• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের নুপুর ও রুপালি পর্দার শাবনূর

যশোরের নুপুর ও রুপালি পর্দার শাবনূর

ফাইল ছবি

বিনোদন ডেস্ক

প্রয়াত বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের সঙ্গে পরিচয় ছিল যশোরের শার্শা উপজেলার শাহজাহান চৌধুরীর। শাহজাহান চৌধুরীর বাড়িতে যাতায়াতও ছিল এহতেশামের। একবার শাহজাহান চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে তার মেয়ে নুপুরকে দেখে সিনেমায় নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে কৃতী নির্মাতা এহতেশাম। চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের আগ্রহে প্রথম আপত্তি জানালেও পরে সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রাজি হয়ে যান নুপুর। অভিনয় করেন ‘চাঁদনী’ সিনেমায়।

আর এই ‘চাঁদনী’ সিনেমায় অভিনয়ের পর নুপুরের নাম বদলে দেন পরিচালক এহতেশাম। নুপুরের নতুন নাম রাখা হয় ‘শাবনূর’। যার অর্থ ‘রাতের আলো’।

১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর। বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশামের হাতেই তার সিনেমায় অভিনয়ের হাতখড়ি।

হয়তো চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম বুঝতে পেরেছিলেন শাবনূর সত্যিই একদিন বাংলা সিনেমায় নূর ছড়াবেন। শাবনূর নিজের অভিনয়গুণে বাংলা চলচ্চিত্রকে নিয়ে গিয়েছেন বহুদূর। যশোরের শার্শা উপজেলার শাহজাহান চৌধুরীর মেয়ে শাবনূর চলচ্চিত্র থেকে এখন দূরে। কিন্তু তার অনবদ্য অভিনয়ের কারণেই বহু বাংলা সিনেমা এখনো দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে।

অভিনয় জীবন

রূপালি পর্দার বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে শাবনূর দ্যূতি ছড়িয়েছেন বহুদিন বহুদূরে। ১৯৯৩ সালে প্রথম শাবনূর অভিনিত ‘চাঁদনী’ সিনেমা মুক্তি পায়। ছবিটি পরিচালনা করেন এহতেশাম এবং শাবনূরের বিপরীতে নায়ক ছিলেন সাব্বির।

পরে চিত্র নায়ক সালমান শাহ’র সঙ্গে জুটি বেঁধে ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন দর্শকনন্দিত এই অভিনেত্রী। সালমান-শাবনূর অভিনীত প্রায় সবগুলো সিনেমাই ছিল ব্যবসা সফল। ১৯৯৪ সালে জহিরুল হক পরিচালিত সালমান শাহ-শাবনূর জুটির প্রথম ছায়াছবি ‘তুমি আমার’ মুক্তি পায়। একই বছর শাহ আলম কিরণ সালমান শাহ-শাবনূরকে নিয়ে ‘ফারুক-কবরী’ জুটির সুজন সখী চলচ্চিত্রের রঙিন ‘সুজন সখি’ সিনেমা পুনঃনির্মাণ করেন।

১৯৯৫ সালে সালমান-শাবনূর জুটির ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের মর্যাদা পায়। পরের বছর তিনি স্বপ্নের পৃথিবী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন শাবনূর।

এরপর সালমান শাহের বিপরীতে ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৯৭ সালে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ সিনেমায় নায়ক রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান শাবনূর। এছাড়া রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে ১৯৯৭ সালে ‘মন মানেনা’ ও ‘তুমি শুধু তুমি’, ‘ ভালবাসি তোমাকে’ ও ‘বিয়ের ফুল’ সিনেমায় অভিনয় করেন। এসব সিনেমা ব্যাপকভাবে ব্যবসা সফল হয়।

এছাড়াও চিত্রনায়ক মান্না, শাকিব খান, শাকিল খান, ফেরদৌসের সঙ্গে জুটি বেঁধেও সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ‘ভালবাসি তোমাকে’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ‘বাচসাস’ পুরস্কার লাভ করেন এই গুণী অভিনেত্রী। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের চলচ্চিত্রের জন্য পর্যন্ত টানা দুইবার তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন শাবনূর।

