• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিগুণে সেরা উদ্ভিদ ‘তেলাকুচা’

পুষ্টিগুণে সেরা উদ্ভিদ ‘তেলাকুচা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বনে-জঙ্গলে, এমনকি রাস্তার পাশে জম্মে দারুণ উপকারী একটি উদ্ভিদ। অনেক সময় আমরা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই উদ্ভিদ দুপায়ে মাড়িয়েও ফেলি। ভেষজগুণাগুণ ও পুষ্টিগুণে ভরা এমনই একটি উদ্ভিদ ‘তেলাকুচা’। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই তেলাকুচা পাওয়া যায়। এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধকারী নানা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে তেলাকুচায়-

পরিচয় : তেলাকুচা এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। এর বোটানিক্যাল নাম Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। এটি Cucurbitaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভেষজ নাম Coccinia। প্রচলিত নাম- তেলাকুচা, তেলাকুচো, কুন্দ্রি শাক। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বা বিভিন্ন দিকে অঞ্চল বিশেষে একে কুচিলা, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, কেলাকুচ, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। শেরপুর জেলার ডালু আদিবাসীরা এই শাককে কুইচ্চ্যাগেলেক ও কুইচ্যাগাস বলেন। নেপালে বলা হয় গোল কানক্রি। এর ইংরেজি নাম 'Scarlet gourd', বা Baby Watermelon, Little Gourd বা Gentleman's Toes.

ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয় এবং বাংলাদেশে এটি টিয়া পাখিকে খেতে দেখা যায় ।

পুষ্টিগুণ : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেলাকুচা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ভেষদ উদ্ভিদ। এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলস ও খনিজ উপাদান। তেলাকুচা বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি উপকারী উদ্ভিদ।

প্রতি ১০০ গ্রাম তেলাকুচায় রয়েছে
প্রোটিন ১.২ গ্রাম
আয়রন ১.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ ০.০৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১ ০.০৭ মিলিগ্রাম
আঁশ ১.৬ গ্রাম এবং
ক্যালসিয়াম- ৪০ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা : জি নিউজ, আনন্দবাজার, উইকিপিডিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেলাকুচা-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেলাকুচা খুবই কার্যকরী। তেলাকুচার কান্ডসহ পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে নিন। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে এই রস আধাকাপ পরিমাণ পান করুন। এছাড়াও তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়।

জন্ডিস নিরাময় করে : জন্ডিস হলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। তবে ভয় না পেয়ে ভরসা রাখুন এই তেলাকুচা গাছের উপর। যা খুব উপকারী। জন্ডিস সারাতে তেলাকুচার মূল ছেঁচে রস তৈরি করে নিন। এবার প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ এই রস পান করুন। এতে উপকার পাবেন।

পা ফোলা রোগ দূর করে : পা ফুলে যাওয়া কিংবা শোথ রোগ অনেকেরই হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় গাড়িতে ভ্রমণ করা বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে এর রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকালে পান করুন। এতেই সমস্যার সমাধান মিলবে।

শ্বাসকষ্ট (হাঁপানি নয়) নিরাময় করে : সাধারণ শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে নিন। এবার ৩ থেকে ৪ চা চামচ পরিমাণ তিন থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পান করুন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা মিটে যাবে।

কাশি থেকে মুক্তি দেয় : কাশি উপশমেও তেলাকুচা খুব উপকারী। যদি শ্লেস্মাকাশি হয়, তবে শ্লেস্মা তরল করতে এটি বেশ কাজ করে। কাশির উপশমে ৩ থেকে ৪ চা চামচ তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে নিন। এবার এর সঙ্গে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে ৩ থেকে ৭ দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খান। এতেই উপকার মিলবে।

স্তনে দুধ স্বল্পতা দূর করে : সন্তান প্রসবের পর অনেকের স্তনে দুধ আসে না। আবার শরীর ফ্যাকাশেও হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা দিলে ১টি তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধু মিশিয়ে নিন। এবার এই রস পরিমাণ মতো সকাল ও বিকেল ১ সপ্তাহ পান করুন। এতে স্তনে দুধের স্বল্পতা দূর হয়ে যাবে।

ফোঁড়া ও ব্রণ দূর করে : ফোঁড়া ও ব্রণ সারাতে তেলাকুচা পাতা জাদুর মতো কাজ করে। তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁচে ফোঁড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ব্যবহার করুন। এতে দ্রুত মুক্তি মিলবে।

আমাশয় নিরাময় করে : পুরনো আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে চাইলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস ৩ থেকে ৪ চা-চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খান। ৩ থেকে ৭ দিন নিয়ম করে এই রস পানেই উপসম মিলবে।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার, জি নিউজ, উইকিপিডিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস

 

এবি/এসএন/আরএ

০৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:১৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।