• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্বের কয়েকটি ‘ভয়ঙ্কর নয়নাভিরাম’ সড়ক

বিশ্বের কয়েকটি ‘ভয়ঙ্কর নয়নাভিরাম’ সড়ক

ছবি- আটলান্টিক রোড, নরওয়ে

ফিচার ডেস্ক

ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে? অবসর সময় পেলে অধিকাংশ মানুষই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। তবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন পছন্দের লোকেশন। তবে অনেকেই ভ্রমণের আনন্দ খুঁজে পান শুধু যাত্রা পথেই। যতক্ষন গাড়ি চলছে, ততক্ষণ তাদের মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়, এমন ভ্রমণপিপাসু মানুষও জগতে আছে। তা না হলে কি আর শিল্পী গাইতেন-‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো’।

আর তাই ‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য আমরা ভ্রমণবিষয়ক একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন তুলে ধরতে যাচ্ছি। বিশ্বের সেরা কয়েকটি ভয়ঙ্কর ও অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ সড়কের গল্প নিয়ে আমাদের আজকের পর্ব। চলুন দেখে নেয়া যাক-

স্কার্দু রোড, পাকিস্তান: বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর একটি মহাসড়ক স্কার্দু রোড। পাকিস্তানে এই সড়কটির অবস্থান। দেশটির বালতিস্তানের জিলজিত শহর থেকে বিপজ্জনক পাহাড়ি পথটির দৈর্ঘ্য ১০৪ মাইল। সিন্ধু নদীর পাশেই কারাকোরাম হাইওয়ে থেকে এই সড়কটি শুরু হয়েছে। ১৯৮২ সালে চীনা প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় দুর্গম পাহাড়ি এই সড়কটি নির্মাণ করে পাকিস্তান। সড়কটি ভারত অধিকৃত লাদাখের কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে।

তিয়েনআনমেন মাউন্টেন রোড, চীন : চীনের আরেকটি দুর্গম পাহাড়ি সড়কের নাম তিয়েনআনমেন মাউন্টেন রোড। ৯৯টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে এই সড়কে। প্রত্যেকটি বাঁক অতিক্রম করার সময় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে হয়। এই রোডে চলতে গেলে চোখে পড়বে কথিত ‘স্বগের দুয়ার’। পাহাড়ের একটি বিশাল অংশ প্রাকৃতিক কারণে ভেঙে পড়েছে, আর এরপর থেকেই এই ভেঙে পড়া ফাঁকা জায়গাকে চীনারা স্বর্গের দরজা বলে মনে করে আসছে।

সেন্ট গথার্দ রোড, সুইজারল্যান্ড : হিমালয় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। বরফে ঢাকা হিমালয় এশিয়ার গর্ব। কিন্তু ইউরোপের গর্ব আল্পর্স। বিশেষ করে বরফে ঢাকা সফেদ পবর্তমালা এই ‘আল্পস’। আর এই আল্পসের বুক চিরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছে সুইজারল্যান্ড। সড়কটির নাম দেয়া হয়েছে সেন্ট গথার্দ রোড। এই সড়কটি বরফের কারণে খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠে। অসাবধান হলেই এখানে ঘোর বিপদ।

হানা হাইওয়ে, হাওয়াই : অনেক গুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত হাওয়ায়। দেশটির এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যাওয়ার প্রধানতম বাহন হলো নৌযান। কিন্তু এখানে ৬০টির বেশি দৃষ্টিনন্দন সেতু ও সড়ক নির্মিত হয়েছে। এই সব সড়ক ও সেতুগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করলেও, তাতে রয়েছে প্রাণহানীর ঝুঁকি। আপনি চাইলেই যেকোনও সময় এসব সেতু ও সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন না। বিশেষ করে যখন সমুদ্রে জোয়ার ও উত্তাল ঢেউ থাকে।

