• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচা পাকা তেঁতুলের পুষ্টিগুণ

কাঁচা পাকা তেঁতুলের পুষ্টিগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

তেঁতুল। এমন একটি ফল, যার নাম শুনলেই জিভে আসে জল। সব ধরণের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল তেঁতুল। বিশেষ করে নারীদের কাছে তেঁতুল বা তেঁতুলের আচার যেন অন্য এক আকর্ষণ। অনেকেই মনে করেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এটি প্রচলিত কুসংস্কার। তেঁতুল অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে তেঁতুলে-

পরিচয় : তেঁতুল (Tamarindus indica) ফলটি Fabaceae পরিবারের অর্ন্তভুক্ত একটি ফল। দক্ষিণ আফ্রিকায় মূল্যবান খাবারের মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তেতৈ আর নোয়াখালীতে এই ফলকে বলা হয় তেতি। আদিবাসীরাও এটিকে বিভিন্ন নামে ডাকে। মারমাদের ভাষায় হাও মং এবং রাখাইনরা তেঁতুলকে বলে তাতু। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় ট্যামারিন্ড। এর বৈজ্ঞানিক নাম ট্যামারিন্ডুস ইন্ডিকা। হিন্দিতে ইমলি এবং শ্রীলঙ্কায় ইয়াম্বালা বলা হয়। এর আয়ুর্বেদিক নাম যমদূতিকা।
তেঁতুলগাছ বহু পাতাবিশিষ্ট বৃক্ষ হওয়াতে স্বাভাবিকভাবে রাতের বেলা অধিক পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ করে, একই সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। এ সময় গাছের নিচের চারপাশে অক্সিজেনের শূন্যতা দেখা দেয়। আর সে মুহূর্তে কোনো লোক যদি গাছের নিচে অবস্থান করে অথবা ঘুমিয়ে থাকে তাহলে অক্সিজেনের অভাবে অজ্ঞান কিংবা ঘাড় বাঁকা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।

পুষ্টিগুণ : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেঁতুলে আছে অনন্য পুষ্টি উপাদান। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন-

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা তেঁতুলে রয়েছে-ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, আমিষ ১.১ গ্রাম, শর্করা ১৩.৯ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ভিটামিন বি১ ১.২ গ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৬ মিলিগ্রাম, খনিজ লবণ ১.২ গ্রাম এবং কার্বোহাইড্রেট ৬২ কিলোক্যালরি।

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে রয়েছে-ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম, আমিষ ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৬৪.৪ গ্রাম, চর্বি- ০.১ গ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.১ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৬২৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৯২ মিলিগ্রাম, সিলিনিয়াম ১.৩ মিলিগ্রাম, দস্তা ০.১২ মিলিগ্রাম, তামা ০.৮৬ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে ২৮৩ কিলোক্যালরি।

উপকারিতা : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও ‘এই সময়’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেঁতুল খেলে-

শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় : তেঁতুল হজম শক্তি বাড়তে সাহায্য করে। ফলে পেটের পীড়া, গ্যাস্ট্রিক, ডাইরেরিয়ার মতো সমস্যা দূরে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় : নিয়মিত তেঁতুল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়। এছাড়া এটি পেটের অন্যান্য সমস্যাও নিরাময় করে।

পেটের ব্যথা উপশম করে : এই ফলে থাকা উপাদান পেটের যে কোনো ব্যথা উপশমে খুবই কার্যকর।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে : গবেষকরা বলছেন, তেঁতুলের বীজ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে চিনির পরিমাণ কমে যায়। যা ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। অন্যদিক ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের শরীরে সুগার নিয়ন্ত্রণেও এটি বেশ কার্যকর।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে : পুষ্টিবিদরা বলছেন, তেঁতুল সম্পূন ফ্যাট ফ্রি একটি ফল। এটি দেহের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : এতে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট। যা মানবদেহে ক্যান্সারের জীবাণু প্রতিরোধ করে।

ক্ষত নিরাময় করে : তেঁতুল গাছের পাতা এবং ছালে রয়েছে তীব্র পরিমাণে এন্টি সেপটিক। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের ক্ষত নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে : তেঁতুল আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে ত্বককে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষা দেয়।

আলসার প্রতিরোধ করে : তেঁতুলের বীজ গুঁড়ো করে নিয়মিত খেলে শরীরে আলসার প্রতিরোধ করতে ভূমিকা পালন করে।

হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে : তেঁতুল আমাদের শরীরে বিদ্যমান কোলেস্টেরলের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে।

সতর্কতা : তেঁতুলে উপকারিতা যেমন আছে, তেমনি এটি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। কারণ তেঁতুলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা, রক্তপাত বৃদ্ধি করে, রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং এলার্জি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এটি খেলে দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে, সেই সঙ্গে পিত্তথলির ক্ষতি করতে পারে। কাজেই তেঁতুল খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও এই সময়

 

এবি/এসএন/আরএ

০১ নভেম্বর ২০২১, ০৭:০৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।