পুষ্টিকর ফল কামরাঙ্গা, বেশি খেলেই ক্ষতি
প্রতিকী ছবি
গ্রীষ্মকালীন ফল কামরাঙ্গা। এখন দেশের সব এলাকায় এই ফল পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা কামরাঙ্গা টক হলেও পাকার পর তা বেশ মিষ্টি। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের কামরাঙ্গা পাওয়া যায়। এই ফলটির উৎপত্তি চীনে হলেও তা এখন বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কামরাঙ্গার এখন ভরা মৌসুম। দেশের হাটে-বাজারে ও শহরের অলিগলিতে কামরাঙ্গা বিক্রি হচ্ছে। দামে সস্তা ও পুষ্টিতে ভরপুর একটি ফল এই ‘কামরাঙ্গা’। এই ফলের উপকারী দিক যেমন রয়েছে, তেমনি এর বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এসব বিষয়ে আমাদের জানা থাকা জরুরি।
প্রিয় পাঠক আসুন কামরাঙ্গার উপকারী ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিই-
পরিচয়
কামরাঙ্গার বৈজ্ঞানিক নাম Averrhoa carambola Linn। এই ফলের ইংরেজি নাম Chinese gooseberry বা Carambola। এই ফলটির উৎপত্তিস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল।
কি আছে কামরাঙ্গায়
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কামরাঙ্গায় রয়েছে নানা ধরণের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি। এছাড়া এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা, আঁশসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি খনিজ উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম কামরাঙ্গায় রয়েছে-
জলীয় অংশ- ৮৮.৬ শতাংশ,
আঁশ- ০.৭ গ্রাম,
খনিজ লবণ- ০.৪ গ্রাম,
প্রোটিন- ০.৭৫ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ৯.৫ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ১১.০ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ১.২ মিলিগ্রাম এবং
খাদ্যশক্তি- ৫০ কিলোক্যালরি।
কামরাঙ্গার উপকারিতা
সংক্রমণ রোধ করে: সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশি ও জ্বর নিরাময়ে কামরাঙ্গা বেশ কার্যকরী একটি ফল। কারণ এই ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি।
ব্যথা দূর করে: যেকোনও ধরণের ব্যথা নিরাময়ে কামরাঙ্গার জুড়ি মেলা ভার। কামরাঙ্গায় থাকা খনিজ উপাদান ব্যথা উপশমে কার্যকরী।
আমাশয় ও পেটের ব্যথা নিরাময়: অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে রক্ত আমাশয়ে ভুগে থাকেন। তাদের জন্য কামরাঙ্গা হতে পারে প্রাকৃতিক ঔষধ। কামরাঙ্গার জুস অথবা পাতা রস করে খেলে উপকার পেতে পারেন।
কফ দূর করে: বয়স বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে অনেকের বুকে কফ জমে যায়। এই সমস্যা দূর করতে কামরাঙ্গা খান। কারণ এই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং খনিজ উপাদান। যা আপনার খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করবে।
রক্ত জমাটে বাধা: কচি কামরাঙ্গা ও এর পাতায় রয়েছে ট্যানিন। যা রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
খাদ্যনালীর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: কামরাঙ্গায় রয়েছে প্রচুর অ্যালজিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড খাদ্যনালীর ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
রক্তক্ষরন বন্ধ করে: পাকা কামরাঙ্গা খেলে যেকোনও ধরণের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়।
বমি থেকে মুক্তি: যাদের কারণে অকারণে বমি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তারা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কামরাঙ্গা খান। কামরাঙ্গা অথবা এর পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি পান করলে বমি বন্ধ হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে কামরাঙ্গা খুবই কার্যকরী। কাজেই ডায়াবেটিস আক্রান্তরা কামরাঙ্গা খাওয়ার অভ্যাস করলে, নিজেই নিজের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
ত্বক মসৃণ করে: কামরাঙ্গায় থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী দুটি উপাদান। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময়: কামরাঙ্গার পাতা ও ডগা গুঁড়া করে খেলে জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় হয়।
কামরাঙ্গা কার জন্য নিরাপদ নয়
কামরাঙ্গা যতই সুস্বাদু হোক না কেন এতে রয়েছে এমন দুটি ক্ষতিকর উপাদান, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এমনকি অতিরিক্ত কামরাঙ্গা খেলে মৃত্যুও হতে পারে।
কামরাঙ্গা খাওয়ার পর যদি কারোর মধ্যে হেচকি, বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরানো কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে মোটেই দেরি না করে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হোন। এই ফলটি কিডনী রোগীদের জন্য ভয়ঙ্কর একটি ফল। কারণ এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অক্সালিক অ্যাসিড, যা দুর্বল কিডনীর জন্য ক্ষতিকর।
গবেষকরা বলছেন, গর্ভবস্থায় মায়েদের কামরাঙ্গা না খাওয়ায় ভালো। কারণ এই ফল গর্ভবতীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র- অ্যালামি ডট কম, এনজেড হিসটোরি ডট কম ডট এনজেড এবং উইকিপিডিয়া।
এবি/এসএন