• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাচীণ সাগর যেভাবে হয়ে গেল মরুভূমি!

প্রাচীণ সাগর যেভাবে হয়ে গেল মরুভূমি!

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

উজবেকিস্তানে খাঁ খাঁ করা মরুর বুকে ছিল টলমলে জলরাশি। বহু শতাব্দী ধরেই উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের কৃষিতেও প্রাণ সঞ্চার করেছে একটি জলাধার। ভূ-বেষ্টিত এমন জলাধারকে লেক বা বাংলায় হৃদ বলা হয়। তবে এই লেকটির নাম ‘আরাল সাগর’। প্রায় ৬৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এক বিশাল হৃদকে আপনি সাগর বলতেও দ্বিধা করবেন না আশাকরি।

১৯৬০ সালের দিকে আরাল সাগর ছিল পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম হ্রদ। ইতিহাস বলছে, আরাল সাগরের বয়স প্রায় সাড়ে ৫ মিলিয়ন বছর। ১৯৭০ সালের পর থেকে দ্রুত আরাল সাগরের পানি শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ২০১৪ সালে হ্রদটির পূর্বাঞ্চলীয় বেসিনের পুরোটাই শুকিয়ে যায়। বর্তমানে আরাল সাগরের মাত্র ৬ শতাংশ অংশে সামান্য পানি আছে। পুরো আরাল সাগরটি এখন পানির অভাবে ‘আরালকুম মরুভূমি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আরাল সাগর কোথায়

কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ায় বিস্তৃত ছিলো এই হৃদ। ৬৭ হাজার বর্গ কি.মি. আয়তনের হ্রদটি ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৭০% শুকিয়ে গেছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো আরাল সাগর।

আরাল সাগরে যা ছিল

এই হৃদে একসময় মানুষ প্রচুর মাছ শিকার করত। উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের কৃষিতে এই হৃদের ব্যাপক অবদান ছিল। হৃদের পানি বাষ্পিভূত হওয়ায় ওই সব অঞ্চলে ভালো বৃষ্টিপাত হতো। ফলে প্রচুর ফসল ফলতো। জেলেরা আরাল সাগরে নৌকা ও জেটে চেপে মাছ শিকার করত। এখন তার সবই স্মৃতি।

আরাল সাগর শুকিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে

সাগরটি শুকিয়ে যাওয়ার পেছনের রয়েছে তৎকালীন সোভিয়েত শাসন। ১৯১৮ সালে গড়ে তোলা সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলা শিল্প আরাল সাগরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সোভিয়েত সরকার তুলা উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রকল্প হাতে নেয়। আরাল সাগর বা আরাল হৃদের পানির উৎস সির দরিয়া এবং আমু দরিয়া নদীর পানি সরিয়ে নেয়া হয়। তুলা চাষের জন্য দুই নদীর পানি সরিয়ে নিলে ক্রমেই শুকিয়ে যেতে শুরু করে আরাল সাগর।

একটা সময় আরাল সাগরে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বাড়তে থাকে। ফলে হৃদের মাছ ও জীববৈচিত্র অল্প দিনেই ধ্বংস হয়ে যায়। আর এভাবেই হারিয়ে যায় প্রাচীণ আরাল সাগরের উত্তাল জলধারার কুলকুল তরঙ্গ।

তবে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে আরাল সাগর নব্য রাষ্ট্র কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্তানের অধীনে চলে আসে। কিন্তু ততদিনে আরাল সাগরে মাত্র ১০ শতাংশ পানি অবশিষ্ট ছিল। তাই দুই দেশের নেতারা একত্রিত হন। তারা বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নেন। লম্বা খাল খনন করে দক্ষিণে সাগর থেকে পানি আনার প্রচেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ঐক্যমতের অভাবে পুরো প্রকল্প বাতিল হয়।

২০ মার্চ ২০২৪, ০১:২২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।