• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ত্বক ও চুলের যত্নে সেরা উপাদান ‘তিসির তেল’

ত্বক ও চুলের যত্নে সেরা উপাদান ‘তিসির তেল’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

স্নেহ জাতীয় দারুণ একটি বীজ দানা ‘তিসি’। দেখতে ক্ষুদ্রাকৃতির হলেও তিসির গুণাগুণ ব্যাপক। ত্বক ও চুলের যত্নে তিসি বেশি ব্যবহার হয়। এই তেল রান্নায় ব্যবহারের জন্য প্রচলিত নয়। তিসির তেল মূলত বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য বেশি জনপ্রিয়। খুশকি দূর করতে ও মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে তিসির তেল বেশ কার্যকরী।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে তিসির তেলের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কি আছে তিসির তেলে-

পরিচয়:
তিসির তেল এক ধরণের দানা জাতীয় বীজ। এর ইংরেজি নাম ঋষধীংববফ ড়রষ। এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হয়। আগে দেশের তিসির তেল ব্যাপক হারে আবাদ হতো। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এখন দেশে তিসি চাষের হার কমে এসেছে। এটি মূলত তেল জাতীয় বীজ। তিসি থেকে তেল উৎপন্ন করা হয়। এছাড়া পিঠা-পায়েস ও শুকনো খাবারের স্বাদ বাড়াতে তিসি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পুষ্টিগুণ:
ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজ ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, তিশি তেলে রয়েছে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। এছাড়া এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফাইবার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, পটাসিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি এক টেবিল চামচ পরিমাণ তিসির বীজে রয়েছে-

ক্যালরি- ৫৫ কিলোক্যালরি,
পানি- ৭ শতাংশ,
প্রোটিন- ১.৯ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ৩ গ্রাম,
চিনি- ০.২ গ্রাম,
ফাইবার- ২.৮ গ্রাম,
চর্বি- ৪.৩ গ্রাম,
পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট- ২.০ গ্রাম,
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড- ১.৫৯৭ গ্রাম,
ভিটামিন বি১- ৮ শতাংশ,
ফোলেট- ২ শতাংশ,
ক্যালসিয়াম- ২ শতাংশ,
আয়রন- ২ শতাংশ,
ম্যাগনেসিয়াম- ৭ শতাংশ,
ফসফরাস- ৪ শতাংশ এবং
পটাসিয়াম- ২ শতাংশ।

তিসি খাওয়ার নিয়ম:
খাওয়ার জন্য তিসি ভেজে নিয়ে পাউডার তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে বা সকালের নাস্তার সঙ্গে এটি খেতে পারেন। তবে রাতে খেলে কার্যকারিতা বেশি পাওয়া যায় বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। প্রতিদিন ছোট চামচের এক চামচ তিসি খাওয়া উপকারী। তবে এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া ও অ্যাসিডিটি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।

উপকারিতা:
জি নিউজ, বিএন হেলথ বিডি, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও স্বাস্থ্য বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হেলথ লাইনে প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, তিসি-

ত্বকের বলিরেখা দূর করে: ত্বকের বলিরেখা অতি পরিচিত একটি সমস্যা। এটি আপনাকে বয়সের আগে বুড়ো করতে যথেষ্ট। তিসির তেলের নিয়মিত ব্যবহার এই সমস্যা সমাধান করে। প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার করে সামান্য তেল নিয়ে মুখে ম্যাসেজ করুন। এভাবে ৩০ মিনিট ম্যাসেজ করুন এবং পরে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ দিয়ে ফেলুন। বলিরেখা দূর হবে।

ত্বককে ময়েশ্চারাইজার করে: শুষ্ক ত্বককে দারুণভাবে ময়েশ্চারাইজার করে তিসির তেল। কারন তিসির তেলে থাকা এন্টি-ফালামেটরি শুষ্ক ত্বককে গভীর থেকে ময়েশ্চারাইজার করে। এক্ষেত্রে আপনি শুধু তিসির তেল বা আপনার ব্যবহৃত ফেস প্যাকের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের সংক্রমণ ও ফোলা ভাব প্রতিরোধ করে: তিসির তেলে থাকা আলফা লাইনোলেনিক অ্যাসিড ত্বককে যে কোন প্রকার সংক্রমণ হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এটি ত্বকের অস্বাভাবিক ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের র‌্যাশ, লালচে ভাব ও ঘাম জনিত সমস্যা দূরে রাখে।

শুষ্ক ত্বকের টিস্যু নিয়ন্ত্রণে রাখে: ত্বকের সুস্থ্যতা শরীরের ভিতরের টিস্যুগুলোর উপর নির্ভরশীল। ত্বক ভালো রাখতে টিস্যু সুস্থ রাখা জরুরি। শুষ্ক ত্বকের ময়েশ্চারাইজারের ভারসাম্য ঠিক রেখে তিসির তেল ত্বকের টিস্যু নিয়ন্ত্রণ করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: ত্বকের ডেড সেল গুলো পরিষ্কার কর এবং অতিরিক্ত তেল বের করে দেয় তিসির তেল। এটি ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতাও দূর করে। এছাড়া ছোপ ছোপ কালো দাগ দূর করতে তিসি তেলের জুড়ি মেলা ভার।

ব্রণ ও ব্যাল্ক হেডস দূর করে: তিসির তেলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং উচ্চমানের এন্টি- ফালামেট্ররি প্রোপার্টিজ ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ব্রণের সমস্যা দূর করে। এছাড়া ব্ল্যাকহেডস সমস্যা দূর করতেও তিসির তেল কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: বর্তমানে ত্বকের অন্যতম মারাত্মক সমস্যা ত্বকের ক্যান্সার। নানা রকম ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনকি ত্বকের ক্যান্সার এখন মারাত্মক পর্যায়ে পৌছে গেছে। কিন্তু তিসির তেল ব্যবহার করলে এই ক্যান্সার দূরে রাখা সম্ভব। কারণ এতে আছে এন্টি -অক্সিডেটিভ প্রোপার্টিজ যা ক্যান্সারের সেল তৈরি হতে বাধা সৃষ্টি করে।

চুল পড়া কমায়: চুলের যত্নে তিসির তেল তুলনাহীন। এটি নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে চুল পড়া রোধ করে। তিসির তেলে রয়েছে ভিটামিন-ই যা চুলের জন্য অত্যবশকীয় উপাদান।

খুশকি থেকে মুক্তি দেয়: মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে তিসির তেল বেশ কার্যকরী। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে সহজেই খুশকি দূর হয়। সেই সঙ্গে মাথার ত্বকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি মেলে। পরিমাণমত নারিকেল তেলের সাথে এক থেকে দেড় চা-চামচ তিসির তেল সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার ব্যবহার করলে খুশকির সমস্য দূর হবে।

চুল কালো ও ঘন করে: তিসির তেলে থাকা অ্যাসিড জাতীয় উপাদান চুল ঘন ও কালো করতে সহায়তা করে। শুধু তিসির তেল বা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহারে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র: জি নিউজ, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, অর্গানিক বিডি এবং হেলথ লাইন

 

এবি/এসএন

১৩ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৫২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।