• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক ‘খেজুরের রস’

প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক ‘খেজুরের রস’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে বাংলার প্রকৃতিতে এসে গেছে হেমন্ত। শীত শুরু হতে মাস খানিক বাকি থাকলেও গ্রামীণ জনজীবনে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। শীতকাল এলেই বাংলাদেশে পিঠা-পুলির ধুম পড়ে। হেমন্তের নতুন ধানের চাল আর খেজুরের রস ও গুড়ের তৈরি খাবারের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। শীতকালে নানা ধরণের খাবার তৈরি হলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পানীয়। এই পানীয়র নাম ‘খেজুরের রস’। এটাকে পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক।

প্রিয় পাঠক, আমাদের এই পর্বে খেজুর রসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে খেজুর রসে।

পরিচয় : খেজুর গাছ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়া রস সংগ্রহ করা হয়। এই রস দিয়ে গুড় তৈরি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে খেজুর রস বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া অঞ্চলে খেজুর গাছ বেশি জন্মে। ফলে এই অঞ্চলে খেজুরের রস ও গুড় বেশি পাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ : ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার নাহিদের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে, যা থেকে গুড় ও সিরাপ তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় আখের গুড় থেকেও বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। খেজুরের গুড়ে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেলস।

কেন খাবেন খেজুরের রস : কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন এই সময়-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, খেজুরের রস খেলে-
*দেহের শক্তি বৃদ্ধি হয়।
*ক্লান্তি ও অবসাদ ভাব দূর হয়।
*খেজুরের রসে থাকা আয়রন দেহে রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে।
*এটি এক ধরণের এনার্জি ড্রিংক, যা শরীর শীতল রাখে।

কখন খাবেন খেজুরের রস : পুষ্টিবিদরা বলেছেন, সকাল অথবা ভোরবেলা খেজুরের রস খাওয়া উত্তম। সাধারণত সকাল বেলা খেজুরের রস খাওয়া হয়। তবে কেউ কেউ সারাদিন জমিয়ে রাখা খেজুরের রস বিকালে পান করেন, এটি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

কতটুকু খাবেন : বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহারের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, খেজুরের রস সংগ্রহ করার পর যত তাড়াতাড়ি খাওয়া যায়, ততই ভালো। সময় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রসে গাজন প্রক্রিয়া হতে থাকে। ফলে এটি স্বাদ হারিয়ে ফেলে এবং অম্লতা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় খেজুরের রস খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

এছাড়া ‘এই সময়’ ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, ভরদুপুর বা দিনের বেলা খেজুরের রস খাওয়া ঠিক না। এতে অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে। অনেকেই বমিসহ পেটের ব্যথায় ভুগতে পারেন। তাই রাত অথবা ভোরে খেজুরের রস খাওয়া উচিত। দিনে এক থেকে দুই গ্লাস খেজুরের রস পান করা যেতে পারে।

কীভাবে খাবেন খেজুরের রস : পুষ্টিবিদরা বলছেন, রাতে বা সকালে রস খেতে পারেন বা রসের তৈরি বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন। তবে রস যেহেতু খোলা অবস্থায় গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাই এতে নানা ধরণের জীবাণু থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক হালকা আঁচে খেজুরের রস ফুটিয়ে নিতে পারেন। একইভাবে খেজুরের রস দিয়ে কোনো খাবার তৈরির আগে এটি ভালো করে ফুটিয়ে নিতে পারেন।

সতর্কতা : যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া যারা কিডনি রোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত তারা খেজুরের রস বা খেজুরের রসের তৈরি অন্যান্য খাবার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র : এই সময়, উইকিপিডিয়া ও জি নিউজ

 

এবি/এসএন/আরএ

৩১ অক্টোবর ২০২১, ০৭:৫৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।