওয়া রোগ দূরে রাখে : যারা ডিমেনশিয়া অর্থাৎ ভুলে যাওয়ার অসুখে ভুগছেন, তারা বাইন মাছ খাবার তালিকায় রাখুন। এই মাছের তেল ভুলে যাওয়া রোগ দূরে রাখে। একই সঙ্গে এটি বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে : রক্তনালির স্বাস্থ্য রক্ষায় বাইন মাছ অত্যন্ত কার্যকরী। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

ত্বক ভালো রাখে : বাইন মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাট ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।

দাঁত ও হাড়ের সুরক্ষা : বাইন মাছে রয়েছে প্রচুর আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও জিংক। এসব উপাদান হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : এতে এমন কিছু খনিজ উপাদান রয়েছে, যা সেলেনিয়াম উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, স্বাস্থ্যবিডি ডট কম ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস

 

এবি/এসএন/আরএ

১৭ নভেম্বর ২০২১, ০৭:১৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।