• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জড়িতদের বিচার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র হত্যাকারীদের ছাড় নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র হত্যাকারীদের ছাড় নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া দেশটির রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার জনপ্রিয় নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরানোর পক্ষে মুহিব্বুল্লাহ সোচ্চার ছিলেন। আর এই কারণেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেছে এ কে আবদুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আরাকান থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে চেয়েছিলেন মুহিবুল্লাহ। এই কারণে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাকে টার্গেট করে হত্যা করেছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা রোহিঙ্গাদের স্বপ্ন শেষ করে দিতে চেয়েছে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার করা হবে উল্লেখ করে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যারাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিচার করা হবে। যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আল-ইয়াকীন নামের দুটি সন্ত্রাসী সংগঠনের দিকে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। নিহত মুহিবুল্লাহর পরিবারের দাবি, অনেক আগে থেকেই আরসা ও আল-ইয়াকিন সংগঠনের সদস্যরা মুহিবুল্লাহকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। তারাই পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে কে বা কারা জড়িত সে ব্যাপারে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, মুহিবুল্লাহর জনপ্রিয়তা সহ্য করতে করতে না পেরে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবীব উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার ভাইকে আরসা ও আল-ইয়াকীনের সন্ত্রাসীরাই হত্যা করেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পক্ষে আমার ভাই জোরালো ভূমিকা পালন করছিলেন। আর এ কারণেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।'

হাবীব উল্লাহ আরও বলেন, তবে এই হত্যাকাণ্ডে অন্য কোনো মহলের ইন্ধন আছে কিনা তা আমি নিশ্চিত নই। এটা তদন্ত সাপেক্ষ্য ব্যাপার। আমি চাই, আমার ভাই হত্যার সঠিক তদন্ত হোক, দোষীরা শাস্তি পাক।

এদিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি বিøংকেন বলেছেন, সারা বিশ্বে রোহিঙ্গা মুসলমানের মানবাধিকার রক্ষায় সাহসী এবং জোরালো যোদ্ধা ছিলেন মুহিবুল্লাহ। আমরা তার মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। যার লক্ষ্য হবে এই ঘৃণ্য অপরাধে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা।

জানা গেছে, খুন হওয়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিল এবং ২০১৯ সালে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে কথা বলতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন মুহিবুল্লাহ। সাক্ষাতকালে ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের শিকার অন্যদের সঙ্গে তিনিও কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীরা কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে প্রবেশ করে মুহিবল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে।

 

এবি/এসএন

০২ অক্টোবর ২০২১, ০৫:২৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।