• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মহিমান্বিত গর্ভকাল: ভালো-মন্দ সব মনে রাখে নারী

মহিমান্বিত গর্ভকাল: ভালো-মন্দ সব মনে রাখে নারী

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

নারী যেন এক শান্ত শীতল অভয়াশ্রম। নারীর জীবন্ত শরীরের ভেতরে তিলে তিলে বেড়ে ওঠে নতুন প্রাণ। নিজের গর্ভে ধারণ করা শিশু নিজের দুই হাত দিয়ে স্পর্শ করার অনুভূতি কেবল নারীই বুঝে। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে, সন্তানের চোখ, নাক, কান, মাথা, পিঠে হাত বুলিয়ে যে প্রশান্তির পরশ পাওয়া যায়, তা কেবল নারীই উপলব্ধি করতে পারে।

গর্ভধারণ নারীকে করেছে মহিমান্বিত। সন্তান ধারণ করা ও সন্তান জন্ম দান করা পূণ্যের কাজও বটে। সৃষ্টিকর্তাও নারীকে মর্যাদা দিয়েছেন গর্ভধারণ করার ফল স্বরুপ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েও একজন নারী মা হয়ে ওঠেন। হাড় ভাঙা বেদনায় শিরা ছেঁড়া কষ্টের মধ্যদিয়েই নারী হয়ে ওঠেন মমতাময়ী জননী।

কিন্তু গর্ভকালীন অনেক নারীই বঞ্চনা, দুর্বব্যবহার ও পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন। প্রথম প্রেগন্যান্সি একজন নারীর কাছে ভয়ের অভিজ্ঞতা হয়ে আসে। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীর প্রেগন্যান্সিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। বাড়তি যত্ন ও সহমর্মিতা প্রকাশের নজিরও কম।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নালে বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় একজন নারীর দেহে ও মানসিকতায় বেশকিছু পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন নারীর মানসিকতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। অনেকে আবার গর্ভপরবর্তি মানসিক পরিবর্তনের জটিলতায়ও ভুগে থাকেন। তবে নারীর জন্য সবচেয়ে কষ্টের সময় গর্ভকালীন সময়।

গবেষকরা বলছেন, গর্ভকালীন গর্ভবতী নারীর সঙ্গে কে কি ধরণের আচরণ করে, তা একজন গর্ভবতী নারী আজীবন মনে রাখেন। সন্তান পেটে আসার পর ওই গর্ভবতী মায়ের সঙ্গে কে কি আচরণ করেছে, তাকে কে কতটুকু যত্ন নিয়েছে, কে কতুটুক লাঞ্ছনা দিয়েছে সবই একজন গর্ভবতী নারী মনে রাখেন।

কারণ গর্ভকালীন সময়ের অনুভূতি প্রত্যেকটি নারীর জন্য এক চরম আতঙ্কের সময়। এই সময়ে প্রিয় মানুষদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা একজন গর্ভবতী মায়ের প্রশান্তির কারণ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় নারীর দেহের প্রাথমিক পরিবর্তন

♦ গর্ভাবস্থায় নারীর সাভাবিক ওজন বেড়ে যায়, যাকে ‘স্ট্রেচ মার্ক’ বলা হয়।
♦ ত্বক ফেটে ত্বকের ওপর লম্বা সাদা দাগ হয়।
♦ গর্ভবতী নারীর পেট, নিতম্ব, ঊরু, স্তনেও ‘স্ট্রেস মার্ক’ দেখা দেয়।

গর্ভবতী নারীর মনের ওপর যে প্রভাব পড়ে

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গর্ভবতী নারীর মানসিকতার ওপর ছোট ছোট ঘটনাও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। গর্ভবতীর মনের ওপর প্রবল চাপও তৈরি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সালমা পারভিনের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, গর্ভকালীন উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা, মন খারাপ, রাগ, ঘনঘন মেজাজ বদলের মতো অনেক কিছুই ঘটে নারীর জীবনে।

কেউ কেউ আবার আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এই ধরণের নারীরা অল্পতেই কেঁদে পেলেন। এরা দ্রুত বিরক্ত হন, রেগে যান এবং এদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

গবেষকরা বলছেন, গর্ভবতী নারীর আবেগে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। কারণ কিছুই আর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না বলে সে ভাবতে থাকে। কোনদিন শরীর ভাল থাকে আবার পরদিন দেখা গেল শরীর খারাপ। শরীরের এই ওঠানামা অবস্থা গর্ভবতীর মানসিকতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। গর্ভবতী নারীর উদ্বেগ বেড়ে যায়।

গর্ভকালীন নারীর মানসিক ভাবনা

প্রসূতিবিদ্যা গবেষকরা বলছেন, গর্ভকালীন নয় মাসে নারীর মনে নানা ধরণের পরিবর্তন দেখা দেয়। এই সময়ে নারীর তার সঙ্গে ঘটা সকল ঘটনা মনে রাখার চেষ্টা করেন। শিশু গর্ভে থাকাকালীন একজন মায়ের সঙ্গে তার আত্মীয়-স্বজন, স্বামী, শাশুড়ি, পিতা-মাতাসহ অন্যান্যরা কেমন আচরণ করেছে, তা গর্ভবতী নারী মনে রাখেন। কাজেই গর্ভবতী নারীকে সবার আগে প্রাধান্য দেয়া উচিত।

গর্ভবর্তী নারীকে প্রাধান্য দিতে হবে

গবেষকরা বলছেন, গর্ভবতী নারীর সুস্থতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর শিশুর মেধা ও মানসিক বিকাশ নির্ভর করে। কাজেই গর্ভবতী নারীর সঙ্গে আপনার আচরণ হওয়া উচিত উন্নত ও উত্তম। গর্ভবতী নারীর মনের অবস্থা সকলের বুঝা উচিত। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে গর্ভবতী নারী কষ্ট পান।

একই ভাবে-

⇒ গর্ভবতী নারীর খাবার ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
⇒ গর্ভবতীর সাভাবিক কাজে-কর্মে সহায়তা দেয়া উচিত।
⇒ নারীর কাজের মূল্যায়ণ ও সকল কাজে তার মতামত গ্রহণ করতে হবে।
⇒ গর্ভবতী নারী যেন কোনো ভাবেই দুশ্চিন্তায় না ভুগেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
⇒ ভয়, ভীতি, উৎকণ্ঠা ও লোমহর্ষক পরিস্থিতি থেকে গর্ভবতী নারীকে দূরে রাখতে হবে।
⇒ গর্ভকালীন নারী দেহে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এ নিয়ে নারীর মাঝে হীনমন্যতা তৈরি হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নারীকে বেশি বেশি সঙ্গ দিতে হবে। পাশাপাশি তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে তার সঙ্গে খোশ সময় অতিবাহিত করা উচিত।
⇒পরিবারের সকলের উচিত গর্ভবতী নারীকে পরিবারের সবার আগে প্রাধান্য দেয়া। গর্ভকালীন একজন নারীর মানসিক পরিবর্তন খুবই কমন একটি বিষয়। কাজেই এই পরিবর্তনকে সাভাবিকভাবে নিতে হবে।
⇒গর্ভবতী নারীর পাশে, নারীর সকল কাজে ও গর্ভবতীর সব কাজে তার স্বামীকে সার্বক্ষনিক পাশে থাকতে হবে। গর্ভবতী নারী ও অনাগত সুস্থ সন্তানের জন্য যা অত্যন্ত প্রয়োজন।

০২ জুলাই ২০২২, ০৩:৫৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।