• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কোষ্ঠকাঠিন্য মাথা ব্যথা নিরাময়ে অনন্য ‘ক্যাথাপাটা’ শাক

কোষ্ঠকাঠিন্য মাথা ব্যথা নিরাময়ে অনন্য ‘ক্যাথাপাটা’ শাক

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সুস্থ শরীরের জন্য সতেজ শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার বিকল্প নেই। আমাদের মাঝে একটি ধারণা আছে যে, ভালো শাক-সবজি ও ফল মানেই দামি কিছু। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বরং সতেজ ও টাটকা শাক-সবজি ও ফল আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়। এগুলোর দামও সস্তা। প্রাকৃতি সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বাংলাদেশের মাঠে-প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান। এসব খাদ্য উপাদান খাবার হিসেবে যেমন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, তেমনি ভেষজগুণেও অনন্য। তেমনই একটি উপাদান ‘ক্যাথাপাটা শাক’।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক ক্যাথাপাটা শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা কতটুকু।

পরিচয়

ক্যাথাপাটা শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Alternanthera sessilis। এটি Amaranthaceae পরিবারভুক্ত একটি ভেষজ উপাদান। শাক হিসেবে ক্যাথাপাটা খাওয়া হলেও এটির ভেষজ ব্যবহার সুপ্রাচীন। আমাদের দেশের ফসলি মাঠের জমির আইলে সারা বছর এই শাক জন্মে।

তবে আলু, বেগুন বা সবজি চাষ করা জমির আইলে এই শাক বেশি দেখা যায়। শীতকালে ক্যাথাপাটা শাক ভালো জন্মে। দেশে কয়েক প্রজাতির ক্যাথাপাটা শাক রয়েছে। অঞ্চল ভেদে এটির নামও ভিন্ন ভিন্ন।

ওষুধিগুণ

আর্য়ুবেদ শাস্ত্রমতে, বিভিন্ন ভেষজ ওষুধের উপাদান তৈরিতে ক্যাথাপাটা দিয়ে চমকপ্রদ মিশ্রন তৈরি করা যায়। বিশেষকরে এশিয়া এবং আফ্রিকায় ভেষজ চিকিৎসায় ক্যাথাপাটা ব্যবহার করা হয়। পাকস্থলির রোগ নিরাময়, এসিডিটি, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, ব্রংকাইটিস, এজমা, আধকপালী মাথা ব্যথা, এমনকি হেপাটাইটিস রোগ নিরাময়েও এটি কার্যকরী। এ ছাড়া এটি ডায়াবেটিস ও দুগ্ধবতী মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য এই শাক খুব উপকারী।

পুষ্টিগুণ

হেলথ বেনিফিট টাইমস, ন্যাচার হোমিওপ্যাথি ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ক্যাথাপাটা শাকে রয়েছে কার্বোহাইড্র্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, সুগার, ভিটামিন সি-সহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাথাপাটা শাকে রয়েছে-

ক্যালরি- ৬০ শতাংশ,
ফ্যাট- ০.৮ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ১১.৮ গ্রাম,
ফাইবার বা খাদ্যআঁশ- ২.১ গ্রাম,
সুগার- ১১.৬ গ্রাম,
প্রোটিন- ৪.৭ গ্রাম,
ভিটামিন সি- ২৮ শতাংশ,
ক্যালসিয়াম- ১৫ শতাংশ,
আয়রন- ৯৩ শতাংশ।

উপকারিতা

হেলথ বেনিফিট টাইমস, ড্রাগস ডট কম, ন্যাচার হোমিওপ্যাথি ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ক্যাথাপাটা শাক-

ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে: ক্যাথাপাটা শাক ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রাকৃতিক ভাবে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে খেতে পারেন এই শাক।

দাঁত ভালো রাখে: দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। যা ক্যাথাপাটা শাকে পর্যাপ্ত রয়েছে।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে: যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তারা কয়েকদিন নিয়মিত এই শাক খেতে পারেন। এতে পেটের সমস্যা দূর হবে। কারণ এতে রয়েছে আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।

পাকস্থলি ভালো রাখে: এই শাকে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পাকস্থলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: ক্যাথাপাটা শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম। এসব উপাদান চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

রুচি বৃদ্ধি করে: মুখের অরুচিভাব দূর করতে ক্যাথাপাটা শাকের জুড়ি মেলা ভার। এই শাক জিহ্বায় জমে থাকা স্তর দূর করে। ফলে জিভে স্বাদ ফিরে আসে।

হজমশক্তি বাড়ায়: এই শাকে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ। এই উপাদানটি দেহের মেটাবলিজম ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধী নানা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ফলে নিয়মিত ক্যাথাপাটা শাক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

চোখের সুরক্ষায়: এই শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এসব উপাদান চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

রক্ত পরিশোধন করে: এই শাকের পাতা ও ডাঁটা রস করে নিয়মিত পান করলে রক্ত পরিশোধন হয়। এতে রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর উপাদান মলমূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র- হেলথ বেনিফিট টাইমস, ড্রাগস ডট কম, ন্যাচার হোমিওপ্যাথি ও উইকিপিডিয়া।

১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।