• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বহু রোগের নিরাময় ‘নিশিন্দার ফুল-পাতায়’

বহু রোগের নিরাময় ‘নিশিন্দার ফুল-পাতায়’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ভেষজগুণে সেরাদের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক উপাদান ‘নিশিন্দা’। স্বাস্থ্য উপকারিতা বিবেচনায় এই উদ্ভিদটি যেমন অনন্য, এটি দেখতেও তেমন সুন্দর। নিশিন্দার নীলচে বেগুনী ফুল যে কারো চোখ জুড়িয়ে দেবে। নানা রোগ নিরাময়ে নিশিন্দার পাতা, ফুল, ফল ও শিকড় ব্যবহার হয়ে থাকে। তেঁতো স্বাদের এই উদ্ভিদের ব্যবহারের ইতিহাস সুপ্রাচীন। তাই তো বরেণ্য শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় গেয়েছিলেন-'নিম তিতা নিশিন্দা তিতা, তিতা পানের খড় রে..'

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে আমরা নিশিন্দার গুণাগুণ নিয়ে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে নিশিন্দায়-

পরিচয় : ভেষজ এই উপাদানটির বাংলা নাম ‘নিশিন্দা’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Vitex Negundo। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় Chinese Chaste Tree বা Five-Leaved Chaste Tree, Horseshoe Vitex, Nisinda। এটি এক প্রকার ছোট পর্ণমোচী উদ্ভিদ, যার পাতা প্রতি বছর একবার ঝরে যায়। এটি গুল্ম ও বৃক্ষের সংকর প্রজাতি। ওষুধিগুণে ভরপুর এই গাছের পাতা, শিকড়, ফুল ও ফল ব্যবহার করা যায়। নানা ধরণের রোগ সারাতে এই উদ্ভিদের জুড়ি মেলা ভার।

উপকারিতা : উইকিপিডিয়া ও হেলথবেনিফিটস টাইমস-এ প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, নিশিন্দা পাতা-

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : নিশিন্দার পাতা পরজীবী নাশক। এটি যক্ষ্মা ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়া নিশিন্দা পাতা গরম করে যে কোনো ফোলার উপর বা মচকানোর ব্যথা ও প্রদাহ স্থানে রেখে গরম কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলে ব্যথা উপশম হয়। এটি টিউমার সারাতে বেশ কার্যকর।

কান পাকা নিরাময় করে : নিশিন্দা পাতার রস বা পাতা বেটে সরিষার তেলে পাক করে সেই তেল ২/১ ফোঁটা কানে দিলে কানের রোগ দূর হয়। কানের পুঁজ হওয়া ও কান পাকা রোগ সারাতে নিশিন্দার জুড়ি মেলা ভার।

কৃমি নাশ করে : এই উদ্ভিদের পাতা চূর্ণ সিকি গ্রাম পরিমাণ খেলে (পূর্ণবয়স্কদের জন্য) গুঁড়া কৃমি বিনাশ হয়।

গেঁটে বাত উপশম করে : নিশিন্দা পাতা গেঁটে বাত সারাতে বেশ কার্যকরী। একই সঙ্গে যদি জ্বর থাকে, তবুও এতে সুফল পাওয়া যায়।

মুখের ঘা দূর করে : যারা মুখে বা জিহ্বায় ঘা-জনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিশিন্দা পাতার রস ও ঘি জ্বাল দিয়ে দিনে ও রাতে দুবার মুখে লাগান। উপকার পাবেন।

খুশকি ও টাক পড়া রোধ করে : নিশিন্দার পাতার রসে জ্বাল দেওয়া তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে টাক পড়া বন্ধ হয়। এছাড়া দীর্ঘদিনের খুশকি সমস্যাও নিরাময় হয়।

অতিরিক্ত প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করে : যারা বার্ধক্যজনিত কারণে বা বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন, তারা রাতে ও সকালে নিশিন্দা পাতার গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা দূর হবে।

স্মৃতিশক্তি উন্নত করে : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিভ্রম যেন একটি নিত্য সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দিনে দুটি নিশিন্দা পাতা ঘি দিয়ে ভেজে খেয়ে নিন। স্মৃতিভ্রম বা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাজনিত সমস্যা দূর হবে।

বমি ও জ্বর উপশম করে : এই পাতার জলীয় নির্যাস জ্বর নিবারক হিসেবে কাজ করে। বমি ও অতিরিক্ত তৃষ্ণা সমন্বিত জ্বরের চিকিৎসায় নিশিন্দার ফুল ব্যবহার হয়ে আসছে সুপ্রাচীন কাল থেকে।

ঋতুস্রাব নিয়মিত করে : যারা অনিয়মিত ঋতুস্রাবজনিত জটিলতায় ভুগছেন, তারা নিশিন্দা ফলের নির্যাস খেতে পারেন। এটি ঋতুস্রাব নিয়মিতকরণে ব্যাপকভাবে কার্যকরী।

চর্মরোগ নিরাময় করে : তিলের তেলের সাথে দ্বিগুণ পরিমাণ নিশিন্দার পাতার রস জ্বাল দিয়ে চর্মরোগের স্থানে লাগালে চুলকানি, খাজুনিসহ অন্যান্য চর্মরোগ সেরে যায়।

সতর্কতা : যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন, তারা নিশিন্দা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিশিন্দা ব্যবহার করা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, হেলথবেনেফিটস টাইমস ও ড্রাগস ডটকম

 

এবি/এসএন/আরএ

১৬ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৫৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।