• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন হোক সকালের অভ্যাস

সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন হোক সকালের অভ্যাস

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিক গোছালো জীবনাচার। সঠিক ও সময়োপযোগী অভ্যাস আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। আপনি কি জানেন, সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস খুবই উপকারী একটি অভ্যাস? সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে দেহ-মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। এছাড়া আপনি কাজ করার জন্য দিনটি অনেক বড় হিসেবেও পাবেন। বিখ্যাত মনীষী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন বলে গেছেন, ‘ভোরের মুখে সোনা রঙ থাকে। যারা রোজ সকালে ওঠেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন এর উপকারিতা।’

গবেষকরা বলছেন, সকালে মানুষের দিন শুরু হয়। কর্মব্যস্ততার আগে সকালটা যদি আমরা নিজেদের মতো করে সুন্দর ভাবে কাটাতে পারি তাহলে পুরো দিনটি হয়তো সুন্দর হয়ে যায়। তাই, সকালের ঘুম, নাস্তা আর শরীরচর্চা সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সকালে ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা

বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার নানা উপকারি দিক তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা গবেষকদের বরাতে বলা হয়েছে, সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে কাজের জন্য সময় বেশি পাওয়া যায়। এ ছাড়া কাজের গতি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোনো ব্যক্তি ভোরে ওঠেন, তখন অন্যদের তুলনায় তিনি বেশি সক্রিয় থাকেন।

সকালে উঠলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যখন কেউ সকালে ওঠেন, তখন কাজের তাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যায়।

সকালে ঘুম থেকে ওঠা মানে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া। এতে ঘুম ভালো হয়। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও অভ্যাস হয়ে গেলে দেহঘড়ি ঘুমের নতুন সময় ও সকালে ওঠার বিষয়টি মানিয়ে নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রমাণ করেছেন, যারা সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন, তারা দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক ভালো ফলাফল করে।

সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা

একাধিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সকালের শরীরচর্চা জীবনে উন্নতি আনে। এই অভ্যাস আপনার জীবনযাত্রাকে সুন্দর করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তবে শরীরচর্চা অবশ্যই নিয়মমাফিক হতে হবে। শরীরচর্চায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

পেশী শক্তিশালী হয়: সকালে শরীরচর্চা করলে পেশী শক্তিশালী হয়। যা গবেষণায় প্রমাণিত। এছাড়া সকালে শরীরচর্চা করলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা শরীরে বেশি উৎপন্ন হয়, যা পুরুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সকালে শরীরচর্চা করলে দেহের পেশীগুলি সতেজ হয়ে যায়। ফলে যে কোন কাজে সহজে মন বসে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়: সকালের শরীরচর্চা মানসিক স্ট্রেস দূর করে। আজকাল মানুষ মানসিক চাপ নিয়ে খুব সমস্যায় ভুগছেন। যারা এমন সমস্যায় পড়েছেন, তারা নিয়মিত সকালে শরীরচর্চা করুন। এতে আপনার মানসিক অস্থিরতা দূর হবে।

ঘুমের সমস্যা দূর করে: যারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, তারা সকালে শরীরচর্চা করুন। নিয়মিত সকালের শরীরচর্চা আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর করে সারাদিন শরীর সতেজ রাখে। কিন্তু সকালে শরীরচর্চার ফলে দেহে একটি ঘুমের টাইম সেট হয়ে যায়। ফলে রাতের ঘুম নিবিড় হয়।

ওজন কমায়: শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। স্থুলতার কারণে শরীরে জমে থাকা বাড়তি চর্বি দূর করে সকালের শরীরচর্চা। ফলে খুব দ্রুত ওজন কমে যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে সকালে শরীরচর্চার বিকল্প নেই।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে: আপনি জানেন, ডায়াবেটিসের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা সকালে অবশ্যই শরীরচর্চা করবেন। এই অভ্যাসটি আপনার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে আনবে সহজেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সকালের শরীরচর্চা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে উপকারী, যা দেহে রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

সকালের নাস্তা কেমন হবে

শরীরচর্চার পাশাপাশি সকালের নাস্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন খাবার দিয়ে দিনটি শুরু করুন, যেন দেহে শক্তি, সতেজতা ও প্রশান্তি আসে। খাদ্য ও পুষ্টি গবেষকরা এ নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সকালের নাস্তায় রাখুন-

ফলমূল: সকালের নাস্তার জন্য সব চাইতে ভালো খাবার হচ্ছে ফলমূল। কলা, আপেল, কমলা, স্ট্রবেরি, আঙুর ইত্যাদি ফল রাখুন। তবে মৌসুমি ফলমূল দিয়ে সকালের নাস্তা করা সব চেয়ে ভালো। চাইলে ফলমূল দিয়ে সালাদ করেও খেতে পারেন।

ডিম: ডিম হলো ‘সুপারফুড’। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেলস। প্রোটিনের সব চেয়ে উত্তম উৎস ‘ডিম’। এতে ক্যালোরিও থাকে পর্যাপ্ত। তাই, সকালের নাস্তায় অবশ্যই ডিম রাখুন।

সালাদ: সালাদ মানেই শসা, টমেটো এবং গাজরের মিশ্রণ নয়। সেদ্ধ ডিম কুচি, সবজি কুচি, ভিনেগার, কাঁচা ছোলাবুট দিয়েও সালাদ বানাতে পারেন। এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি খাবার।

সবজি খিচুড়ি: যারা ভাত জাতীয় খাবার খেয়ে অভ্যস্ত তারা ভাতের বদলে সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন সবজি খিচুড়ি। এতে চালের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে সবজি বেশি দিতে হবে। এই খাবারটি আপনার দিনের শুরু একেবারেই পাল্টে দিতে পারে।

দই: সকালের নাস্তায় রাখতে পারেন দই। তবে সেটি টক দই হলে আরও ভালো। দই দেহের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী একটি খাবার। এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে কাজ করে।

রুটি: সকালের নাস্তার জন্য বেশ ভালো একটি খাবার হচ্ছে আটার রুটি। বিশেষ করে যারা ভারী খাবার পছন্দ করেন তাদের জন্য রুটি বেশ উপযোগী। সকালে পাউরুটি বা ভাত খাবার চাইতে আটার রুটি সবজি ভাজি বা ডিম অথবা ঝোলের তরকারি কিংবা কলা দিয়ে খেতে পারেন।

ওটস: ওটসে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার বা খাদ্যআঁশ। এই খাবারটি ওজন কমাতে এবং দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। সকালের খাবারে তাই ওটস রাখতেই পারেন।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, জেন হ্যাবিটস ও জি নিউজ।

২৫ জুলাই ২০২২, ০৮:৩৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।