গরমে শিশুর খাবার-দাবার
প্রতিকী ছবি
ঋতুচক্রের হিসেব অনুযায়ী দেশে এখন বর্ষাকাল। তবে বৃষ্টির দেখা নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গরম চলছে। গরমের সময় প্রাপ্তবয়স্কদেরই খাওয়া দাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হয়। একই ভাবে শিশুরাও গরমে ভারি খাবার খেতে চায় না। শিশুদের এই না চাওয়াটা অনেক বাবা-মা বুঝতে পারেন না। কিন্তু শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনাকে আরও সতর্ক ও সচেতন হতেই হবে।
এই গরমে শিশুর খাবার কেমন হবে, শিশুর খাদ্য তালিকায় কোন ধরণের খাবার রাখা উচিত হবে তা নিয়ে আমরা এই পর্বে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি।
গরমে শিশুর খাবার
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুন নাহারের বরাতে পুষ্টিবিষয়ক নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, শীতকালে শিশুর রুচি নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও, গরমের সময়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। বেশি গরমে শিশুরা খাবার খেতে চায় না। ফলে শিশুর দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা অপূর্ণ থেকে যায়। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় মা-বাবাও। তাই, গরমে শিশুর খাদ্যতালিকায় হালকা, পুষ্টিকর, টাটকা এবং তরল খাবার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
ঘরের খাবার দিন
পুষ্টিবিদ ও শিশুখাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর খাবার ঘরে তৈরি করাই ভালো। বাইরের প্যাকেটজাত খাবার ও বাইরে থেকে কেনা খাবার শিশুকে না খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। বাড়িতে হালকা স্যুপ তৈরি করুন। সাভাবিক ঠান্ডা সরবতও খাওয়াতে পারেন। তবে সেটি অবশ্যই ঘরে তৈরি করতে হবে।
দই
গরমে শিশুদের পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর পেটের সমস্যা দূর করতে গরমের সময় নিয়মিত অল্প পরিমাণে দই খাওয়াতে পারেন। এটি শিশুর হজমশক্তি বাড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি দই শিশুর দেহ ঠাণ্ডা রাখে। দইয়ের লাচ্ছি তৈরি করেও শিশুকে খাওয়াতে পারেন। তবে কোনো ভাবেই বাইরে থেকে কেনা লাচ্ছি শিশুকে খাওয়াবেন না।
ছাতুর শরবত
গরমে শিশুর শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ছাতুর শরবত দিতে পারেন। এটি শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও খেতে পারেন। এই শরবত শিশুর শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।
লেবুর শরবত
গরমে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়া উচিত। সেই সঙ্গে লেবুর শরবতও খাওয়ানো যেতে পারে। শিশুকে প্রতিদিন ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। গরমে লেবুর শরবত শিশুর ভীষণ উপকারী। এই পানীয় শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
পুদিনা
পুদিনার স্বাদ ও গন্ধ সতেজ অনুভূতি দিয়ে থাকে। এতে এক ধরনের শরীর শীতল করার বৈশিষ্ট্য আছে। তাই, গরমে শিশুর খাবারে পরিমিত পুদিনা পাতা যোগ করুন। এ ছাড়া পুদিনা পাতার চাটনি ও পুদিনা পাতার শরবত শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
খাবার হবে যেমন
রুটিন মেনে চলা: গরমে সঠিক পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা বজায় রাখার লক্ষ্যে সঠিক সময় মেনে শিশুকে খেতে দিতে হবে। একই নিয়মে শিশুকে প্রতিদিন খাওয়ান। নাস্তা, সকালের খাবার, দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা ও রাতের খাবারের একটি রুটিন তৈরি করুন। তবে গরমের সময় প্রতিবেলার খাবারে তরল খাবার বেশি রাখুন।
হজমযোগ্য খাবার দিন: শিশুরা প্রচুর ছোটাছুটি ও খেলাধুলা করে সারাদিন। ফলে অতিরিক্ত শারীরিক শ্রমের পর ভারি খাবার খেলে শিশুদের হজমে সমস্যা হয়। গরমে অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার শিশুদের দেয়া উচিত নয়। চিপস, বাদাম, পাপড়, চানাচুর, চিকেন ফ্রাইসহ এধরণের খাবার শিশুদের দিবেন না। সহজে হজম হয় এমন খাবার দিন।
দুধের বিকল্প খাবার: শিশুদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি খাবার দুধ। ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের বড় একটি উৎস এই দুধ। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে শিশুকে জোর করে দুধ খাওয়ালে তা হজমক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। তাই, গরমে শিশুকে দুধের বিকল্প খাবার দিন। এক্ষেত্রে ঘরে তৈরি লাচ্ছি, মাঠা, মিল্কশেক ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।
তাজা খাবার: শিশুদের সবসময় তাজা ও টাটকা খাবার দিন। কেননা গরমের সময় ডায়রিয়া ও ফুড পয়জনিং ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। তাই, শিশুকে সতেজ খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
মৌসুমি ফল খাওয়ান: গরমে শিশুর দেহের পানির চাহিদা পূরণে তরতাজা মৌসুমি ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। ফলে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলের শিশুর দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, এনডিটিভি ও প্যারেন্ট সার্কেল ওয়েব জার্নাল।