এ ছাড়া ‘নারীর মন’, ‘এ মন চায় যে’, ‘এ বাঁধন যাবেনা ছিঁড়ে’, ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘এরই নাম দোস্তি’, ‘ফুল নেবে না অশ্রু নেবে’, ‘গোলাম’, ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘হৃদয়ের বন্ধন’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘সবার উপরে প্রেম’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেন শাবনূর।

রোমান্টিক সিনেমার শীর্ষ নায়িকাখ্যাত শাবনূর ২০০০ থেকে ২০০২ সালে টানা তিনবার তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়া তিনি ‘মাটির ফুল’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ’, ‘স্বপ্নের ভালবাসা’, ‘নয়ন ভরা জল’, ‘অন্য মানুষ’, ‘ব্যাচেলর’, ‘ফুলের মত বউ’, ‘যত প্রেম তত জ্বালা’, ‘তোমার জন্য পাগল’, ‘কাল সকালে’, ‘মোল্লা বাড়ীর বউ’, ‘দুই নয়নের আলো’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ ছবিতে তিনি অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

মোল্লা বাড়ীর বউ ও ফুলের মত বউ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শাবনূর দুই বার বাচসাস ও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।

২০০৬ সালে খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত উপন্যাস জনম জনম অবলম্বনে নির্মিত ‘নিরন্তর’ ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। আবু সাইয়ীদ পরিচালিত এই ছবিতে তিথি চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেন চিত্রনায়িকা শাবনূর।

২০০৭ সালে ‘মেয়ে সাক্ষী’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘আমার প্রাণের স্বামী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে আমার প্রাণের স্বামী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে বাচসাস পুরষ্কার ও দর্শক জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন শাবনূর।

পরের বছর ২০০৮ সালে পি এ কাজলের রোম্যান্টিকধর্মী ‘এক টাকার বউ’ ২০০৯ সালে ‘তুমি আমার স্বামী’, ‘এবাদত’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা’, ‘বলবো কথা বাসর ঘরে’ সিনেমায় অভিনয় করেন এই গুণী অভিনেত্রী। এক টাকার বউ ও বলবো কথা বাসর ঘরে ছায়াছবির জন্য টানা দুইবার দর্শক জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার জিতে নেন দেশ সেরা এই চিত্রনায়িকা।

এছাড়া ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’, ‘চাঁদের মত বউ’, ‘ মন ছুঁয়েছে মন’, ‘ভালোবেসে বউ আনব’, ‘বধূ তুমি কার’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এই অভিনেত্রী।

অবাক করা তথ্য এই যে, চলচ্চিত্রের রূপালি পর্দায় দারুণ সফল নায়িকা শাবনূরের স্বপ্ন ছিল তিনি পাইলট হবেন। কিন্তু চলচ্চিত্রের কর্মব্যস্ততা ও রূপালি জগত শাবনূরের সেই স্বপ্ন পুরণ হতে দেয়নি। এক সাক্ষাতকারে এমনটাই দাবি এই নায়িকার।

ব্যক্তিগত জীবনে ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল করেন ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ এই অভিনেত্রী। পরের বছর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনিক মাহমুদকে বিয়ে করেন শাবনূর। বিয়ের পর স্বামী অনিক মাহমুদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন বাংলা সিনেমার রূপালি পর্দার তুমুল জনপ্রিয় এ নায়িকা। অস্ট্রেলিয়াতে নাগরিকত্বও লাভ করেছেন শাবনূর। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তাঁর ছেলের নাম আইজান নিহান। তবে তাদের দাম্পত্য কলহের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অনিক মাহমুদের কাছে বিচ্ছেদ চেয়ে তালাকের নোটিশ পাঠান শাবনূর। বর্তমানে নিজের ভাইবোন ও সন্তানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ এই নায়িকা।

১৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:৩৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।