• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যখন যেভাবে এলো আজকের পৃথিবী

যখন যেভাবে এলো আজকের পৃথিবী

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

পৃথিবী। প্রাণীকূলের এক নিরাপদ আবাসস্থল। সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে আয়তনে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ পৃথিবী। মনুষ্যবাহী এই গ্রহটি সূর্য থেকে প্রায় ১৫ কোটি কি.মি দূরে নিজ কক্ষপথে চলছে। সৌরজগতের কঠিন গ্রহ চারটি। তার মধ্যে পৃথিবী অন্যতম। আপনি কি জানেন, পৃথিবীর অন্য আরও নাম আছে। "বিশ্ব" বা "নীলগ্রহ" পৃথিবীরই আরেক নাম।

ভিন্ন ভাষায় পৃথিবী

ইংরেজিতে পৃথিবীকে বলা হয় আর্থ (ঊধৎঃয)। গ্রিক ভাষায় গাইয়া (Γαῖα) এবং লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম "টেরা (ঞবৎৎধ)। মানুষ ছাড়াও পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। গবেষকদের দাবি, ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এর ঠিক এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। গষেকদের ধারণা, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকবে।

পৃথিবী নিয়ে চমকপ্রদ কিছু তথ্য

→ পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত পানির মহাসাগর দ্বারা আবৃত।
→ সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
→ বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে ৩৬৫ দিনে বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
→ পৃথিবী নিজ অক্ষের ৬৬.১/২ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে।
→ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ। যা ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করে।
→ চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয়।
→ চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে।

যেভাবে পৃথিবী এলো

সৌরজগৎ সৃষ্টির মোটামুটি ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল এই পৃথিবী। গবেষকদের দাবি, প্রায় ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী নামের গ্রহটি আকৃতি পায়। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, এ সময় জুড়ে যায় গ্রহ দুটি। পৃথিবী নামক গ্রহের সঙ্গে চরম সংঘর্ষ হয়েছিল থিয়া নামে একটি গ্রহের। সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর। সংঘর্ষের জেরে থিয়া ও পৃথিবীর জুড়ে যায়, তৈরি হয় নতুন গ্রহ। সেই গ্রহটিতেই আমরা বাস করছি। তিনবার চন্দ্র অভিযানে পাওয়া চাঁদের মাটি এবং হাওয়াই অ্যারিজোনায় পাওয়া আগ্নেয়শিলা মিলিয়ে চমকে যান গবেষকরা।

আগ্নেয়গিরির উৎগিরণ ও জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ গ্যাসের অতিনির্গমনের (ঙঁঃমধংংরহম) ফলে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও সাগরসমূহ। গ্রহাণুপুঞ্জ, ক্ষুদ্র গ্রহ, ও ধুমকেতু থেকে আসা ঘনীভূত জল ও বরফের সম্মিলনে পৃথিবীর সাগরসমূহের উৎপত্তি হয়েছে। ফেইন্ট ইয়ং সান প্যারাডক্স মডেলে বলা হয়, যখন নব গঠিত সূর্যে বর্তমান সময়ের চেয়ে মাত্র ৭০% সৌর উজ্জ্বলতা ছিল তখন বায়ুমণ্ডলীয় "গ্রিনহাউজ গ্যাস" সাগরের পানি বরফ হওয়া থেকে বিরত রাখে।

পৃথিবী নিয়ে যেসব তথ্য জানা অজানা

পৃথিবী পুরোপুরি গোল নয়: আমাদের পৃথিবীকে সাধারণত গোল বলে বর্ণনা করা হয়, কিন্তু এটি আসলে পুরোপুরি গোলাকৃতির নয়। দুই মেরুর কাছে পৃথিবী কিছুটা চাপা, কাজেই আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে পৃথিবী আসলে উপ-বর্তুলাকার। আর সব গ্রহের মতোই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং নিজের অক্ষের উপর ঘূর্ণনের কারণে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাবে মেরু অঞ্চল কিছুটা চ্যাপ্টা, আর নিরক্ষীয় অঞ্চল কিছুটা চওড়া।

পৃথিবীর ৭০ ভাগ পানি: পৃথিবীতে পানি আছে কঠিন, তরল এবং বায়বীয়- এই তিনটি আকারে। এছাড়া বিশ্বের উপরিভাগের তিন চতুর্থাংশই পানিতে ঢাকা, যা আছে হিমবাহ, জলাভূমি, লেক, নদী, সাগর কিংবা মহাসাগরের আকারে। তবে বিশ্বের পানির ৯৭ ভাগই মহাসাগরের লবণাক্ত পানি।

বিশ্বের সর্বত্র মাধ্যাকর্ষণ সমান নয়: আমাদের পৃথিবী যেহেতু নিখুঁত গোলক আকৃতির নয় এবং এর ভরও যেহেতু সর্বত্র সমানভাবে বিস্তৃত নয়, তাই মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র এবং শক্তিরও তারতম্য আছে বিভিন্ন জায়গায়। যেমন, আমরা যখন বিষুবরেখা হতে মেরু অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হই, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তীব্রতা বাড়তে থাকে। তবে মানুষের পক্ষে এই শক্তির তারতম্য অনুভব করা সম্ভব নয়।

পৃথিবীতেই কেবলমাত্র টেকটনিক প্লেট সক্রিয়

পৃথিবী হচ্ছে একমাত্র গ্রহ যেখানে সক্রিয় টেকটনিক প্লেট বিদ্যমান। এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে পৃথিবীর ভুপৃষ্ঠ ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত গঠনের পেছনে এই প্লেটগুলোর ভূমিকা আছে। এগুলোর কারণেই ভূমিকম্প হয়, আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়।

পৃথিবীর রয়েছে সুরক্ষা ঢাল : পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড সূর্যের উচ্চমাত্রার শক্তি কণা থেকে সুরক্ষার জন্য একটি ঢাল হিসেবে কাজ করে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড বিস্তৃত পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে শুরু করে বহিসীমা পর্যন্ত, যেখানে এটি সৌর বাতাসের সংস্পর্শে আসে। পাশাপাশি এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড অনেক প্রাণীকে পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করে। আমাদেরকেও কম্পাসের মাধ্যমে দিকনির্ণয়ে সাহায্য করে এটি।

২১ মার্চ ২০২৪, ০১:১৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।