• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সহজে চোখের যত্ন

সহজে চোখের যত্ন

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রযুক্তিভিত্তিক ডিভাইসগুলো মানুষের জীবনের মহামূল্যবান সময়ের বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছে। মোবাইল কিংবা কম্পিউটার, সবই যেন দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু, একবারও কি ভেবে দেখেছেন, এসব ডিভাইস মানব দেহে কি রকম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে? প্রযুক্তিপণ্য বা ডিভাইসগুলো মানুষের চোখের জন্য অত্যন্ত ঝুকির্পূণ হয়ে উঠেছে।

মানুষ যতক্ষণ জেগে থাকে, এর প্রায় সবটুকু সময়ই তার চোখ ক্রিয়াশীল। আর এই সময়ে বেশিরভাগ মানুষের চোখ বেশি ব্যস্ত থাকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিনে। যার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ও ক্ষতিকর।

স্বাস্থ্যবিষয়ক জনপ্রিয় ই-জার্নাল ওয়েব এমডি ও ভারতের টাইটান আই কেয়ার’য়ের ‘অপ্টোমেট্রি অ্যান্ড ট্রেইনিং’ বিভাগের প্রধান রামেশ পিল্লাই-এর বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ‘হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক পর্দায় তাকিয়ে থাকার মাত্রা বেড়ে গেলে চোখে শুষ্কতা ও খচখচে ভাব দেখা দেয়, দৃষ্টি ঘোলাটে হয়, থাকতে পারে মাথা ব্যথা। সেই সঙ্গে ব্যথা হতে পারে ঘাড়, পিঠ ও কাঁধে। এই সমস্যাকে ‘কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম’ বা ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেইন’ও বলা হয়। যা পরে বিভিন্ন বড় সমস্যা ডেকে আনে।’

চোখ ভালো রাখতে যা করবেন

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক ই-জার্নালগুলোতে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাই, চোখ ভালো রাখতে-

চোখের বিরতি দিন : একটানা লম্বা সময় বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। একটানা ডিভাইসের স্ক্রিনে চোখ রাখলে চোখের আদ্রতা ও পানি শুকিয়ে যায়। তাই প্রতি বিশ মিনিট পর ২০ ফিট দূরে কোনো কিছুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার অভ্যাস করুন।

চোখের পলক ফেলুন : বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের পলক ফেলার মাত্রা কমে যায়। এ কারণেই মূলত চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। পলক ফেলার মাধ্যমে চোখ আর্দ্রতা পায়, শুষ্কতা ও জ্বালাপোড়া কমে। তাই পলক ফেলার পরিমাণ বাড়ান নিজ চেষ্টায়।

ডিভাইসের ফন্ট বাড়ান : মোবাইল বা কম্পিউটারে কোনো কিছু পড়ার সময় সেগুলোর ‘ফন্ট’ বাড়িয়ে লেখা বড় করে নিতে পারেন। এতে ডিভাইসটি চোখের কাছে আনতে হবে না কিংবা ভালোভাবে দেখার জন্য চোখ কুঁচকে তাকাতে হবে না। এতে চোখের ওপর ধকল যেমন কমবে, তেমনি ডিভাইস থেকে দূরেও থাকাও যাবে।

চোখ সহায়ক পর্দা ব্যবহার করুন : বৈদ্যুতিক পর্দার ‘ব্রাইটনেস’, ‘রেজ্যুলেশন’, ‘কনট্রাস্ট’ এগুলোর মাত্রা পরিবর্তন করে তা চোখের জন্য সহায়ক করতে জানতে হবে। কড়া রোদে বৈদ্যুতিক পর্দা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন একবার হলেও ডিভাইসের স্ক্রিন পরিষ্কার করতে হবে, যাতে দেখা সহজ হয়।

ডিভাইসের স্ক্রিন থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন : মোবাইল ব্যবহারের সময় তা চোখের খুব কাছে থাকে। এতে চোখের যেমন ক্ষতি হয় বেশি, তেমনি মোবাইলের দিকে ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড়েও ব্যথা হয়। তাই দূর থেকে মোবাইলের পর্দা দেখার অভ্যাস করতে হবে। ঘাড় বাঁকা না করে মোবাইল চোখের সমান্তরালে তুলে ধরার অভ্যাস করতে হবে।

পুষ্টিকর খাবার খান : ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেইন’ কমানো জন্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। রাতে সময় মতো ঘুমাতে হবে এবং আট ঘণ্টা নির্ভেজাল ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। শাকসবজি, গাজর, পেঁপে, খেজুর ইত্যাদি ভিটামিন এ-এর উৎকৃষ্ট উৎস। যা চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

আরও যা যা করবেন

⇒ চোখের সমস্যা নিয়মিত হলে বিশেষজ্ঞের কাছে চোখ দেখান।

⇒ মাঝে মাঝে চোখ পিটপিট করা চোখের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। নিয়মিত চোখ পরিষ্কার রাখুন। প্রতি তিন-চার সেকেন্ডে একবার চোখের পাতা বন্ধ ও খোলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

⇒ চোখকে আরাম দিন। যেমন, দুই হাতের তালু ঘষে তাপ উৎপন্ন করে তা দুই চোখে ধরুন। এতে চোখ জ্বলা কমে যাবে এবং আরাম বোধ করবেন।

⇒ সূর্যের আলো চোখের ফ্রি চিকিৎসা দেয়। তবে প্রখর রোদ নয়। খুব সকালের এবং শেষ বিকেলের আলোয় চোখের যত্ন নিন।

⇒ ধূমপান চোখের জন্য ক্ষতিকর। তাই এটি ত্যাগ করুন।

⇒ অনেকে চোখে ঝাপসা দেখেন। পানির ঝাপটা নিয়ে এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। শুষ্ক অবস্থার কারণে সাধারণত এমনটা ঘটে।

⇒ যে কোনো আঘাত ও ধুলোবালি থেকে চোখের নিরাপত্তা দিতে গগলস ব্যবহার করা যেতে পারে।

⇒ কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও টেলিভিশনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখুন।

⇒ নিয়মিত ডিম খেলে দেহে লুটেনের সরবরাহ ঘটে। এসব উপাদান চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে।

⇒ সুযোগ পেলেই চোখে পানি দিন। মুখ ধোয়ার সময় চোখে বেশি বেশি পানি দিন। এতে চোখের ধুলো পরিষ্কার হবে।

⇒ চোখে মেকআপ ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। যদি নিয়েই থাকেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব ধুয়ে ফেলুন।

⇒ প্রচুর পালং শাক খান। এতে বহু ধরনের পুষ্টি উপাদান ও লুটেন রয়েছে। নানা সমস্যা দূর করবে পালং শাক।

 

তথ্যসূত্র: ওয়েব এমডি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।