লেক থুন, সুইজারল্যান্ড : সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত এই সড়কটি দেশটির জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র থুন লেকের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে। যে কারণে সড়কটির নামও দেয়া হয়েছে থুন লেক রোড। সড়কটি ব্যবহার করে লেকের চারপাশ ঘুরে দেখার অনুভুতি অন্যরকম। এই সড়কে চলার সময় একদিকে নীল জলরাশি আরেকদিকে থাকবে পাহাড়ি ঢাল। তবে এই সড়কে আনমনা হয়ে চলতে গেলেই পড়তে পারেন বিপদে।

যোজি লা, ভারত : পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ ‘কাশ্মির’। আর এই কাশ্মির পেরিয়েই ভারত অধিকৃত লাদাখ। পাথর আর বরফে ঢাকা পবর্তাঞ্চল। এই অঞ্চলের যোগাযোগ্যের অন্যতম সড়কের নাম যোজি লা। এই সড়কটি পাথরের পাহাড় বেয়ে বেয়ে লাদাখ থেকে কাশ্মিরে এসে মিশেছে। সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ফুট উচুতে থাকা এই সড়কে পাহাড়ের পাথর ও বরফ ধসের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তবে ভ্রমণপিপাসুরা একটু ঝুঁকি নিয়ে এই সড়কে গেলে তাদের টাকা উসূল হবে নিশ্চিত।

আটলান্টিক রোড, নরওয়ে : কি ভাবছেন? আটলান্টিক সাগরের মাঝখানে সড়ক? নাম দেখে অবশ্য সেটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে আপনার জেনে রাখা দরকার, নরওয়ের জাতীয় পর্যটন রুটের অংশ হিসেবে আটলান্টিক মহাসাগরেই গড়ে তোলা হয়ে আটলান্টিক রোড। মহাসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সড়কটি সমুদ্রের দিকে ক্রমেই এগিয়ে গেছে।

গোয়াইলিয়াং টানেল, চীন : সড়ক ও সেতু নির্মাণের রেকর্ডের দিক থেকে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে চীন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পাহাড় পর্বতে সাজানো চীনে রয়েছে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন সড়ক ও সেতু। মূলত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এসব স্থাপনা তারা নির্মাণ করেছে। তবে চীনের গোয়াইলিয়াং টানেল কোনও ভাবেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য তৈরি হয়নি। ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ এই গিরিপথটি মাত্র ১৩ ফুট চওড়া। পাহাড়ের গা বেয়ে এঁেকবেঁকে চলেছে এই সড়কটি। এটাকে মূলত সুড়ঙ্গ সড়ক বলা হয়। কারণ অসংখ্য পাহাড়ের পেট চিরে এই সড়ক নির্মাণ করেছে চীন।

প্যাসেজ দ্যু গোয়া, ফ্রান্স : একবার ভাবুন তো, গাড়িতে করে ছুটে চলছেন। গুনগুনিয়ে হয়তো গানও করছেন। কিন্তু হঠাৎ আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তাল ঢেউ আপনার গাড়ির গতিমুখ ঘুরিয়ে দিল। কেমন লাগবে, ভেবেছেন? ভাবতেই গা শিউরে উঠছে, তাই না? এরকমই অ্যাডভেঞ্চারে ভরা একটি সড়কের নাম প্যাসেজ দ্যু গোয়া। ফ্রান্সে অবস্থিত সড়কটি আটলান্টিক সাগরের উপকূলে নোয়ামুতি দ্বীপে নির্মাণ করেছে ফরাসি সরকার। আটলান্টিকে জোয়ার ভাটার সময় এই সড়কটিতে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ এর আগে বহু যানবাহন এই রোড থেকে সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।

রোহতাং, হিমাচল, ভারত : ভারতের অন্যতম ভয়ঙ্কর আরেকটি সড়কের নাম রোহতাং সড়ক। এটি ভারতের হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত। এই সড়কটি পাথর ও বরফে ঢাকা থাকে বেশির ভাগ সময়। যে কারণে এই সড়কে চলাচল করতে গেলে খুব সতর্ক থাকতে হয়। সামান্য ভুলেই যানবাহন ছিটকে যেতে পারে সড়ক থেকে।

 

এবি/এসএন

১৬ জুলাই ২০২১, ০৬:৩৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।