• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভেষজগুণেও তেজী ‘তেজপাতা’

ভেষজগুণেও তেজী ‘তেজপাতা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

তেজপাতা। ভেষজগুণ সমৃদ্ধ এই মসলা নামে যেমন, গুণেও তেমন তেজী। এটি বহুকাল ধরে আয়ুর্বেদী ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া মসলাদার রান্নার স্বাদ বাড়াতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। মসলাদার রান্না ছাড়াও স্যুপ, পায়েস, পোলাওসহ নানা খাবারে বাড়তি সুগন্ধ যুক্ত করতে তেজপাতার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এটি শুধু খাবারের সুগন্ধই বৃদ্ধি করে না, বরং এটি খাবারে বাড়তি পুষ্টিও যোগ করে।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে তেজপাতার গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে তেজপাতায়-

পরিচয় : এটি প্রাচীন গ্রীসে ঐতিহ্যগতভাবে ওষুধ তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতো। তেজপাতা এক প্রকারের উদ্ভিদের পাতা। যা মসলা হিসাবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum tamala। তেজপাতা গাছ মূলত ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে এটি বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশে সীমিত পরিসরে পাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ : জনপ্রিয় আয়ুর্বেদীয় পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডাবর ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই। এতে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ফলিক অ্যাসিডসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান। নানা রোগ নিরাময়ে তেজপাতা অত্যন্ত কার্যকর বলে ডাবর ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে।

উপকারিতা : উইকিপিডিয়া ও ডাবর ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেজপাতা খেলে-

চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে : খুশকি রোধ ও চুল পড়া রোধ করতে তেজপাতা অত্যন্ত কার্যকর। এতে থাকা ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। তেজপাতা মিশ্রিত পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তা নারকেলের তেলের সঙ্গে মাথায় শ্যাম্পুর মতো ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়। এতে আপনার মাথার খুশকি দূর হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে : গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে অন্তত দু’বার তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে। ফলে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

হজমশক্তি বাড়ায় : হজমশক্তি দুর্বল হলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়। এ থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতা খেতে পারেন। এটি দেহের অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : তেজপাতায় রয়েছে প্রচুর রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এসব উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। এটি দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ব্যথা উপশম করে : প্রদাহ নিরাময়ে তেজপাতার ভূমিকা অনন্য। এছাড়া যে কোনো ধরণের মাথা ব্যথা, হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা উপশমেও তেজপাতা কার্যকর।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : গবেষকরা বলছেন, তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গবেষণা অনুযায়ি, তেজপাতা স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।

ক্ষত নিরাময় করে : তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।

কাঁশি উপশম করে : ঠাণ্ডাজনিত কাঁশি ও জ্বর সারাতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। এটি ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে চমৎকারভাবে কাজ করে। নিয়মিত ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। সেই পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। পরিষ্কার কাপড় ওই পানিতে ভিজিয়ে গলা-বুক মুছে ফেলুন। উপকার পাবেন।

কিডনির পাথর দূর করে : গবেষণায় দেখা গেছে, তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।

সতর্কতা : পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণাগুণ সমৃদ্ধ হলেও তেজপাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও প্রসূতি মায়েদের ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে তেজপাতা খাওয়া পরিহার করা উচিত। এছাড়া সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা না খাওয়ায় উত্তম।

তথ্যসূত্র : ডাবর ইন্ডিয়া, ই-মেডিকেল বিডি ও উইকিপিডিয়া

এবি/এসএন/আরএ

২৭ অক্টোবর ২০২১, ০৮:১৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।