• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহ্যে আপ্যায়নে অনন্য ‘বিন্নি চাল’

ঐতিহ্যে আপ্যায়নে অনন্য ‘বিন্নি চাল’

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

“আমার বাড়ি যাইও ভোমর/বসতে দেব পিঁড়ে, জলপান যে করতে দেব/শালি ধানের চিঁড়ে। শালি ধানের চিঁড়ে দেব/বিন্নি ধানের খই/বাড়ির গাছের কবরী কলা/গামছা বাঁধা দই।” পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের বিখ্যাত ‘আমার বাড়ি’ কবিতার কালজয়ী পঙক্তি। কবিতার এই অংশে ফুটে উঠেছে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও অতিথি আপ্যায়ণে বিন্নি ধানের চালের নিবীড় জৌলুস। বিন্নি ধানকে সিলেট অঞ্চলে বিরোইন ধান বলে। সিলেটে এখন বিন্নি ধান হারিয়ে যাওয়ার পথে। বিন্নি চালের ভাপে ভাত, পোলাও, চুঙা পিঠা, পায়েস রান্না করা হয়। উৎসবে বিন্নি চালের পিঠা পায়েস খই চিড়া খাওয়ার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বিশেষ করে নবান্ন উৎসব মানেই যেন বিন্নি চালের তেলেসমাতি।

বিন্নি ধানের যত জাত

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে নানা জাতের বিন্নি ধান আবাদ হয়। এর মধ্যে চন্দন বিন্নি, মৌ বিন্নি, দুধ বিন্নি, রাঙা বিন্নি, আসানিয়া বিন্নি, হরিণ বিন্নি, লক্ষ্মী বিন্নি উল্লেখ্য। তবে বাজারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় লাল বিন্নি চাল। তবে বিন্নি চালের নানান নাম থাকলেও এটি মূলত রঙ অনুসারে লাল বিন্নি, সাদা বিন্নি ও কালো বিন্নি নামেই অধিক পরিচিত।

বিন্নি চালের পুষ্টিগুণ

♦ পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিন্নি চালে অন্য সব চালের তুলনায় ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট কম থাকে। এই চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অন্য সব চালের তুলনায় অনেক কম। তাই, এই চালের ভাত কিছুটা বেশি খেলেও ডায়াবেটিস বা স্থুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।

♦ বিন্নি চালে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে আছে অ্যানথোসায়ানিন বা ফ্ল্যাভেনয়েড। এটি মূলত ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

♦ এই চালে কার্বোহাইড্রেট কম থাকে। কিন্তু এতে আঁশ, ভিটামিন-বি, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম ইত্যাদি উপাদানে ভরপুর। কাজেই, এই চাল নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা হজমের সমস্যা দূর হয্

♦ বিন্নি চালে থাকা খনিজ উপাদানগুলো ত্বক, চুল ও হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

যে অঞ্চলে পাওয়া যায় বিন্নি ধান

নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধানের আবাদ হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই ধানকে বিলের ধান বা বিলেন ধানও বলে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের চাষীরাও এখন জুমে বিন্নি ধান আবাদ করছেন।

বিন্নি চালের হরেক খাবার

বিন্নি ধানের চালের গুঁড়া দিয়ে সব ধরনের পিঠা তৈরি করা যায়। এই চালের পিঠা অন্যান্য চালের পিঠার চেয়ে নরম হয়। বিন্নি চাল দিয়ে ক্ষির, পায়েস, ভাপা পিঠা, মুখশালা, চিতই, ভেজানো পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, চোক্ষা পিঠা ইত্যাদি সহজেই তৈরি করা যায়। বিন্নি চালের ভাত অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এই চাল সরু বা চিকন না হলেও স্বাদ ও গন্ধে অনন্য। বিন্নি আতপ চালের আঠালো ভাত খুবই সুস্বাদু। এর রয়েছে ঔষুধি গুণাগুণ।

বিন্নি ধানের খই না হলে তাঁত শিল্পীদেরও চলে না। তাঁত শিল্পীদের কাছে বিন্নি ধানের খই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁত শিল্পীরা সুতা এবং কাপড় কাটা করা অর্থাৎ মাড় দেয়ার জন্য বিন্নি ধানের খই ব্যবহার করে থাকেন।

 

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও উইকিপিডিয়া।

 

০৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৩৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।