• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের ঐতিহ্য ‘কুমড়া বড়ির’ পুষ্টিগুণ

শীতের ঐতিহ্য ‘কুমড়া বড়ির’ পুষ্টিগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

কুমড়া আর মাষকলাই ডালের বড়ি খেয়েছেন? না খেয়ে থাকলে এবার শীতে এই বড়ির স্বাদ নিতে পারেন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে কুমড়া বড়ি মিশে আছে বহুকাল ধরে। বিশেষ করে শীতকালে এলেই বাঙালি নারীরা কুমড়া আর মাষকলাই ডাল দিয়ে এই বড়ি বানান। এটি শীতকালে বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তা বছর ধরে খাওয়া যায়। এটি পুষ্টিগুণে অত্যন্ত উপকারি। এতে রয়েছে নানা ধরণের পুষ্টি। বাঙালির রান্নায় বৈচিত্র্য ও স্বাদের ভিন্নতা তৈরিতে এই উপাদান বেশ জনপ্রিয়।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে কুমড়া বড়িতে-

নাম কেন কুমড়া বড়ি : পরিপক্ক চাল কুমড়া ও মাষকলাই পিষে মণ্ড তৈরি করা হয়। পরে তা হালকা পানি দিয়ে নরম করে বড়ি বা বড়া আকারে রোদে শুকানো হয়। মূলত চাল কুমড়া ও মাষকলাই ডাল দিয়েই এই বড়ি তৈরি হয়। এর স্বাদও অনন্য। কিন্তু কেউ কেউ পেঁপে ও লাউ দিয়েও বড়ি বানিয়ে তা কুমড়া বড়ি হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। যা স্বাদে মোটেও কুমড়া বড়ির মতো না। এই বড়ির প্রধানতম কাঁচামাল কুমড়া ও মাষকলাই ডাল, আর ঠিক এ কারণেই এর নাম হয়েছে কুমড়া বড়ি বা বড়া।

পুষ্টিগুণ : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, পুষ্টিগুণ বিবেচনায় চালকুমড়া অনন্য। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, আমিষ, শর্করা, আঁশ, চর্বি, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল, আয়রন জিংক ও ফসফরাস। প্রতি ১০০ গ্রাম চালকুমড়ায় রয়েছে ক্যালরি ১৩ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ১ গ্রাম, শর্করা ৩ গ্রাম, আঁশ ৩ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৪ শতাংশ, ভিটামিন বি ৮ শতাংশ এবং জিংক ৬ শতাংশ।

এছাড়া মাষকলাইয়ে রয়েছে প্রচুর আমিষ, আঁশ, চর্বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, শর্করাসহ নানা খনিজ উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম মাষকলাইয়ে রয়েছে ক্যালরি ৩৪১ কিলোক্যালরি, পটাশিয়াম ৯৮৩ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম, সোডিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম ও আয়রন ৭.৫৭ গ্রাম।

কুমড়া বড়ির ইতিহাস : আমাদের দেশের সব অঞ্চলে এই বড়ি বানানো হয় না। ঢাকার বিক্রমপুর-মানিকগঞ্জ অঞ্চল, যশোর-খুলনা অঞ্চল, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং উত্তরবঙ্গের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে ডালের বড়ি বানানোর প্রচলন আছে। যদিও তার পরিমাণ দিনদিন কমে যাচ্ছে। মূলত নিরামিষ তরকারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে কমুড়া-বড়ি। এটি কোনো একক উপাদান হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করা হয় না। সুক্তো, সবজির ঘন্ট, ভাজা, ঝোল কিংবা অম্বল বা টক ধরনের খাবারে অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় এই বড়ি।

উপকারিতা : যেহেতু কুমড়া বড়ির প্রধানতম উপাদান চাল কুমড়া ও মাষকলাই, কাজেই খাবারটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নাল চাল কমুড়া ও মাষকলাইয়ের গুণাগুণ ও উপকারিতা নিয়ে পৃথক তথ্য দিয়েছে। আমরা সেসব তথ্য থেকে সমন্বয় করে কিছু উপকারী দিক তুলে ধরলাম। যেমন, কমুড়ার বড়ি-

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, চালকুমড়া পুষ্টিকর ও বীর্যবর্ধক। যা যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। এছাড়া মাষকলাই পুরুষত্ব টিকিয়ে রাখতে দারুণ কাজ করে বলে জানিয়েছে উইকিপিডিয়া।

রক্ত পরিষ্কার রাখে : রক্তের ক্ষতিকর টক্সিক ধ্বংস করতে চালকুমড়া খুবই কার্যকরী। এটি শরীর শীতল করে রক্তের গতি স্বাভাবিক রাখে। এটি পিত্তনাশক। অপরদিকে মাষকলাই রক্ত পরিশোধনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

কফ দূর করে : যারা দীর্ঘমেয়াদে কফ নিয়ে জটিলতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত কয়েকদিন চালকুমড়া খেতে পারেন। উপকার পাবেন।

মুত্রাশয়ের সংক্রমণ নিরাময় : চালকুমড়ায় রয়েছে প্রচুর জলীয় অংশ, ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ। এসব উপাদান মুত্রাশয়ের সংক্রমণ নিরাময়ে খুবই কার্যকর।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তারা চালকুমড়া খান। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর জলীয় অংশ ও ফাইবার। যা মল নরম করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে সহায়তা করে। একইভাবে মাষকলাইও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে খুব কার্যকর। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করতে মাষকলাই দারুণভাবে কাজ করে।

আলসার প্রতিরোধ করে : আপনি যদি দীর্ঘদিনের জমে থাকা গ্যাস্ট্রিকের কারণে আলসারে আক্রান্ত হন, তাহলে আপনার জন্য চালকুমড়া হতে পারে দারুণ একটি নিরাময়ের উপায়। আর সঙ্গে যদি থাকে মাষকলাই, তাহলে কথাই নেই। এ দুটি উপকরণ আপনার পুরনো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করবে। পেট হবে আলসার মুক্ত।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে : চালকুমড়ায় শর্করা ও চর্বি রয়েছে। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। যা হৃদযন্ত্র উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। একইভাবে মাষকলাইয়ে থাকা খনিজ উপাদান হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা নিশ্চিন্তে চালকুমড়া ও মাষকলাই খেতে পারেন। কারণ এতে যেসব পুষ্টি ও ভিটামিন রয়েছে, তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর। আর আপনি যদি কুমড়ার বড়ি খান, তাহলে তো কথাই নেই।

চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা : চুল পড়ে যাওয়াসহ মাথার ত্বকে ইনফেকশন দূর করতে সহায়ক চালকুমড়া ও মাষকলাই দারুণভাবে কার্যকরী। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি। আর এ দুটি উপাদান আপনি পেয়ে যাবেন কুমড়া বড়িতে।

ত্বক উজ্জ্বল করে : চাল কুমড়ার জলীয় অংশ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী। একইভাবে মাষকলাইয়ে থাকা ভিটামিন ত্বকের গভীর থেকে ব্রণ-মেছতা দূর করে।

রুচিবর্ধক : অজীর্ণ ভাব ও ক্ষুধামন্দা দূর করতে চালকুমড়া ও মাষকলাই দ্রুত কাজ করে। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে চালকুমড়ার জুড়ি নেই। কাজেই বলা যেতে পারে, রুচি বৃদ্ধিতে কুমড়া বড়ি হতে পারে দারুণ এক উপকরণ।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, হেলথ লাইন, আনন্দবাজার ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন/আরএ

০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৮:০৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।