• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
সাভারে চীনা রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশ নিয়ে যাদের এত উৎকণ্ঠা তারা স্যাংশনের নামে চাপে রাখে কিভাবে?

বাংলাদেশ নিয়ে যাদের এত উৎকণ্ঠা তারা স্যাংশনের নামে চাপে রাখে কিভাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায়  নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, চীন বাংলাদেশের কেবল সত্যিকারের বন্ধুই নয়,একই সঙ্গে সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নীতির দিকে ইঙ্গিত করে ইয়াও ওয়েন বলেন, তারা এ দেশের মানবাধিকার, গনতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে এত উৎকণ্ঠিত অথচ আবার তারাই এ দেশকে স্যাংশন দেয়, ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়। আমাদের প্রশ্ন, বাংলাদেশের সরকার এবং এদেশের মানুষকে স্যাংশন এবং ভিসা-নিষেধাজ্ঞার নামে কেন এতবার চাপ দেয়া হয়? তবে এর ঠিক বিপরীতে চীন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। বুধবার দুপুরে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিক্ষার কীট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

ডেঙ্গু মোকাবেলায় যে সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে তার অংশ‌ হিসেবেই ১৮ হাজারেরও বেশি লোকের পরীক্ষার চাহিদা মেটাতে ৭'শ ২২ বক্স ডেঙ্গু কিট হস্তান্তর করে চীন। চীন সরকারের এই উপহার গ্রহণ করেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠাতা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মোঃ এনামুর রহমান এমপি।

অনুষ্ঠানের চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারী নিয়ে চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কৌশলগত অংশীদার হিসাবে, চীন জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা গত তিন বছরে কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলার এই সংকটময় মুহূর্তে চীন বরাবরের মতো বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ডেঙ্গু মহামারী প্রত্যক্ষ করেছি, যা স্থানীয় হাসপাতাল ব্যবস্থার উপর অসহনীয় চাপ প্রয়োগ করেছে। হাজারের বেশি পরিবারের শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাই এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আমি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার সাথে অভিনন্দন জানাই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের, যারা মাসের পর মাস ফ্রন্টলাইনে নিদ্রাহীনভাবে লড়াই করেছেন। যার ফলে অনেকের জীবন বেঁচেছে। তাদের কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করতেই হয়।

চীনের রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বাংলাদেশের একটি সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু এবং কৌশলগত অংশীদার হিসাবে চীন জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা গত তিন বছরে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।  ডেঙ্গু মোকাবেলার এই সংকটময় মুহূর্তে চীন বরাবরের মতো বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, আগস্টে জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। প্রেসিডেন্ট শি জোর দিয়েছিলেন যে চীন এবং বাংলাদেশ উভয়ই তাদের নিজস্ব উন্নয়ন এবং পুনরুজ্জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে এবং চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সাথে উন্নয়ন কৌশলগুলির সমন্বয়কে শক্তিশালী করতে, দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে একটি নতুন স্তরে ঠেলে দিতে এবং আরও ভালভাবে লাভবান হওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন, দুই দেশের জনগণ সর্বদা আমাদের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু এবং উদ্দেশ্য। প্রেসিডেন্ট শি এবং চীন সরকার বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারী নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।  তিনি ঘোষণা করেন যে চীন বাংলাদেশকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ২৫ মিলিয়ন আরএমবি (৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪০ কোটি টাকা) সহায়তা দেবে।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, আজ বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০০ সেট ডেঙ্গু কিট হস্তান্তর করছে।  যা ১৮ হাজারেরও বেশি লোকের পরীক্ষার চাহিদা মেটাবে। এটি শুধুমাত্র একটি সূচনা বিন্দু চিহ্নিত করে এবং চীন থেকে আরও বড় আকারে আরও বেশি ডেঙ্গু প্রতিরোধী সহায়তা আসবে।

যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।  বাংলাদেশী জনগণ সুস্বাস্থ্যের সাথে সমৃদ্ধ হোক।  চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, বর্তমান ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় দুই দেশ ও জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের ডেপুটি এডমিন লিজিয়ান, সেকেন্ড সেক্রেটারি মিস লাং লাং, প্রেস সেক্রেটারি জিং চ্যাং, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের নাজিম, এনাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক (মিডিয়া) জাহিদুর রহমান, সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক চন্দ্র সাহা প্রমুখ।

১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৩৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।