ড. ইউনূসকে কেন শত্রু ভাবতেন হাসিনা!
ফাইল ছবি
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন টালমাটাল। শেখ হাসিনার বিতর্কিত সরকারের পতন হয়েছে। দেশে নতুন এক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। যার নেতৃত্বে ছিল দেশের তরুণ ছাত্র-জনতা ও স্বৈরাচার বিরোধী সাধারণ মানুষ। যদিও আপাতদৃষ্টিতে ‘জুলাই ২৪ এর বিপ্লব’ ছাত্র-জনতার বিস্ফোরণ মনে হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে, এর পেছনে কলকাটি নেড়েছেন ড. ইউনূস। তাদের এই ধারণা মূল সূত্র হলো, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ড. ইউনূসকে নিয়ে তার নানা বক্তব্য।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর আগে এসেছে, বিএনপি বা বিরোধী দলের কাছে ক্ষমতা হারানোর চেয়ে ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক প্রভাবকে বেশি ভয় পেতেন হাসিনা। আর সেই কারণেই হাসিনা সরকার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অন্তত ১৭৪টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলার মধ্যে দুটি ফৌজদারি মামলাও ছিল। বিবিসির প্রতিবেদনে এসব মামলাগুলো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে’ উল্লেখ করা হয়েছে।
ড. ইউনূস ও হাসিনা শত্রু যেভাবে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের একজন অনুসারী ছিলেন ড. ইউনূস। মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা কালে ড. ইউনূস পাকিস্তানী আগ্রাসনের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ সিটিজেন্স কমিটি (বিসিসি) প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, বিসিসি ইউনূসকে তাদের 'বাংলাদেশ নিউজ লেটার'-এর সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে।
১৯৭২ সালে সদ স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন ড. ইউনূস। শেখ মুজিব যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন ড. ইউনূসের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল। পরে শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। এমনকি ড. ইউনূস শেখ হাসিনাকে মার্কিন ফার্স্টলেডী হিলারি ক্লিনটনের সাথে ১৯৯৭ সালে ২-৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একটি ক্ষুদ্রঋণ শীর্ষ সম্মেলনের সহ-সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন।
এই সম্মেলনে শেখ হাসিনা ইউনূসের প্রশংসা করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, "অধ্যাপক ইউনূস এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের অসাধারণ কাজ করছে, গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য দরিদ্রদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে নিয়োজিত ব্যাংকগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে আশাবাদ তৈরি করেছে"।
এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টেলিফোন সেবা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ শেখ হাসিনার অফিসেই অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামীণফোন ব্যবহার করে হাসিনা প্রথম কল করেন তৎকালীন নরওয়েজীয় প্রধানমন্ত্রী থরবিয়র্ন জ্যাগল্যান্ড-কে। তার কথোপকথন শেষ হলে তিনি আরেকটি কল পান, গ্রামীণফোনের এক কর্মচারী লায়লী বেগমের কাছ থেকে।
তবে হাসিনা ও ড. ইউনূসের এই দীর্ঘ সম্পর্কের অবসান ঘটে ২০০৭ সালে, যখন ইউনূস একটি রাজনৈতিক দল নাগরিক শক্তি গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ড. ইউনূসকে নিয়ে যা করেছে হাসিনা
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার গ্রামীণ ও ইউনূসের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারণা চালায়। ব্যাপারটা এমন ছিল যে, ২০০৭ সালে ইউনূসের রাজনৈতিক দল করার প্রতিশোধ চাচ্ছিল হাসিনা। তবে ইউনূসের বিরুদ্ধে হাসিনার পদক্ষেপ কিছুটা থমকে গিয়েছিল তাঁর নোবেল পুরষ্কার অর্জন।
এমনকি নোবেল পুরষ্কার নিয়েও হাসিনা ছেড়ে কথা বলেননি, কারণ তিনি ভেবেই নিয়েছিলেন, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবেন। কিন্তু সেটি না হওয়ায় ড. ইউনূসকেই প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করেন।
সবশেষ, ১/১১ এর পর মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময় শেখ হাসিনা ড. ইউনূসকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। হাসিনা বলেন "একজন সুদখোর যিনি শুধু দারিদ্র্য দূর করতে ব্যর্থ হননি, বরং দারিদ্র্যকে লালন-পালন করেছেন"।