• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
রাজধানীতে পাঁচ প্রতারক গ্রেপ্তার

ফেসবুকে কিডনি বেচাকেনা, অতপর ভারতে পাচার...

ফেসবুকে কিডনি বেচাকেনা, অতপর ভারতে পাচার...

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কিডনী দাতা সংগ্রহ করতেন। তারপর কিডনি দাতাকে কৌশলে ভারতে পাঠানো হতো। ভারতে গিয়ে প্রতি কিডনি ৩/৪ লাখ টাকা দাম দেয়ার প্রলোভন দেখানো হতো। এরপর কিডনি নিয়ে তা কিডনি আক্রান্ত রোগীদের দেহে প্রতিস্থাপন করা হতো। বিনিময়ে কিডনি গ্রাহকের কাছ থেকে ১৮/২০ লাখ টাকা নিয়ে কিডনি দাতাকে দেয়া হতো মাত্রা দুই লাখ টাকা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচার এমনই একটি সক্রিয় দুধ্বর্ষ চক্রের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। চক্রটির অন্যতম হোতাসহ পাঁচজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচা করতো চক্রটি। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে চক্রটিকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে র‌্যাব। চক্রের সদস্যরা কিডনি ক্রেতার কাছ থেকে ১৫/২০ লাখ টাকা নিলেও বিক্রেতাকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দিতো। তারা বেছে বেছে গরিব ও অসহায় মানুষের কাছ থেকে কিডনি নিতো।

র‌্যাবের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, চক্রটির অন্যতম হোতা ও তাদের ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন মো. শাহরিয়ার ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই অভিযানে আরও চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন, শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ও তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু। এসময় ভুক্তভোগী কিডনি দাতাদের ৪টি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, ৫টি মোবাইল ফোন ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে গরিব ও অসহায় মানুষদের টার্গেট করতো চক্রটির সদস্যরা। মোটা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে কিডনি বিক্রি করার জন্য প্রলুব্ধ করত। অভাব ও অর্থের মোহে পড়ে যারা কিডনি বিক্রি করতে রাজি হতেন, তাদের পাঠানো হতো ভারতে।

জানা গেছে, কিডনি বিক্রেতাদের ভারতে পাঠানোর পাশাপাশি কিডরি রোগে আক্রান্তদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তারা প্রতিটি কিডনির জন্য ক্রেতার কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিতেন। ক্রেতা রাজি হলে তাকেও পাঠানো হতো ভারতে। উভয় পক্ষ ভারতে যাওয়ার পর সেখানে থাকা চক্রটির সদস্যরা কিডনি বিক্রেতাকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে দেশে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতেন।

এদিকে মঙ্গলবার র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত র‌্যাব-৫, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে জয়পুরহাট ও রাজধানীর নর্দ্দা এলাকা থেকে কিডনি কেনাবেচা সিন্ডিকের অন্যতম হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে কিডনিসহ মানবদেহের নানা অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে এই চক্রটি সক্রিয়ভাবে জড়িত। আরও কয়েকটি চক্রের সন্ধান আমরা পেয়েছি। যাদের কাছে মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।

এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা অন্তত ১৫/২০ জন। এরা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। যাদের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় তাকে। এরা কিডনি রোগে আক্রান্ত বিত্তশালীদের টার্গেট করে। পরে তারা হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা।

অপরদিকে চক্রটির অন্য আরেকটি গ্রুপ প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি ডোনার সংগ্রহের কাজ করে। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে গরিব অসহায় মানুষদের মোটা অর্থের লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রি করার জন্য রাজি করাতেন। পরে ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিডনির ক্রেতা-বিক্রেতার উভয়পক্ষকে ভারতে পাঠাতেন চক্রটির সদস্যরা। আর যাবতীয় প্রক্রিয়া এই চক্রটির সদস্যরাই করতেন।

জানা গেছে, এই চক্রটির মূলহোতা ও অন্যতম আসামি শাহরিয়ার ইমরান ভারতে অবস্থান করে স্থানীয় দালাল ও অনলাইনের মাধ্যমে কিডনি রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা’ ও ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামে দুটি ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন তিনি। এই দুটি পেজের মাধ্যমে তিনি অসংখ্য মানুষকে ভারতে পাচার করেছেন। তার বিরুদ্ধে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে পৃথক ভাবে ৬টির বেশি মামলা রয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

এবি/এসএন

১২ অক্টোবর ২০২১, ০৫:২২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।