স্বাদ আর ঘ্রাণে নয়, গুণেও সেরা ধনিয়া পাতা
মসলাদার যে কোনো খাবারের স্বাদ বাড়াতে ধনিয়া পাতার জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ধনিয়া পাতার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। ঝালমুড়ি, আমড়া মাখা, পেয়ারা মাখাসহ বিভিন্ন ভর্তা তৈরি ও মসলাদার খাবারে ধনিয়া পাতা না থাকলে যেন চলেই না। শুধু স্বাদ ও সুগন্ধ তৈরির জন্যই এটি জনপ্রিয় নয়, বরং এটি গুণে মানেও সেরা। ধনিয়া পাতায় রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও ভেষজ গুণাগুণ।
প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কি আছে ধনে পাতায়-
পরিচয়
ধনিয়া পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativum। এটি একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে ধনিয়া পাতা বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া এটি বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই ভালো জন্মে। বাংলাদেশে নানা ধরণের চাটনি প্রস্তুত ও মেক্সিকান সালসাতে ধনিয়া পাতা ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে সালাদ হিসেবেও ধনিয়া পাতার ব্যবহার সুপ্রাচীন।
পুষ্টিগুণ
কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’ ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ধনিয়া পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফরফরাস, ভিটামিন বি, জিংক, ক্যালসিয়াম, ক্লোরিন। এছাড়া এতে রয়েছে লিনোলেয়িক এসিড, লিনোলেনিক এসিড, স্টিয়ারিক এসিড, পামিটিক এসিড ইত্যাদি। রয়েছে প্রচুর আঁশ।
উপকারিতা
পুষ্টিবিদ ও গবেষকদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ধনিয়া পাতা খেলে-
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে : নিয়মিত ধনিয়া পাতা খেলে দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ওজন কমে। এটা দেহের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : যারা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা নিয়মিত ধনিয়া পাতা খেতে পারেন। কারণ এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
আলসার নিরাময় করে : ধনিয়া পাতায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি সেপটিক উপাদান, যা মুখের আলসার দুর করে।
চোখের সুরক্ষা দেয় : এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। এসব উপাদান চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : ধনিয়া পাতায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এতে আছে বিটা ক্যারোটিন, ম্যাঙ্গানিজ। এসব উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
বাত ব্যথা নিরাময় : যারা দীর্ঘদিনের বাত ব্যথা এবং হাঁড় ও জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন, তারা ধনিয়া পাতা খেতে পারেন। ব্যথা উপশম হবে।
অ্যালঝেইমার রোগ নিরাময় : ধনিয়া পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন কে, যা অ্যালঝেইমার রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী।
ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে : এতে রয়েছে এসেনশিয়াল অয়েল লিনোলেয়িক এবং লিনোলিক অ্যাসিড। এসব উপাদান ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া রোধ করে। সেই সঙ্গে অ্যালার্জির সমস্যা দূর করে।
সতর্কতা
তবে গবেষণা বলছে, ধনিয়া পাতা বেশি পরিমাণে খেলে যৌনশক্তি অনেক সময় কমে যেতে পারে। এছাড়া এটি শ্বাসকষ্টের জন্যও অনেক সময় দায়ী হয়ে থাকে। তাই পরিমিত আকারে ধনিয়া পাতা খেতে পারেন।
তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, এই সময় ম্যাগাজিন ও উইকিপিডিয়া।
এবি/এসএন/আরএ