• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
এটিএন বাংলা টক শোতে অতিথিরা

শেয়ার বাজারে আস্থা ফেরাতে বাড়াতে হবে তারল্য

শেয়ার বাজারে আস্থা ফেরাতে বাড়াতে হবে তারল্য

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

শেয়ার বাজার ও অর্থনীতি নিয়ে ‘বিনিয়োগ’ নামের এক অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছে এটিএন বাংলায়। সাংবাদিক ফয়সাল আহমদের উপস্থাপনায় মোনার্ক মার্ট নিবেদিত ‘বিনিয়োগ’ এর প্রথম পর্ব রবিবার (৮ জানুয়ারি) প্রচারিত হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলায় প্রচারিত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ও মার্চেন্ড ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনসের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান।

অনুষ্ঠানে শেয়ার বাজারে লেনদেন কেন কমছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন- ‘আগে শেয়ার বাজারে ব্যাপক লেনদেন হয়েছে। আমরা দেখেছি। এখন আশঙ্কাজনক হারে শেয়ার বাজারে লেনদেন কমছে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে এই অন্যতম বড় কারণ, ব্যাংকের তারল্য সংকট। ব্যাংকে যে তারল্য সংকট চলছে, তা তো অস্বীকার করা যায় না। এমন কি সরকারের যে সিডিউল ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়ার প্ল্যান ছিল, সরকার কিন্তু সেটাও করতে পারছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৬ মাসে ৫০ হাজার কোটি টাকা ইনজেক্ট করেছে। মানি মার্কেট থেকে শেয়ার মার্কেটে যে তারল্য প্রবাহ হবে, সেটা এখন বিঘ্নিত হচ্ছে। এই অবস্থায় শেয়ার বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ খুব একটা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।’

আলোচনায় ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘তারল্য সংকটকে আমি প্রধানতম কারণ হিসেবে ভাবছি না। বরং গত জুলাইয়ে শেয়ার মার্কেটে ফ্লোর প্রাইস ইন্ট্রোডিউস করা হয়। একটা পতনমুখী শেয়ার বাজারে ফ্লোর প্রাইস ইন্ট্রোডিউস করার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। এতে ছোট ছোট ও মাঝারি লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দুইশ থেকে আড়াইশ কোম্পানীর লেনদেন বন্ধ হয়েছে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর। অর্থনীতির সবগুলো খাতেই এর প্রভাব পড়েছে। কাজেই, আমি মনে করি শেয়ার বাজারে বর্তমান অবস্থার জন্য প্রধানতম কারণ এই ফ্লোর প্রাইস।’

ফ্লোর প্রাইস পর্যায় ক্রমে উঠিয়ে দিলে শেয়ার বাজারের পুরনো অবস্থা আবারও ফিরে আসবে বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

বর্তমান সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন শেয়ার বাজারের নাজুক অবস্থার উত্তোরণে গত দুই বছরে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে, তারপরও কেন উত্তোরণ ঘটছে না এমন প্রশ্নের জবাবে মার্চেন্ড ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ‘নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর মার্কেটে একটা গতি এসেছিল। এই কমিশনের আন্ডারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। একটা সময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি ভালো ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার, সেটি হলো কোভিড চলাকালীন সব ধরণের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়টাতে শেয়ার বাজারের নিয়মিত লেনদেনকারীদের পাশাপাশি অনিয়মিত লেনদেনকারীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। পরে আবার যখন অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য সচল হয়েছে, তখন শেয়ার মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা চলে গিয়েছেন। হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীদের বিরাট অংশ চলে যাওয়ায় যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা অনেক। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে আমাদের দেশের তেলের বাজার, খাদ্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়েছে। এসব কিছুর সঙ্গেই বাণিজ্য, বিনিয়োগ জড়িত। এগুলো কোনো না কোনো ভাবে শেয়ার বাজারে প্রভাব ফেলেছে।’

আলোচনায় ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। এজন্য সবার আগে শেয়ার বাজারে যে ম্যানুপুলেটেড লেনদেন হয়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে স্বচ্ছ লেনদেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তারল্য সংকট দূর করতে হবে।’

০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:১৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।