• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সালমান শাহ: বাংলা চলচ্চিত্রের ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’

সালমান শাহ: বাংলা চলচ্চিত্রের ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’

ফাইল ছবি

বিনোদন ডেস্ক

সম্মোহনী শক্তির এক মহানায়ক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প কার না জানা! বাংলা সিনেমার তেমনই এক ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। গল্পের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা শহরের বাচ্চাদের নিয়ে দূর পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে গেছেন, আর বাংলা চলচ্চিত্রের ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ চলে গেছেন একা একা। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতা নায়ক আসলে কে, তা হয়তো এতক্ষণে আঁচ করতে পেরেছেন। হ্যা, বন্ধুরা সালমান শাহ’র কথাই বলছি।

যিনি বাংলা সিনেমা জগতে এসেছিলেন, দেখেছিলেন এবং জয় করেছিলেন। টিভি নাটক কিংবা রুপালি পর্দার সিনেমা, সবখানেই সালমানের বাজির ঘোড়া বাজিমাত করেছে। ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন নাটক দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেন সালমান শাহ। অল্প দিনের ব্যবধানে তিনি দেশব্যাপী বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন সালমান। এই সিনেমায় চিত্রনায়িকা মৌসুমীর অভিনেত্রী হিসেবে অভিষেক হয়। সিনেমাটি গোটা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। সালমান শাহ ও মৌসুমী পেয়ে যান তারকা খ্যাতি।

সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সালমান শাহ। তাঁর সবকয়টি সিনেমা ছিল ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত। ১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরের দাড়িয়া পাড়াস্থ নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সালমান। তাঁর বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পরই শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন হয়ে যান সালমান শাহ। পারিবারিক জীবনে ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান।

অল্প দিনের অভিনয় জীবনে সালমান শাহ’র অর্জন অনেক। ১৯৮৫ সালে বিটিভির ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটক দিয়ে অভিনয়ে যাত্রা শুরু তাঁর।

চলচ্চিত্রে অভিষেক যেভাবে

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে সালমান শাহ বাংলা চলচ্চিত্রে পা রাখেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর মেধাস্বত্ব নিয়ে সোহানের কাছে আসে। সোহানুর রহমান সোহান ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ সিনেমার জন্য নতুন মুখের সন্ধানে নামেন। অবশেষে তিনি মৌসুমীকে ওই সিনেমার নায়িকা হিসেবে পছন্দ করেন।

তবে সমস্যা দেখা দেয় নায়ক নিয়ে। পছন্দ মতো নায়ক না পাওয়ায় তৎকালীন চিত্রনায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর সোহানুর রহমান সোহানকে ‘ইমন’ নামের একটি ছেলের সন্ধান দেন। এরপর সোহানুর রহমান সোহান ‘ইমন’-এর সঙ্গে দেখা করেন। প্রথম দেখাতেই ইমনকে পছন্দ করেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান।

এ ছাড়া সালমান শাহ অভিনীত ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘স্নেহ’ ও ‘দেনমোহর’ সিনেমা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতার জীবনের গল্পও সিনেমার মতোই রোমঞ্চকর। ডানপিটে সালমান লং ড্রাইভে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। সহজ সরল ও রাখঢাকহীন এক দুরন্ত নায়ক সালমান শাহ বাংলা সিনেমার এক ঝলমলে লুব্ধক।

সালমানের মৃত্যুর যে কারণ

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। কারণগুলো হলো চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তার অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা, স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, বেশি আবেগপ্রবণ হওয়া এবং একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালানো।

সালমানের সুইসাইড নোটে যা ছিল

মৃত্যুর আগে সালমান একটি সুইসাইড নোট লিখে রাখেন। সেই সময় সালমানের বাসা থেকে পুলিশ এই সুইসাইড নোট বা আত্মহত্যার চিঠিটি উদ্ধার করে। সুইসাইড নোটে সালমান লিখেছিলেন, ‘আমি চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার, পিতা- কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ১৪৬/৫, গ্রিন রোড, ঢাকা-১২১৫ ওরফে সালমান শাহ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আজ অথবা আজকের পরে যেকোনো দিন মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।’

২০ আগস্ট ২০২২, ০৫:০৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।