• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রকৃতির সিঙ্গাড়া ‘পানিফল’

ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রকৃতির সিঙ্গাড়া ‘পানিফল’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

পানিফল বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি ফল। এটি এখন শুধু গ্রামেই নয়, শহরের বাজারেও পাওয়া যায়। শহরে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে পানিফল বিক্রি করতে দেখা যায়। এই ফলকে অনেকে প্রকৃতির সিঙ্গাড়া বলে থাকেন। পানিতে জন্মানো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে পানিফলের গুণাগুণ ও পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে পানিফলে-

পরিচয় : সিঙ্গাড়ার মত দেখতে বলে পানিফলের ইংরেজি নাম Water chestnut। এটির উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম Trapa bispinosa। এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফিলিপাইন ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পানিফল পাওয়া যায়। অনেক দেশে এটির বাণিজ্যিক চাষও শুরু হয়েছে। তবে প্রায় ৩ হাজার বছর আগ থেকে চীনে পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পানিফল পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। ফলের রঙ লাল, নীলাভ সবুজ বা কালচে সবুজ। পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিণ্ডকার বা ত্রিভূজাকৃতির নরম সাদা শাঁস। এই নরম শাঁস খেতে বেশ মজা। রসালো ও স্বাদে মিষ্টি।

পানিফলের পুষ্টিগুণ : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজের পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, পানিফলে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, কপার, পটাশিয়াম, প্রোটিন, আঁশ, ম্যাঙ্গানিজসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে রয়েছে
কার্বোহাইড্রেট ৯০ শতাংশ
শর্করা ৬০ শতাংশ
ক্যালরি ৬৫ কিলোক্যালরি
জলীয় অংশ ৮৪.৯ গ্রাম
খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম
খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম
প্রোটিন ২.৫ গ্রাম
চর্বি ০.৯ গ্রাম
শর্করা ১১.৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ১০.১৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ২০.০৫ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম।

ওষুধি গুণাগুণ : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, শুধু পুষ্টিগুণেই সেরা নয়, বরং পানিফল ওষুধি গুণেও সবার সেরা। পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ নিরাময় হয়। এছাড়া তলপেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া নিরাময়ে এটি খুবই কার্যকরী।

উপকারিতা : জি নিউজ ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, পানিফল-

অ্যালার্জি নিরাময় করে : পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ কমে যায়।

ডায়রিয়া নিরাময় করে : উদরাময় ও তলপেটে ব্যথায় পানিফল খুবই উপকারী। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান পেট ব্যথা নিরাময়ে দ্রুত কাজ করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : পানিফলে রয়েছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

দেহ বিষমুক্ত করে : অনেকের শরীর সব সময় গরম হয়ে থাকে। কিন্তু আপনারা যদি পানিফল খান, তাহলে শরীর ঠাণ্ডা থাকবে। এছাড়া এটি দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়।

শক্তি জোগায় : পানিফলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালরি, যা দেহের শক্তি সঞ্চার করে।

ক্যান্সার দূরে রাখে : এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। এসব উপাদান ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে।

হজমশক্তি বাড়ায় : বমিভাব ও হজমের সমস্যা দূর করতে পানিফলের জুড়ি মেলা ভার। কারণ পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশে ভরপুর এই পানিফল।

ঘুম ভালো হয় : যারা অনিদ্রা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগে থাকেন, তারা নিয়মিত কয়েকদিন পানিফল খেতে পারেন। এটি দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর করে পানিফল।

রক্তশূন্যতা দূর করে : রক্তশূন্যতা দূর করতে পানিফল বেশ কার্যকরী। এছাড়া ব্রঙ্কাইটিস নিরাময়েও এই ফল খাওয়া যেতে পারে।

ত্বক উজ্জ্বল করে : ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ রাখতেও পানিফলের ‍জুড়ি নেই। কারণ ফলটি পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই-তে ভরপুর।

তথ্যসূত্র : জি নিউজ, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন/আরএ

০৯ নভেম্বর ২০২১, ০৫:০৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।