• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোগ নিরাময়ের দাদা, তার নাম ‘আদা’

রোগ নিরাময়ের দাদা, তার নাম ‘আদা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে রোগ নিরাময়ের অন্যতম সেরা উপাদান আদা। ওষুধিগুণে ভরপুর আদার ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সাধারণ রোগ ও সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে আদার কার্যকারিতা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত। অনেকেই বলে থাকেন ‘আদা, সকল রোগ নিরাময়ে ওষুধের দাদা’।

যেসব উপাদানে ভরপুর আদা : এতে রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-এ, বি৬, ই ও সি এবং অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি এজেন্ট। যা সব বয়সী মানুষের রোগ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।

আদার কার্যকারিতা 

আমাশয় : যারা দীর্ঘদিন আমাশয়জনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য আদা হতে পারে এক মহৌষধ। আদার ভেষজ উপাদান প্রাকৃতিকভাবে আমাশয় দূর করে। প্রতিদিন খাওয়ার পর এক চা-চামচ আদার রস গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পেটফাঁপা ও অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ : অধিকাংশ মানুষ পেটফাঁপা বা অ্যাসিডিটিতে ভুগে থাকেন। তারা চাইলে নিয়মিত আদা খাওয়ার মাধ্যমে পেটফাঁপা ও অ্যাসিডিটিকে বিদায় করতে পারেন। এজন্য এক চা–চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু একত্রে এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে দিনে এবং রাতে নিয়মিত পান করুন। অ্যাসিডিটি দূর হবে।

হাঁপানি নিরাময় ও ফুসফুসের সংক্রমণ রোধ : ফুসফুসের ধমনিতে সৃষ্ট সংক্রমণরোধে আদা খুবই কার্যকরি এছাড়া হাঁপানি রোগীদের জন্য আদা হতে পারে দারুণ এক প্রাকৃতিক ওষুধ। প্রতিদিন সকাল ও রাতে এক চা-চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে পান করুন। আশা করা যায়, দুই সপ্তাহের মধ্যেই উপকার মিলবে।

আদা, লেবুর রস ও মধুর টোটকা : মানবদেহের অনেক রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসার উপাদান হিসেবে আদা, লেবুর রস ও মধু ব্যবহারের প্রচলন প্রাচীণ কাল থেকে চলে আসছে। মুখের দুর্গন্ধ, কোষ্ঠকাঠিন্য, অরুচি, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে আদা অত্যন্ত কার্যকরী একটি ভেষজ উপাদান।

এক চা-চামচ আদার রস এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে এক সপ্তাহ দিনে দুইবার পান করুন। অবশ্যই উপকার পাবেন।

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় : আর্থারাইটিস, অস্ট্রিওআর্থারাইটিস বা হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়ে স্থায়ী কোনো সমাধান নেই। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তবে প্রতিদিন সকাল ও রাতে আদার রস, লেবুর রস ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে ব্যথা উপশম হয়।

হৃদরোগ : যাদের হৃদরোগ আছে, কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ নেই, তারা সহজেই হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এ জন্য দিনে দুইবার এক চা-চামচ আদার রস, লেবুর রস ও মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো পান করুন। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে।

জ্বর ও বমি বমি ভাব : জ্বর ও বমি বমি ভাব দূর করার জন্য এক চা-চামচ আদার রস গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো করে ছয় থেকে সাতবার পান করলে জ্বর ও বমি ভাব দূর হয়।

কাশি ও কফ থেকে মুক্তি : আবহমান গ্রাম বাংলায় কাশি ও কফ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ আদা ব্যবহার করে আসছেন। এটি সবচেয়ে প্রচলিত একটি টোটকা। প্রতিদিন দুইবার এক চা-চামচ করে আদার রস, লেবুর রস ও মধু গরম পানিতে মিশিয়ে চায়ের মতো পান করুন। স্বস্তি পাবেন।

আদা সংরক্ষণে সতর্কতা : একবারে আদা পিষে ফ্রিজে সংরক্ষণ করবেন না। অনেকেই রান্নার জন্য আদা পিষে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন, যা মারাত্মক ভুল। এতে আদার ওষুধি গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক বলছেন, অতিরিক্ত আদা খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হজমে সমস্যা ও পেট ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১৫ গ্রাম আদা রস খেতে পারেন। এর বেশি আদা খেলে তা বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা আদার সঙ্গে মধু কম মেশাবেন।

পরামর্শ : যারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে ভুগছেন, তারা আদা খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলবেন।

 

এবি/এসএন

২৩ জুলাই ২০২১, ০৭:১৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।