• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কফিনামা : নামের বৈচিত্র্যে বিশ্বজুড়ে অনন্য এক পানীয়

কফিনামা : নামের বৈচিত্র্যে বিশ্বজুড়ে অনন্য এক পানীয়

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

আড্ডা কিংবা নাস্তায় কফি থাকলে আর কি লাগে! বিশেষ করে ঠাণ্ডা ও বৃষ্টির দিনের বিকালে কফির কাপে চুমুক না দিলে যেন চলেই না। যার ছোঁয়ায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠে শরীর ও মন। আমাদের দেশে গুঁড়ো কফি দুধ ও চিনিতে গুলে খাওয়ার প্রচলন বেশি। তবে এই পদ্ধতিতে নাকি আসল কফির স্বাদ পাওয়া যায় না। মিশ্রণ প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে একেক দেশে কফি একেক নামে বিখ্যাত। আন্তর্জাতিক কফি অর্গানাইজেশনের তথ্য বলছে, ভালো কফি খেতে চাইলে আরাবিকা সেরা। আর যদি হালকা ফ্লেভারের কফি চান, তা হলে ইথিওপিয়া বা কেনিয়া বা আফ্রিকান কফি সেরা। তবে যদি খুব কড়া স্বাদের কফি পছন্দ করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য পাপুয়া নিউগিনির কফি।

যেভাবে এলো কফি

উইকিপিডিয়া ও আন্তর্জাতিক কফি অর্গানাইজেশন বলছে, নবম শতকে কালদি নামে একজন ছাগল পালক প্রথম তার ছাগলদের বেরি জাতীয় গাছ থেকে ফল খেতে দেখে। পরবর্তীতে তিনি লক্ষ্য করে যে, তার ছাগলগুলো সারা রাত না ঘুমিয়ে পার করে দেয়। পরে একদল ধার্মিকের কাছে ছাগল পালক কালদি ঘটনার বর্ণনা করেন। পরে ধার্মিকেরাও ওই ফল থেকে পানীয় তৈরি করে পান করতেন এবং সারা রাত ইবাদত করতেন। ইতিহাসের তথ্য, প্রথম ক্যাফেগুলো ছিল মধ্যপ্রাচ্যেই। ওখানকার বিভিন্ন শহরে কফির দোকানগুলোকে বলা হতো 'কাহভেহ খানেহ।'

কোন কফি কত দামি

ক্লাচ কফি : এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি। যা আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে পাওয়া যায়। এই কফির দাম প্রতি কাপ ৭৫ ডলার। পানামাতে তৈরি হওয়া এক বিশেষ জাতের বিন থেকে এই কফি তৈরি হয়।

ব্ল্যাক আইভরি : কলার সঙ্গে কফি বিন মিশিয়ে হাতিকে খাওয়ানো হয়। এরপর হাতির বিষ্ঠা থেকে সংগৃহীত বিনকে পরিশোধিত করে তৈরি হয় ব্ল্যাক আইভরি। থাইল্যান্ডের ‘ব্ল্যাক আইভরি’ কফির দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে।

এল ইনজের্তো ও এসমেরাল্ডা : গুয়াতেমালার ‘এল ইনজের্তো’ বিশ্বের দামি কফিগুলোর একটি। এটিতে মূলত হাল্কা মিষ্টি ও ফলের মিশ্রণ থাকে। যে কারণে এটি বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর দক্ষিণ পানামায় তৈরি ফুলের নির্যাসযুক্ত ‘এসমেরাল্ডা’ কফির জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে।

কপি লুয়াক : ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা, বালি ও তিমুরে তৈরি হওয়া এই কফি বিশ্বের দামি কফিগুলোর অন্যতম। ‘কপি লুয়াক’ তৈরির প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও দীর্ঘ। এর দাম শুনলে অনেকেই আঁতকে উঠবেন। সিভেট বিড়ালের বিষ্ঠা থেকে কফি বিন সংগ্রহ করে পরিশোধনের মাধ্যমে তৈরি হয় কপি লুয়াক। এই কফিতে তেতো ভাব অনেকটা কম।

এছাড়া ক্যাপাচিনো, মোকা, এসপ্রেসো ও ল্যাটে নামেও কফি পাওয়া যায়। যদিও এগুলো মৌলিখ কফি নয়। আসল কফির সঙ্গে বিভিন্ন অনুপাতে দুধ ও চিনি মিশিয়ে এসব নামের কফির প্রচলন করা হয়েছে। যেমন-

ইটালির এসপ্রেসো রোমানো : গাড় লিকারের ওপরে লেবুর জিস্ট ছড়িয়ে এবং লেবুর খোসা অথবা এক টুকরো লেবুর সাথে এই কফি পরিবেশন করা হয়। ইতালিতে এসপ্রেসোই বেশি প্রচলিত।

ফিনল্যান্ডের ক্যাফিঅস্ট : বিখ্যাত এই কফি তৈরি করা হয় এক প্রকার চিজ কার্ড দিয়ে। এই চিজ কার্ডের টুকরোর ওপর গরম কফি ঢেলে দেওয়া হয়। এই কফি ফিনল্যান্ডের মানুষ খুব পছন্দ করেন।

কাহওয়া : সৌদিসহ আরব দেশগুলোতে এই কফি সর্বাধিক প্রচলিত। দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জাফরান, আদাসহ অন্যান্য মসলার মিশেলে এটি তৈরি করা হয়।

তুরস্কের তার্ক কাহভেসি : বিশেষ এক ধরনের তামা অথবা পিতলের পাত্রে নিয়ে এই কফি তৈরি করা হয়। এটা একদম আনফিল্টার্ড কফি। এতে কফি গুঁড়া আপনার ঠোঁটে লেগে যেতে পারে।

ডিম/এগ কফি : এই কফি টেক্সচার অন্যান্য যেকোনো কফির চাইতে বেশি ঘন ও ক্রিমি হয়। কারণ এতে ডিম ব্যবহার করা হয়। এই কফির সাথে মোকার হালকা ফ্লেভার পাওয়া যায়।

ফ্যারিশা : কফি, রাম ও চিনির মিশেলে তৈরি কফির ওপরে হুইপড ক্রিম ও চকলেট গুঁড়া ছিটিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের এই কফি। এটি জার্মানিতে বহুল জনপ্রিয়।

ইয়নইয়াং : ঠাণ্ডা ও গরম দুইভাবেই এই কফি পরিবেশন করা হয়। মালয়েশিয়ার বিখ্যাত এই কফি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তিনভাগ কফি ও সাতভাগ হং-কং স্টাইল মিল্ক টি। মূলত দুধ চা ও কফির মিশ্রণ এটি।

 

তথ্যসূত্র : বিবিসি ফুড, উইকিপিডিয়া ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪০এএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।