• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোগা বাগদা চিংড়ির পোনা বাজারে, বন্ধের দাবি

রোগা বাগদা চিংড়ির পোনা বাজারে, বন্ধের দাবি

প্রতিকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাময় খাত চিংড়ি শিল্প। বাগদা ও গলদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল অর্থ আয় করে বাংলাদেশ। বিদেশে চিংড়ির বাজার ধরতে ও সম্প্রসারণ করতে দেশের হ্যাচারি মালিকরা উন্নত দেশগুলোর প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগমুক্ত ও বিশ্বস্বীকৃত চিংড়ির পোনা উৎপাদন করছে দেশীয় হ্যাচারিগুলো। তবে, অসাধু একটি চক্র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্র থেকে রোগা ও অননুমোদিত মা চিংড়ি শিকার করে পোনা তৈরি করছে। এই পোনা বাজারে আসার কারণে বিশ্ববাজারে ঝুঁকিপূর্ণ ও রোগা বাগদা চিংড়ি রপ্তানির ঝুঁকি তৈরি হবে।

কক্সবাজার, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন হ্যাচারি মালিকরা এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রোগা ও অননুমোদিত চিংড়ির পোনা অবৈধ পথে দেশে ঢুকছে। এই পোনা চিংড়ি শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন হ্যাচারি মালিকরা।

এদিকে সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়ার এমকেএ হ্যাচারির মালিক মঈন উদ্দিন আহমদ এসব বিষয়ে অবগত করে মৎস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ও এমকেএ হ্যাচারির মালিক মঈন উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদনকৃত ও প্রনয়নকৃত সকল আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা উন্নত বিশ্বের যেকোনো নীতিমালা/বিধিমালা সমমানের যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের চিংড়ি শিল্প দেশে এবং বিদেশে নতুন ভাবে জায়গা করে নিতে পারবে।

সরকারের আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা অনুসরনে বাগদা চিংড়ি পোনা উৎপাদনে ২০১৩ সাল থেকে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এমকেএ হ্যাচারি। শতভাগ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই এ অবস্থিত ‘মোয়ানা টেকনোলজিস এলএলসি’র সাথে যুক্ত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসপিএফ বাগদার প্রজননক্ষম মা ও পুরুষ চিংড়ি, এসপিএফ নপলি ও পোনা উৎপাদন করে যাচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সাস্টেইনাবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রোজেক্টের (এসসিএমএফপি) এর আওতায় এমকেএ হ্যাচারি বিএমসি (ব্রড স্টক মাল্টিপ্লিকেশন সেন্টার) এ উন্নীত হয়েছে। এমকেএ হ্যাচারির কাছে ১০ হাজার প্রজননক্ষম এসপিএফ ব্রড রয়েছে। যা নপলি ও চিংড়ির পোনা উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত। ২০২২ সালে এমকেএ হ্যাচারি ৬৫ কোটি পোনা ও প্রায় ৪০০ কোটির অধিক নপলি উৎপাদন করে বলে দাবি করা হয়েছে চিঠিতে।

চিঠিতে মঈন উদ্দিন আহমদ দাবি করেন, আসছে ২০ মে হতে ২৩ জুলাই সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সময় অন্যান্য হ্যাচারীগুলো এসপিএফ ব্যবহার করে চিংড়ি চাষীর পোনার চাহিদা পূরণ করে। বর্তমানে এমকেএ হ্যাচারী ছাড়াও অনেক হ্যাচারি এসপিএফ উৎপাদন করছে। ফলে এই দুটি বিএমসি আমাদের চিংড়ি খাতের পোনা ও নপলির সার্বিক প্রয়োজন পুরণ করতে সক্ষম। কিন্তু কিছু ব্যক্তির চিংড়ি নীতিমালা পরিপন্থি কার্যক্রমের ফলে এমকেএ হ্যাচারি সহ অন্যান্য এসপিএফ পোনা উৎপাদনকারী।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয় কর্তৃক অনুমোদিত ও জারিকৃত “মৎস্য হ্যাচারি আইন ২০১০”, “মৎস্য হ্যাচারি বিধিমালা ২০১১” “জাতীয় চিংড়ি নীতিমালা ২০১৪” এবং “সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা ২০২৩” ডকুমেন্টসসমূহ অত্যন্ত যুগপোযোগী। চিংড়ি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দেড় কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা।

জানা গেছে, সরকারের এই নীতিমালা, আইন এবং বিধিমালার নির্দেশনা সমূহের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বর্তমানে চিংড়ি চাষে এসপিএফ চিংড়ি পোনা সরবরাহের নিশ্চিতকল্পে এমকেএ হ্যাচারিসহ মোট ৩টি হ্যাচারির মালিক তাদের হ্যাচারির কাঠামোগত পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করেছে। মৎস্য অধিদপ্তর ২০২২ সালে নতুনভাবে সাস্টেইনাবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রোজেক্ট (এসসিএমএফপি) প্রকল্পের আওতায় ৪টি হ্যাচারিতে এসপিএফ পিএল উৎপাদন, ২টি হ্যাচারিতে ব্রুড মাল্টিপ্লিকেশন সেন্টার স্থাপন এবং কয়েকটি নার্সারীতে এসপিএফ পিএল লালন-পালনের জন্য অনুমোদন ও অর্থায়নসহ প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করছে।

তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে অবৈধ পথে চিংড়ি রেনু ও পিএল এনে তা বিভিন্ন হ্যাচারি ও নার্সারির মাধ্যমে চাষি পর্যায়ে বিতরণ করছে একটি অসাধু চক্র। সরকারের চোখ ফাকি দিয়ে অবৈধভাবে আনা এসব পোনা বা পিএল এসপিএফ বা রোগ মুক্ত নয়। যা ব্যবহারে সাধারণ চিংড়ি চাষী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে কিছু অসাধু ব্যক্তি, কিছু হ্যাচারীর যোগসাজসে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সময় (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই) তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে অবৈধ পথে নপলি ও পিএল এনে আমাদের চিংড়ি খাতকে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এ অবস্থায়, দেশের সম্ভাবনাময় চিংড়ি খাতকে বাঁচাতে সরকারের সংশ্লিষ্ঠদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা।

১৩ মে ২০২৩, ০৫:৪২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।