• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

চৌকস গোয়েন্দাদের নিভৃত ভবনের গল্প

চৌকস গোয়েন্দাদের নিভৃত ভবনের গল্প

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

পৃথিবী জুড়ে গোয়েন্দাগিরিতে শীর্ষে আমেরিকা। সিআইএ, এফবিআইয়ের মতো বড় বড় গোয়েন্দা বাহিনী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আমরা তো এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নামধাম জানি। কিন্তু ধারণা করা হয়, এসব চিহ্নিত গোয়েন্দা বাহিনীর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের আরও গোয়েন্দা বাহিনী ও সংস্থা রয়েছে।

তেমনই এক গোয়েন্দা সংস্থার নাম জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এন এস এ)। এটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এনএসএ মূলত বিভিন্ন দেশের সিগন্যালস ইন্টেলিজেন্স কাজ করে থাকে।

সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং তথ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এনএসএ তার উদ্দেশ্য সাধন করতে বিভিন্ন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে যার বেশিরভাগই গোপন করা হয়ে থাকে।

যেভাবে যাত্রা শুরু করে এনএসএ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগাযোগ-সঙ্কেতলিপির আদ্যোপান্ত উদ্ধার করতে গিয়ে ১৯৫২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরী এস. ট্রুম্যান এনএসএ গোয়েন্দা সংস্থা গঠন করেন। তখন থেকে এটা লোকসংখ্যা এবং বাজেটের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম গোয়েন্দা সংস্থার একটিতে পরিণত হয়।

এনএসএ বিশ্বব্যাপী গণ-তথ্য সংগ্রহ করে এবং এর জন্য একটি কার্যপদ্ধতি হিসেবে ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমে আড়িপাতে। সংস্থাটি স্টাক্সনেটের মত আক্রমণ সফটওয়ারও বানায় যেটা কিনা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম গুরুতরভাবে নষ্ট করেছিলো। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এর মত এনএসএ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে।

সংস্থাটির কাজ মূলত, অন্য দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা, নিবিড় নজরদারি, সিঁধকাটা, টেলিফোনে আড়িপাতা এবং অন্য দেশের সুরক্ষিত ইন্টারনেট ও গোপন তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করা।

সিআইএ এবং ডিআইএ মানুষ দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে পারদর্শী। তবে এনএসএ মানব উৎস থেকে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য জনসমক্ষে সংগ্রহ করেনা। সংস্থাটি বিভিন্ন ডিভাইন, সফটওয়ার ও লিংক ব্যবহার করে গোয়েন্দাগিরি করে।

২০১৩ সালে এনএসএ এর সাবেক ঠিকাদার ও উইকিলিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা এডওয়ার্ড স্নোডেন বহু নথিপত্র ফাঁস করেন। ফাঁসকৃত নথিপত্রে পাওয়া যায়, এনএসএ যুক্তরাস্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়ন লোকের যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য গ্রহণ ও সংরক্ষণ করে। নথিপত্র থেকে এও জানা যায়, এনএসএ ফোনের মেটাডেটার মাধ্যমে বহু লোকের গতিবিধিও নজরে রাখে। গবেষণায় এও প্রকাশ পেয়েছে যে এনএসএ বুমেরাং রাউটিং এর মাধ্যমে বিদেশের ইন্টারনেট ট্রাফিক নজরে রাখতে পারে।

এনএসএ অফিস কোথায়

ভয়ঙ্কর এই গোয়েন্দা সংস্থার অফিস বা দপ্তর বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে মার্কিন ইউটিউবার ও দেশটির গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের ‘লং লাইনস বিল্ডিং’ এনএসএ এর দপ্তর। এই ভবনটিকে ৩৩ টমাস স্ট্রিট নামেও চিহ্নিত করা হয়।

নিউ ইয়র্ক শহরের লোয়ার ম্যানহাটনের ট্রিবেকা অঞ্চলে টমাস স্ট্রিট এবং ওয়ার্থ স্ট্রিটের মধ্যবর্তী চার্চ স্ট্রিটের পূর্ব দিকে রয়েছে এনএসএ এর দপ্তর। ভবনটি নিয়ে এরই মধ্যে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ২৯ তলা ভবনটিতে নেই কোনো জানালা।

একটি মাত্র প্রবেশদ্বার ছাড়া দ্বিতীয় কোনো দরজাও নেই বহুতল ভবনটিতে। ১৯৭৪ সালে জন কার্ল ওয়ারনেক নামে এক স্থপতি নির্মাণ করেছিলেন। পঞ্চাশের দশকের ব্রিটেনে আবাসিক ভবনগুলোর আদলে ‘লং লাইনস বিল্ডিং’ নির্মাণ করা হয়।

কি আছে রহস্যময় এই ভবনে

ডেইলে মেইল বলছে, ভবনটিতে রয়েছে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের দপ্তর। টেলিফোন এক্সচেঞ্জ পরিষেবার দপ্তর হিসেবে পরিচিতি হলেও এ দপ্তরে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সঞ্চয় করে রাখা হয়। সম্পূর্ণ বহুতলে একটিও জানলা নেই। প্রবেশদ্বার ছাড়া আর কোনও কিছুই নজরে পড়ে না। ফলে বহুতলের ভেতরে ঠিক কি হয় তা নিয়ে আগ্রহ সকলের।

হাওয়া যাতায়াতের জন্য লং লাইনস বিল্ডিংয়ের দশম এবং ২৯তম তলায় ‘ভেন্টিলেশন’ সিস্টেম রয়েছে। লং লাইনস বিল্ডিংয়ের প্রতিটি তলার গড় উচ্চতা সাড়ে পাঁচ মিটার।

লং লাইনস বিল্ডিংয়ের এক কর্মীর বরাতে ডেইলি মেইল জানিয়েছে, এই বহুতলের নিয়মকানুন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। ‘দ্য ডেলি মেল’ কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই কর্মী জানিয়েছিলেন, বহুতলের ভিতরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রচুর কড়াকড়ি রয়েছে। বহুতলের কর্মী দাবি করেছিলেন, ‘ওই বহুতলে এমন প্রচুর রুম রয়েছে যেগুলোতে আমাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। রুমগুলোর ভেতরে যে কি রয়েছে সে বিষয়ে কোনও ধারণা নেই।’

১৩ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।