• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মাংসের সেরা বিকল্প ‘কাঁকড়া’

মাংসের সেরা বিকল্প ‘কাঁকড়া’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

মাংসের দারুণ এক প্রাকৃতিক বিকল্প উৎস ‘কাঁকড়া’। খাদ্য গবেষক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, অন্যান্য যে কোনো প্রাণিজ আমিষের চেয়ে কাঁকড়া সেরা। এটি গরুর মাংসের চেয়ে তিনগুণ বেশি উপকারী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাঁকড়া খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশেও এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, বিদেশে রপ্তানীর দারুণ এক সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে কাঁকড়া। এটি খাবার হিসেবে জনপ্রিয়তায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে তাই কাঁকড়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে কাঁকড়ায়-

পরিচয় : কাঁকড়া আর্থ্রোপোডা পর্বের একটি ক্রাস্টাসিয় প্রাণী। এটি চিংড়ি মাছের একই প্রজাতি। এদের শরীর একটি পুরু বহিঃকঙ্কালে আবৃত থাকে এবং এদের এক জোড়া দাঁড়া থাকে। এ পর্যন্ত কাঁকড়ার ৬ হাজার ৭৯৩টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। পৃথিবীর সব সাগরেই কাঁকড়া পাওয়া যায়। এছাড়াও অনেক মিঠা পানির ও স্থলবাসী কাঁকড়াও পাওয়া যায়। 

কাঁকড়া হালাল নাকি হারাম : কাঁকড়া খাওয়ার ব্যাপারে অন্য কোনো ধর্মে নিষেধ নেই। তবে এ ব্যাপারে ইসলামী শরিয়তে কয়েক রকম মাসয়ালা পাওয়া গেছে। তবে অধিকাংশ মাসয়ালায় বলা হয়েছে, কাঁকড়া মুসলিমদের জন্য হালাল।
এ ব্যাপারে প্রথমত, হানাফি মাযহাবের মতে, নদী-নালার শুধু মাছই খাওয়া জায়েজ। অন্য কোনো প্রাণী খাওয়া জায়েজ নয়। সেই হিসেবে কাঁকড়া যেহেতু মাছ হিসেবে গণ্য নয়, তাই হানাফি মাযহাব অনুসারে তা খাওয়া বৈধ নয়। (ফাতওয়া কাসিমীয়া ২৪/১২২)।
অপর এক মাসয়ালায় বলা হয়েছে, কাঁকড়া খাওয়া যাবে। সামুদ্রিক প্রাণী যা পানিতে থাকে, তা কাঁকড়া হোক বা অন্য প্রাণী হোক, তা খাওয়া হালাল (আল মুকনে ২৭/২৮২ মাসআলা নং ৪৬২৬)।
এছাড়া হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন-সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রাণী হালাল (আবু দাউদ, বুলূগুল মারাম, পবিত্রতা অধ্যায় ১, হাদিস ৮৩)।
অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে, কাঁকড়া খাওয়া জায়েজ। যদি কারো খেতে রুচি হয়, তিনি খেতে পারবেন। যেহেতু নবী (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন-সমুদ্রের অথবা নদীর মধ্যে, যেই মৃত প্রাণী আছে, সেগুলো সবটাই হালাল। এর মধ্যে কাঁকড়া অন্তর্ভুক্ত হবে এবং কাঁকড়া খাওয়াও হালাল হবে (আবু দাউদ হাদিস নাম্বার ৮৩)।

পুষ্টিগুণ : স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট, ডয়চে ভেলে ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাঁকড়ায় রয়েছে-প্রোটিন, ক্যালরি, ওমেগা-৩ ফ্যাট, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রনসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম মাংস কাঁকড়ায় রয়েছে
ক্যালরি ৯৭ কিলোক্যালরি
চর্বি ১.৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল ৫৩ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ১.০৭২ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ২৬২ মিলিগ্রাম
প্রোটিন ১৯ গ্রাম
ভিটামিন সি ১২ শতাংশ
ভিটামিন বি ৬-১০ শতাংশ
ম্যাগনেসিয়াম ১৫ শতাংশ
কোবাল্যামিন- ১০ শতাংশ এবং
আয়রন ৪ শতাংশ।

উপকারিতা : জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাঁকড়ায় মাংসের মতো পুষ্টিগুণ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাঁকড়া-

শক্তি বৃদ্ধি করে : কাঁকড়ার মাংসে আছে প্রচুর ক্যালরি, যা দেহে শক্তির জোগান দেয়। উচ্চ ক্যালরি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ওজন বৃদ্ধি করে না। কাজেই ওজন বেড়ে যাওয়া চিন্তা না করে কাঁকড়া খেতে পারেন।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : কাঁকড়ার মাংসে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সহায়তা করে। কাঁকড়ায় যে ওমেগা-৩-ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়, তা রান্নার জন্য ব্যবহৃত তেলের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের চেয়ে লম্বা চেইনের হয়ে থাকে। ফলে কাঁকড়া দিতে পারে তাৎক্ষনিক ওমেগা-৩-ফ্যাটি এসিডের সাপ্লাই।

রক্ত বৃদ্ধি করে : এতে আছে ভিটামিন বি-২ বা রিবোফ্লাভিন এবং বি-১২ (সায়ানো কোবালামিন), যা মানবদেহে রক্তের লোহিত কনিকা বৃদ্ধি করে। এছাড়া এটি রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি উন্নত করে।

মস্তিষ্ক ভালো রাখে : মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি শক্তি উন্নত করতে কাঁকড়ার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া এটি স্টেরয়েড উৎপাদনেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে : গবেষকরা বলছেন, কাঁকড়ার মাংসে আছে সেলেনিয়াম মৌল, যা মানবদেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে ত্বকের লাবন্যতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌন চাহিদা উন্নত করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

হরমোন ঠিক রাখে : কাঁকড়ায় থাকা সেলেনিয়াম মানবদেহের থাইরয়েড হরমোন ঠিক রাখে। পুরুষের যৌন হরমোন বৃদ্ধি করে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে কাঁকড়ার মাংসের সেলেনিয়াম। বলা হয়েছে, কাঁকড়ায় কড লিভার তেলের তিনগুণ এবং গরুর মাংসের ১২ গুণ বেশি সেলেনিয়াম থাকে।

হাড় মজুবত করে : এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম, যা হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে।

সতর্কতা : কাঁকড়ার মাংস বা কাঁকড়া উপকারী খাবার হলেও এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। বিশেষ করে যারা অ্যালার্জি, চুলকানি ও লাল ফুসকুড়িতে ভুগছেন, তারা কাঁকড়া এড়িয়ে চলুন। উচ্চ শক্তি সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় নিয়মিত কাঁকড়া না খেয়ে বিরতি দিয়ে কাঁকড়া খাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেতে সামুদ্রিক কাঁকড়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। গবেষকরা বলছেন, দিনে দুইশ গ্রামের বেশি কাঁকড়া একবারে খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে, উইকিপিডিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস

 

এবি/এসএন/আরএ

০৬ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৪২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।