• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মিষ্টি চিনি, ভয়ঙ্কর ক্ষতি!

মিষ্টি চিনি, ভয়ঙ্কর ক্ষতি!

চিনি (প্রতিকী ছবি)

ফিচার ডেস্ক

মিষ্টি পছন্দ নয়, এমন মানুষ পাওয়া ভার। মৌসুমী খেজুর গুঁড় কিংবা চিনি, বাঙালির খাদ্য হিসেবে মিষ্টি যেন সবার আগে। আবার এমন মানুষও আছেন, যারা মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার ছাড়া খাওয়া-দাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না। তবে, স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই ধীরে ধীরে চিনি খাওয়ার অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসছেন। মিষ্টি, চকলেট কিংবা চিনি দিয়ে তৈরি খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে মানুষ নানা উপায় অবলম্বন করছেন। এটা আশার কথা। কারণ, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার পরিহার করা সুস্বাস্থ্যের প্রথম শর্ত।

সব মিষ্টিতেই কি চিনি থাকে?

আমরা মিষ্টি জাতীয় খাবারের নাম শুনতেই চিনি বা গুঁড় দিয়ে তৈরি খাবার বুঝি। কিন্তু বর্তমানে মিষ্টান্ন ঘনীভূত চিনি বা হাই ফ্রুকটোজ সিরাপ ও সুক্রোজের ব্যবহারের ছড়াছড়ি। সেই সঙ্গে কৃত্রিম চিনিও ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক। গবেষকেরা বলছেন, চিনি আমাদের স্বাদগ্রন্থিকে পুরোপুরি তৃপ্ত হওয়ার সংকেত দিতে পারে না, যেমনটা পারে লবণ।

লবণ বা নোনাজাতীয় খাবার একটু খাওয়ার পর আপনার স্বাদগ্রন্থি জানান দেবে যে, যথেষ্ট হয়ে গেছে, আর খাওয়া যাবে না। কিন্তু, চিনিযুক্ত খাবার আপনাকে সেই সংকেত দেবে না। কাজেই ঘোর বিপদ ছাড়া আর উপায় থাকে না।

চিনি বা মিষ্টি নিয়ে গবেষকদের কথা

আমেরিকান হার্ট ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত চিনি বা সাদা চিনি বারবার খাওয়ার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে, আর না খেলে আবার উইথড্রয়াল (কোনো খাবারে আসক্ত হয়ে পড়লে তা ছেড়ে দেওয়ার পর শারীরিক প্রতিক্রিয়া) উপসর্গ হয়! এই দুটোই নেশাদ্রব্যের মত আচরণ করে।

স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, হঠাৎ করে চিনি ছেড়ে দিতে চেষ্টা করলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের (মস্তিষ্ক থেকে নিঃসরিত এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ) অভাব দেখা দেয়। ফলে বিষণ্নতা, খিটখিটে মেজাজ ও মানুষ বদমেজাজি হয়ে পড়েন। ছোট শিশুরা মিষ্টি খাওয়ার ফলে কখনো অতিচঞ্চল হয়ে ওঠে। আবার কখনো ধীরস্থীরও হয়ে যায়।

চিনি কেন খাবেন না

সাদা চিনি হলো সুক্রোজ, যা ভাঙার প্রয়োজন হয় না। এটি দ্রুত রক্তে মিশে যায় এবং রক্তে চিনির পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। আমাদের মেটাবলিক সিস্টেম এই চিনিকে সামলে রাখতে পারে না। তাই সাদা চিনি খেলে কেবল ওজন এবং শর্করা বাড়ে। এছাড়া এটি দেহে চর্বির পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়।

মস্তিষ্কের ক্ষতি করে: অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে কমে যেতে পারে আপনার স্মরণশক্তি। এমনকি অ্যালঝেইমারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায় বহুগুন।

ডায়াবেটিস বেড়ে যায়: গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একজন মানুষ যদি দৈনিক চিনি থেকে ১৫০ ক্যালোরি গ্রহণ করে, তাহলে তার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

লিভারের ক্ষতি: অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে লিভারের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বির একটি আস্তরণ পড়ে। ফলে লিভারের আকৃতির পরিবর্তনসহ লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

রক্তচলাচলে বিঘ্ন ঘটায়: অতিরিক্ত চিনি মানবদেহে রক্তচলাচলে বাধা তৈরি করে। এটি ধমনির দেয়ালের পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে দেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

ফ্যাট তৈরি করে: অতিরিক্ত চিনি খেলে দ্রুত তলপেট, চিবুক ও অন্যান্য জায়গায় ফ্যাট জমে যায়। দৈনিক বেশি বেশি চিনির কারণে দ্রুত মানব শরীর স্থুল হয়ে যায়।

ত্বকের সমস্যা: অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে আমাদের ত্বকে খুব দ্রুত বলিরেখা পড়তে শুরু করে। যারা বেশি বেশি চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার খান, তাদের অল্প বয়সেই বার্ধক্যের ছাপ চেহারায় ফুটে ওঠে।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, বিবিসি ও মেডিকেল নিউজ টুডে।

০৬ অক্টোবর ২০২২, ০১:৫৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।