• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ঙ্কর ভাইরাস ‘মাঙ্কিপক্স’: উপসর্গ ও সুরক্ষায় করণীয়

ভয়ঙ্কর ভাইরাস ‘মাঙ্কিপক্স’: উপসর্গ ও সুরক্ষায় করণীয়

প্রতিকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস মহামারি শেষ হয়নি এখনো। এরইমধ্যে নতুন এক সংক্রমণের কবলে পড়েছে বিশ্ব। ‘মাঙ্কিপক্স’ নামের নতুন এই রোগের বিস্তার ইউরোপে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রেও শনাক্ত হয়েছে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মাঙ্কিপক্সকে ‘শনাক্তযোগ্য ও বর্ধনশীল ব্যধি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

বিবিসি বলছে, এখন পর্যন্ত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের ১২টি দেশে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট গ্লোবাল হেলথের তথ্য বলছে, বিশ্বে ১১১ জন এই ভাইরাসে সংক্রমিত অথবা সন্দেহভাজন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

মারাত্মক এই ভাইরাসটি অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আক্রান্ত দেশ এবং অন্যান্যদের সাথে কাজ শুরু করেছে। মাঙ্কিপক্স শনাক্ত, নজরদারি এবং আক্রান্তদের চিকিৎসায় সহায়তা করছে বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সংস্থা।

মাঙ্কিপক্স কী?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আর্দ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার। তারপর একসময় মানবদেহেও সংক্রমণ ঘটায় মাঙ্কিপক্স।

তবে বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের দাবি, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঙ্কিপক্স ব্যাপকহারে ছড়িয়েছে সমকামীদের মাধ্যমে। সমকামীরা মাঙ্কিপক্স বিস্তারের নীরব বাহক হিসেবে কাজ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অপর একটি অংশ এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।

‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাসটি গুটিবসন্তের মতো একই প্রজাতির সদস্য। এই প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ভেরিওলা ভাইরাস; যা গুটিবসন্তের কারণ, ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস (গুটিবসন্ত ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত) ও কাউপক্স ভাইরাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের দু’টি প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। যার একটি কঙ্গো প্রজাতি ও অপরটি মধ্য আফ্রিকান প্রজাতি হিসেবে পরিচিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সের কঙ্গো প্রজাতিতে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার ১০ শতাংশের বেশি। এই পক্সে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। তবে এই ভাইরাসের মধ্য আফ্রিকান প্রজাতিতে আক্রান্তদের মৃত্যুহার বেশ কম।

মহামারি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ সাধারণত ‘একেবারে বিরল।’ যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সতর্ক করে বলেছে, পর্তুগাল ও স্পেনের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাঙ্কিপক্স বায়ুবাহিত এবং ৯০ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি বাতাসে টিকে থাকতে পারে। এর অর্থ এই সময়কালে (৩.৭৫ দিন) এটি সংক্রামকও হতে পারে। এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ অথবা ভ্যাকসিন নেই। অতীতে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ রোধে গুটিবসন্তের টিকা ব্যবহার করা হয়েছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য ব্যবহৃত টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর। রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন, সেই স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের গুটিবসন্তের টিকা দেয়া শুরু করেছে যুক্তরাজ্য।

২৩ মে ২০২২, ০৫:০৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।