• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সতেজ রূপ-যৌবন চান, নিয়ম মেনে পান খান

সতেজ রূপ-যৌবন চান, নিয়ম মেনে পান খান

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানায় খাওয়াইতাম’, এই গানের কলি দেখেই বুঝা যায়-বাঙালি সংস্কৃতিতে নিবিড়ভাবে মিশে আছে ‘পান’। সেটা বুঝতে মোটেও দেরি হওয়ার কথা নয়। কারণ পান নিয়ে গান, কবিতা, ছড়া ও পুথিপাঠের ঐতিহ্য বহু পুরনো। বাংলা সিনেমার গানেও ফুটে উঠেছে পানের আকর্ষণ। তাই তো শিল্পী গেয়েছেন-‘পান খাইয়া ঠোট লাল করিলাম, বন্ধু ভাইগ্যো হইলো না’।

প্রিয় পাঠক, বুঝতেই পারছেন আজ আমরা পানের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে পানে-

পরিচয় : পান Piperaceae পরিবারের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের এক প্রকার লতাজাতীয় গাছের পাতা। আর্য ও আরবরা পানকে তাম্বুল নামে অভিহিত করত। নিশ্বাসকে সুরভিত করা এবং ঠোঁট ও জিহবাকে লাল করার জন্য মানুষ পান খায়। পান বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর অঞ্চলে বেশি জন্মে। এছাড়া পাহাড়ি অঞ্চল ও সিলেটের টিলাগুলোতেও পান জন্মে। এনিয়ে বাংলা সাহিত্যেও নানা টিপ্পনী, ছড়া ও কবিতা রচিত হয়েছে। বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি পঙক্তি হলো-‘তাম্বুল রাতুল হলো অধর পরশে’।

গুণাগুণ : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, পানে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফসফরাস, পটাশিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান।

উপকারিতা : পানের রয়েছে নানা উপকারিতা। সতেজ রূপ-যৌবন পেতে নিয়ম মেনে পান খেতে পারেন।বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, জি নিউজ ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, পান-

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : পান পাতায় আছে চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এজন্য রোজ ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর তা নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। একটু ঠাণ্ডা হলে তাতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করুন। রোজ এটি খেতে পারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।

হজমশক্তি বাড়ায় : পান খেলে লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ লালার কারণেই হজমের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম বা উৎসেচক খাদ্যকে কণায় ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে : খাবার গ্রহণের পর তার কণা মুখের ভেতরে, দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। এগুলো ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। যা ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দুর্গন্ধমুক্ত হয়।

যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে : এটি একটি পুরনো প্রথা তবে কার্যকর। পানের রস যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। আগেকার দিনে নববিবাহিতরা বেশি বেশি পান খেতেন।

এন্টিসেপটিকের কাজ করে : কোথাও কেটে গেলে দ্রুত সেখানে পানের রস লাগিয়ে দিলে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে না। পান পাতা পলিফেনল বিশেষত চাভিকল নামক রাসায়নিক উপাদানে পূর্ণ। এটা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করে : পান খেলে পেটে বায়ু জমে কম। ফলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার সৃষ্টির সুযোগ পায় না। পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা পেটে বদ গ্যাস তৈরিও রোধ করে।

জন্মরোধ করে : পান গাছের শিকড় বেটে রস করে খেলে জন্মরোধ করা যায়। এটিকে প্রাকৃতিক জন্ম নিরোধক বড়ি বলা হয়। বিভিন্ন দেশের গবেষণায় এর প্রমাণও মিলেছে।

উঁকুন বিনাশ করে : যারা মাথায় উঁকুনের যন্ত্রণায় ভুগছেন, তারা গোসলের কিছুক্ষণ আগে পান পাতার রস মাথায় লাগান, উঁকুন মারা যাবে।

চর্মরোগ নিরাময় করে : দেহের কোথাও চুলকানি বা পাঁচড়া হলে সেখানে পান পাতার রস লাগিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে তা ভালো হয়ে যায়।

নখের ব্যথা সারায় : অনেক সময় নখের কোনায় ব্যথা হয়। এ অবস্থায় সেখানে কয়েক ফোঁটা পানের রস দিলে ব্যথা চলে যায়।

আঁচিল দূর করে : শরীরে আঁচিল হলে তার উপর কয়েক দিন পানের রস লাগান। এতে তা ধীরে ধীরে খসে পড়বে এবং ওই জায়গায় আর আঁচিল হবে না।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : পান রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে। ফলে পানে রয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য।

ক্ষত ও ব্যথা সারায় : পানের বেদনানাশক ও ক্ষত সারানোর ক্ষমতা আছে। কোথাও ব্যথা হলে পান পাতা বেটে মলমের মতো সেখানে লেপে দিলে দ্রুত ব্যথা কমে। দেহের ভেতরে কোথাও ব্যথা হলে পানের রস করে পানিতে মিশিয়ে তা শরবতের মতো খেতে হবে।

ঠাণ্ডা-সর্দি দূর করে : ঠাণ্ডা-সর্দি সারাতে পান চমৎকার কাজ করে। ঠাণ্ডা লাগলে সর্দি কাশিও হয়। এ ক্ষেত্রে পানপাতা গরম পানি দিয়ে ছেঁচে রস বের করতে হবে। এ রসের সঙ্গে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ও আদার রস মিশিয়ে খেতে হবে।

পিঠে ব্যথার উপশম করে : নানা কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। শোয়া থেকেও হয়। বয়স্কদের এ সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। মাংসপেশির টান থেকেও এরূপ ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যথার জায়গায় পান পাতা দিয়ে সেঁক দিলে উপকার মেলে।

সতর্কতা : পান উপকারী বটে। তবে পানের সঙ্গে চুন ও ক্ষতিকর জর্দা ও তামাক পাতা মিশিয়ে খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই জর্দা দিয়ে পান খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করাই উচিত।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও জি নিউজ

 

এবি/এসএন/আরএ

১৪ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৫৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।