• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তেল নয়, ভবিষ্যতে যা হতে পারে জ্বালানির উৎস!

তেল নয়, ভবিষ্যতে যা হতে পারে জ্বালানির উৎস!

ছবি- সংগৃহিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পৃথিবীর দিকে দিকে যুদ্ধ আর হানাহানি। মারণাস্ত্রের হুঙ্কারে কেঁপে কেঁপে উঠছে নরম মাটির দেশগুলো। এসব যুদ্ধের পেছনে, কূটনৈতিক টানাপোড়েনের নেপথ্যে কিছু বাস্তব লুকায়িত কারণ থাকে। যা কখনোই প্রকাশ্যে আসে না। ক্ষমতাধর দেশগুলোও প্রকৃত কারণ সামনে আনে না। তবে বিবিসি বলছে, এসব যুদ্ধ ও আগ্রাসনের অন্যতম কারণ বিশ্বের মূল্যবান জ্বালানি ও দামি দামি সম্পদ দখলের পাল্লা।

বিবিসি হিন্দিতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন বিষয় উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে তেল ও গ্যাসের দখল নিয়ে লড়াই ও হানাহানি আগেও হয়েছে, এখনো চলছে।

বিবিসি বলছে, বর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি প্রান্তে চলমান অস্থিরতার নেপথ্যে রয়েছে জ¦ালানি তেল ও গ্যাসের দখল। এসব সম্পদ দখল নিতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো মরিয়া। নানা উপায়ে তারা এসব সম্পদ দখলে নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত নির্ভার রাখতে চায়। আর এর কারণেই কোথাও কোথাও যুগ যুগ ধরে চলছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।

বিশ^বাজারে বর্তমানের সবচেয়ে দামি বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকেল। কারণে অকারণে এই খনিজ ধাতববস্তুটির দাম বাড়ছে। গত মাসে মাত্র ১৮ মিনিটে প্রতি টন নিকেলের দাম ১ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। যা নতুন করে চিন্তার সৃষ্টি করে বিশ্বজুড়ে।

গত ৮ মার্চের হিসেবে, নিকেলের দাম গড়ে ২৫০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকদের বরাতে বিবিসি বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই মূল্যবান এ ধাতুটির দাম বেড়ে যায়। ফলে বিশ্বজুড়ে নিকেলের সংকট তৈরি হয়।

বলা হচ্ছে, মূলত রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণেই নিকেলের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়। এর পরই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিকেলের মতো ধাতু অত্যন্ত মূল্যবান এবং ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর নজর জ্বালানি তেল কিংবা গ্যাসের দিকে নয়, বরং নিকেলের দিকে। কাজেই নিকেল-ই যেন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু।

গত ৩১ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকায় তৈরি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি গড়ে তুলতে পারলে তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে আরও সুরক্ষিত করতে সাহায্য করবে। যেসব জিনিস ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে, সেসবের জন্য চীন ও অন্যান্য দেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরতার ইতি টানতে হবে।’

বিবিসি বলছে, জো বাইডেনের বক্তব্য মূলত জ্বালানি তেল ও গ্যাস নির্ভর প্রযুক্তি ও সক্ষমতার বিকল্প নিয়ে একটি আভাস দিয়েছেন। ভবিষ্যত পৃথিবীর যানবাহন ও যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে পারে প্রধানতম উৎস। বাইডেনের বক্তব্যের মধ্যে সেই আলামতই প্রকাশ পেয়েছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক ব্যাটারি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে লিথিয়াম, নিকেল, গ্রাফাইট, ম্যাঙ্গানিজ ও কোবাল্ট। কাজেই এসব বস্তুর চাহিদা সবদেশেই রয়েছে। এটা নিয়েই প্রতিযোগিতা শুরু হতে চলেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, তেল, গ্যাস ও কয়লা সরবরাহকারী দেশগুলো লিথিয়াম, নিকেল, গ্রাফাইট, ম্যাঙ্গানিজ ও কোবাল্ট নির্ভরতা ও প্রক্রিয়াজাতের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

তবে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক লড়াইয়ে যেসব ধাতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সেই দৌড়েও তাই সব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রই সামনের সারিতে থাকতে চাইবে। এরই মধ্যে রাশিয়া সেই ইঙ্গিত দিয়েছে। কারণ দেশটিতে রয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কোবাল্ট ও প্লাটিনাম খনি। রাশিয়া এই দুটি পদার্থ রপ্তানিকারক হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয়। তারাই আবার তৃতীয় বৃহত্তম নিকেল রপ্তানিকারক দেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ অন্যান্য দেশে আরও বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তাছাড়া এসব ধাতু খনন ও উত্তোলনের মূল কেন্দ্রও অন্য কয়েকটি দেশ।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কোবাল্ট উত্তোলন করা হয় কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে। সবচেয়ে বেশি নিকেল আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে, লিথিয়াম আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে, কপার আসে চিলি থেকে এবং সবচেয়ে বেশি রেয়ার আর্থ বা বিরল মৃত্তিকা ধাতু আসে চীন থেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত ১৭টি খনিজ পদার্থ বিশ্বের জ্বালানি খাতের নতুন যুগে পদার্পণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেজন্য যেসব দেশের এই ধাতুগুলো উত্তোলন বা প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা আছে তারা অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্যমতে, এই ১৭টি খনিজ পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট, কপার, গ্রাফাইট ও বিরল মৃত্তিকা ধাতু। ২০৪০ সালের মধ্যে এই খনিজগুলোর চাহিদা বিপুলভাবে বেড়ে যাবে। যে দেশে এসব খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে মজুদ রয়েছে এবং এগুলোর প্রক্রিয়াজাতকরণে এগিয়ে রয়েছে, সেই দেশই জ্বালানির রূপান্তর-পর্ব থেকে সবচেয়ে লাভবান হবে। এগুলো ভবিষ্যতের খনিজ।

 

০৭ মে ২০২২, ০৫:৩৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।